সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন (CBFC)-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান পহলাজ নিহালানি আবারও শিরোনামে। ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত তাঁর বিতর্কিত মেয়াদকালে বারবার তিনি চরম সংঘাতে জড়িয়েছিলেন ছবি নির্মাতাদের সঙ্গে। আর সেই তালিকায় সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা— অনুরাগ কাশ্যপের ‘উড়তা পাঞ্জাব’ সেন্সর যুদ্ধ। সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে সেই বিস্ফোরক প্রসঙ্গ ফের টেনে আনলেন নিহালানি।
সম্প্রতি, দেওয়া সাক্ষাৎকারে নিহালানি জানান, ছবির সহ-প্রযোজক একতা কাপুর ও তাঁর মা শোভা কাপুর কাট মেনে নিতে রাজি ছিলেন। কিন্তু অনুরাগ কাশ্যপ আপত্তি জানান। তাঁর দাবি,“ওরা সেন্সরের কাট মানতে চলেছিল। কিন্তু অনুরাগ চাইছিল ছবিটাকে ঘিরে বাড়তি উত্তেজনা, প্রচার তৈরি করতে। জিতেন্দ্রজি (একতার বাবা) আর কোম্পানির সিইও অফিসে এসে সার্টিফিকেট নিতে পর্যন্ত চেয়েছিলেন। আমরা ভাষা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় জায়গায় কেটে দিয়েছি, গালিগালাজ বাদ দিয়েছি। কিন্তু একটি ফ্রেমও ছেঁটে দিইনি।”
নিহালানি আরও অভিযোগ করেন, অনুরাগ কাশ্যপ ইচ্ছে করেই বিতর্ক তৈরি করতেন। তাঁর কথায়,“ছ’দিন বাকি ছিল ওই ছবির মুক্তির। তখনই ও বুঝল ছবির হাওয়া নেই। তাই ইচ্ছে করে ঝড় তুলল। অনুরাগ বারবারই এমনটা করত। এমনকি ও নিজেই ভিডিও বা ফুটেজ লিক করত, এটাই ছিল ওর ব্যবসার কৌশল।”
শুধু অনুরাগ নয়, প্রসূন জোশির দিকেও তোপ দেগেছেন নিহালানি। কেবল অনুরাগ নয়, সেন্সর বোর্ডের বর্তমান চেয়ারম্যান প্রসূন জোশির বিরুদ্ধেও সরাসরি আক্রমণ চালিয়েছেন নিহালানি। তিনি বলেন, “এখন সেন্সর বোর্ডে অব্যবস্থা চলছে। প্রসূন জোশি তো অফিসেই যান না। টানা সাত বছর ধরে চেয়ারম্যান হয়েও তিনি কার্যত অনুপস্থিত। সবকিছু চালাচ্ছেন সিইও। ফলে সেন্সর বোর্ডে কার্যত নিয়মশৃঙ্খলা নেই।”
২০১৬ সালে সেন্সর বোর্ড “উড়তা পাঞ্জাব”-এর জন্য ১৩ দফায় প্রায় ৯৪টি কাটের দাবি তোলে এবং ছবিকে ‘এ’ সার্টিফিকেট দেয়। কিন্তু প্রযোজকেরা আদালতে গেলে বোম্বে হাইকোর্ট সেন্সরের সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়ে মাত্র একটি কাটের শর্তে ছবির মুক্তির অনুমতি দেয়।
এরপরই চলচ্চিত্রমহলে শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। অমিতাভ বচ্চন ও আমির খান প্রকাশ্যে নির্মাতাদের সমর্থন করেন। প্রযোজকেরা অভিযোগ করেন, নিহালানি ইচ্ছে করেই কাটের চিঠি দিতে দেরি করেছেন। প্রযোজক মুকেশ ভাট সরাসরি বলেছিলেন,“ওঁর পদক্ষেপ সহ্য করার মতো নয়। ওঁকে আমরা চাই না। উনি মিথ্যা বলেন, দেরি করেন, ভয় দেখান। এটা বিদ্বেষপূর্ণ পদক্ষেপ।”
নিহালানির এই নতুন মন্তব্যে ফের পুরনো ক্ষতের জ্বালা কিন্তু স্পষ্ট। নিহালানির নতুন মন্তব্যে ফের আলোচনায় এসেছে পুরনো বিতর্ক। প্রশ্ন উঠছে— তিনি কি অনুরাগ কাশ্যপের বিরুদ্ধে পুরনো ক্ষোভ ঝেড়ে নতুন করে আগুন জ্বালাতে চাইছেন? নাকি এই মন্তব্যের জেরে ফের উত্তাল হবে বলিউডের সেন্সর রাজনীতি?
অন্যদিকে, নয় দশকের অভিনেত্রী নিক্কি আনেজা ওয়ালিয়াও পহলাজ নিহালানির বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন। চেয়েছিলেন বিমানচালক হতে কিন্তু পাকেচক্রে বলিউডের নায়িকা হয়ে গিয়েছিলেন নিক্কি আনেজা ওয়ালিয়া। সম্প্রতি, এক সাক্ষাৎকারে অভিনেত্রী জানান 'মিঃ আজাদ' ছবির শুটিংয়ের সময় প্রযোজক ও সেন্সর বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারপার্সন পহলাজ নিহালনির কারণে অস্বস্তিকর পরিবেশের সম্মুখীন হয়েছিলেন তিনি। মার্কিন মুলুকের টেক্সাসে পাইলট প্রশিক্ষণ কোর্স করছিলেন নিক্কি। কিন্তু নারায়ণ আনেজা যখন সেই প্রশিক্ষণ কোর্সের ফি দিতে অস্বীকার করেন তখন উপায় না পেয়ে মডেলিংকে কেরিয়ার হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন নিক্কি, তুতো ভাই তথা অভিনেতা পরমীত সেথির পরামর্শে। এরপরেই তিনি চোখে পড়েন পহলাজ নিহালনির। এরপরেই আসে 'মিঃ আজাদ' ছবির প্রস্তাব। নিক্কির দাবি, ছবিতে মুখ্যভূমিকায় অনিল কাপুর ছিলেন বলেই তিনি রাজি হয়েছিলেন তাতে অভিনয় করতে। সেই সময়ে তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৯।
নিক্কি জানালেন, সেটের মধ্যেই তাঁর শরীরকে কেন্দ্র করে নানান আপত্তিকর মন্তব্য আসত। "যা ব্যবহার করা হত আমার সঙ্গে, আজও ভুলিনি। সেই সময়ে বলিউডে কাস্টিং কাউচের রমরমা। আমাকে 'কম্প্রোমাইজ' করার পরামর্শও দেওয়া হত। ছবির পরিবেশকদের সঙ্গে একান্তে খাবার খেতেও বলা হয়েছিল আমাদের। আর আমার সেসবে ঘোর আপত্তি ছিল। ছবির প্রযোজক পহলাজ নিহালনিকে জিজ্ঞেসও করেছিলাম। আমাকে উনি পাল্টা বলেছিলেন, 'ছবিটা বিক্রি করতে হবে তো নাকি? তাঁদের মনোভাব ছিল, আমাকে সেসব করতে হবে মানে করতে হবেই!" একথা শোনার পর নিক্কি প্রশ্ন তুলেছেন তৎকালীন সময়ে অনিল কাপুরের মতো এত বড় একজন তারকা ছবিতে থাকা সত্বেও কেন ছবির বিক্রির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে?কথাশেষে নিক্কি জানিয়েছেন, এরপর 'ইয়েস বস' ছবিতে শাহরুখ খানের সঙ্গে কাজ করার অনবদ্য অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁর। এটি একটি প্রধান কারণ যে কারণে ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে চলে যাননি নিক্কি।
