মুম্বইয়ে শ্রুতি হাসনের বাড়িতে রান্নার ভ্লগ শুট করতে গিয়েছিলেন ফারাহ খান। রান্নাঘরের আড্ডা হঠাৎই ঘুরে গেল পুরনো দিনের এক মজাদার স্মৃতিতে। পরিচালক-কোরিওগ্রাফার ফারাহ ফাঁস করলেন এক গোপন কথা—শ্রুতির বাবা, কিংবদন্তি অভিনেতা কমল হাসনকে তিনি একবার শাহরুখ খানের একটি ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আর যে সে চরিত্রে নয়, শাহরুখের বিপরীতে! আর সেই প্রস্তাবের উত্তর কী ছিল ? একেবারে ‘কমলীয়’ ভঙ্গিতে সটান না!

 

২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া পরিচালক হিসেবে ফারাহর ডেবিউ ছবি 'ম্যায় হুঁ না'—যেখানে শাহরুখের পাশাপাশি ছিলেন জায়েদ খান, সুস্মিতা সেন, অমৃতা রাও এবং সুনীল শেট্টি। ছবির মূল ভিলেন ‘রঘুবন দত্ত’-র চরিত্রটির জন্য সুনীল শেট্টির আগে প্রথমেই কমল হাসানকে ভেবেছিলেন ফারাহ। শ্রুতিকে তিনি বললেন, “কমল স্যার ছিলেন আমার প্রথম পছন্দ। আমি চেন্নাই গিয়ে ওঁর অফিসে ছবির গল্প, চিত্রনাট্য পড়ে শুনিয়েছিলাম। শোনাটোনার পর উনি খুব ভদ্রভাবে বললেন—‘ডাক অফ!’” অর্থাৎ ফোটো এখন থেকে! 

 

ঠিক কী কারণে কমল হাসান ম্যায় হুঁ না ছবির প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, তা ফারাহ খোলসা করেননি। শেষ পর্যন্ত ছবির ওই খলনায়কের  চরিত্রে অভিনয় করেন সুনীল শেট্টি। ২৫ কোটি টাকার বাজেটে তৈরি ম্যায় হুঁ না সারা বিশ্বে আয় করে ৭০.৪০ কোটি টাকা। সমালোচকরাও যথেষ্ট প্রশংসা করেছিলেন এ ছবির। শাহরুখ এখানে মেজর রাম প্রসাদ শর্মা—এক সেনা অফিসার, যিনি কলেজে গিয়ে গোপনে জেনারেলের মেয়েকে পাহারা দেন, হারিয়ে যাওয়া সৎভাইকে খোঁজেন, আর একই সঙ্গে ব্যর্থ করতে চান এক জঙ্গির ‘প্রজেক্ট মিলাপ’ নস্যাৎ করার চক্রান্ত। ‘প্রজেক্ট মিলাপ’ ছিল ভারত-পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নত করতে দুই দেশের এক যৌথ প্রচেষ্টা। গান, অ্যাকশন আর ক্যাম্পাস-রোমান্স—সব মিলে এ ছবি আজও দর্শকের কাছে দারুণ সমাদৃত। 

এদিকে, কমল হাসনকে সম্প্রতি দেখা গিয়েছে মণি রত্নমের সঙ্গে ৩৭ বছর পর ‘ঠাগ লাইফ’-এ। কিন্তু ১৯৮৭ সালের ক্লাসিক নায়কান-এর জাদু ফিরিয়ে আনতে পারেনি ছবি; বিশ্বজুড়ে আয় মাত্র ৯৭.২৫ কোটি টাকা। এবার তিনি ফিরছেন এস শংকরের ইন্ডিয়ান ৩-এ, যার শুটিং চলছে, তবে মুক্তির তারিখ এখনও ঘোষিত হয়নি।


অন্যদিকে, ফের জোরদার বিতর্কে জড়িয়েছেন কমল হাসন।সনাতন ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করে তীব্র বিতর্কের মুখে এই অভিনেতা-রাজনীতিবিদ। পদ্মশিবির থেকে বয়কটের ডাক তো বটেই, এবার তাঁর জীবনের দিকেও ছায়া ফেলল প্রাণনাশের হুমকির কালো মেঘ। তামিল ছোটপর্দার অভিনেতা রবিচন্দ্রন খোলাখুলিভাবেই জানিয়েছেন, সনাতনবিরোধী মন্তব্যের জন্য তিনি হাসনকে খুন করে ফেলবেন।

 

ঘটনার সূত্রপাত সূরিয়ার এনজিও ‘আগরম ফাউন্ডেশন’-এর ১৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে। সেখানে হাসন কেন্দ্র সরকারের ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (NEET)-এর কড়া সমালোচনা করে বলেন, এই পরীক্ষা অসংখ্য এমবিবিএস প্রার্থীর স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে এবং এটি “সনাতন ধর্মেরই এক ক্ষতিকর ফলাফল”। তাঁর এই মন্তব্যের পর থেকেই শুরু হয় প্রবল প্রতিক্রিয়া, বয়কটের ডাক এবং অবশেষে খুনের হুমকি।

 

একটি ইউটিউব সাক্ষাৎকারে রবিচন্দ্রন শুধু হাসনকে ‘সরলমনা রাজনীতিক’ বলেই থামেননি, প্রকাশ্যে বলেন— “আমি ওর গলা কেটে দেব”। এই চরম হুমকি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে অভিনেতার অনুরাগীদের মধ্যে।

 

রাজ্যসভার সাংসদ ও ‘মাক্কাল নিধি মাইয়াম’-এর প্রতিষ্ঠাতা হাসন সেই অনুষ্ঠানে কমল হাসন বলেন,“এই যুদ্ধে কেবল শিক্ষা-ই দেশকে বদলে দিতে পারে। একে একমাত্র অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করুন—যা স্বৈরতন্ত্র ও সনাতনের শৃঙ্খল ভাঙতে সক্ষম। অন্য কোনও অস্ত্র হাতে তুলবেন না। তাতে আপনি জিতবেন না, সংখ্যাগুরু তন্ত্রে পরাস্ত হবেন! অজ্ঞ সংখ্যাগুরু আপনাকে হারিয়ে দেবে।” বিজেপি-র প্রবীণ নেতা তামিলিসাই সৌন্দররাজনও হাসানকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, তিনি হিন্দু বিশ্বাসকে অপমান করেছেন এবং তাঁর মন্তব্য নিন্দনীয়।