সংবাদ সংস্থা মুম্বই: গীতিকার, কবি এবং সমাজ-চিন্তক জাভেদ আখতার আবারও চর্চার কেন্দ্রে। মুম্বইয়ে শিবসেনা (UBT) সাংসদ সঞ্জয় রাউতের বই ‘নরকতলা স্বর্গ’ (Heaven in the Swamp)-এর আনুষ্ঠানিক প্রকাশ অনুষ্ঠানে গিয়ে একঝাঁক রাজনৈতিক নেতার সামনে দাঁড়িয়ে তিনি যেভাবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করলেন—তা নিঃসন্দেহে সাহসিকতার ছাপ রেখে গেল।
জাভেদ আখতার জানালেন, তিনি দু'পক্ষ থেকেই সমানভাবে ট্রোল হন— একদল বলেন ‘জাহান্নামে যাও’, আরেকদল বলেন ‘তুমি পাকিস্তানে চলে যাও’। আর সেখানেই তাঁর তির্যক মন্তব্য, “যদি জাহান্নাম আর পাকিস্তানের মধ্যে কোনও একটা বেছে নিতে হয়, আমি জাহান্নামই বেছে নেব!”
“দুই দিকেই চরমপন্থীরা আছে”— আখতারের স্পষ্ট স্বীকারোক্তি। মঞ্চে দাঁড়িয়ে জাভেদ আখতার বলেন, “আমি কোনও এক পক্ষের লোক নই। দুই দিক থেকেই গাল খাই। কেউ আমাকে ‘কাফির’ বলছে, কেউ বলছে ‘জিহাদি’। কেউ চায় আমি জাহান্নামে যাই, কেউ পাঠাতে চায় পাকিস্তানে। তবে আমি কৃতজ্ঞ— কারণ অনেক মানুষও আছেন যারা আমাকে ভালবাসেন, সমর্থন করেন। কিন্তু এই চরমপন্থীদের চাপে আমি চুপ করে যাব? সে প্রশ্নই নেই।” তিনি আরও যোগ করেন— “একদিন যদি দেখেন কেউই আমাকে গাল দিচ্ছে না, বুঝে নেব কিছু একটা ভুল করছি।”
পাকিস্তান নিয়ে আরও কড়া বার্তা দিলেন জাভেদ আখতার। এই একই সপ্তাহে, এক সরকারি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে জাভেদ আখতার কেন্দ্র সরকারকে পাকিস্তান-বিরোধী কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানান। তাঁর কথায়—“পহেলগাঁওয়ের হামলার মতো ঘটনা বারবার ঘটছে। এবার শুধু সীমান্তে বাজি ফাটিয়ে চলবে না, কড়া পদক্ষেপ নিতে হবে। পাকিস্তানের সেনাপ্রধান এমন ভাষায় কথা বলেন, যেন তাঁদের দেশে থাকা হিন্দুদের কোনও মর্যাদাই নেই! এই ঔদ্ধত্যের জবাব দিতে হবে— যেন জীবনে ভুলেও ভুলটা না করে।” তিনি আরও বলেন—“আমি রাজনীতি বিশেষ বুঝি না। কিন্তু এটুকু বুঝি, এখন সময় ‘আর বা পার’-এর। এখন আর নরমপন্থা চলবে না।”
গত ২২ এপ্রিল জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় প্রাণ যায় ২৬ জনের। এরপর ৭ মে ভারত চালায় অপারেশন সিঁদুর— যেখানে পাকিস্তান ও পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে গোপন সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলিকে টার্গেট করা হয়। এই অভিযানে নিহত হয় ১০০-রও বেশি জঙ্গি, যারা জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তইবা, এবং হিজবুল মুজাহিদিনের মতো সংগঠনের সদস্য।
জাভেদ আখতারের কথায় স্পষ্ট বার্তা— চুপ করে থাকা নয়, স্পষ্ট করে সত্য বলাই তাঁর পথ। ‘পাকিস্তান না জাহান্নাম?’ প্রশ্নটা ট্রোলারদের ছিল, কিন্তু জবাবটা ছুড়ে দিয়ে তিনি বুঝিয়ে দিলেন— আত্মসম্মান বাঁচিয়ে তিরস্কার বরণ করাই অনেক শ্রেয়, যদি বিকল্প হয় আত্মবিক্রয়।
