প্রয়াত হলেন অমিতাভ বচ্চন অভিনীত কালজয়ী ছবি ডন-এর পরিচালক চন্দ্র বরোট। বয়স হয়েছিল ৮৬। বলিউডের কালজয়ী থ্রিলার ‘ডন’—যা আজ এক সফল ফ্র্যাঞ্চাইজি—সেই সিনেমার মূল রূপকার চন্দ্র বরোট আর নেই। মুম্বইয়ের বান্দ্রার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন এই বর্ষীয়ান পরিচালক। চন্দ্র বরোটের স্ত্রী, দীপা বরোট, এই খবর নিশ্চিত করে জানান—“গত সাত বছর ধরে উনি পালমোনারি ফাইব্রোসিসে ভুগছিলেন। চিকিৎসা চলছিল গুরু নানক হাসপাতালের ডঃ মনীশ শেঠির অধীনে। এর আগে জসলোক হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন।”
চন্দ্র বরোটের প্রয়াণে প্রথম শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন বলিউড পরিচালক ও অভিনেতা ফারহান আখতার, যিনি নিজেই ‘ডন’ ফ্র্যাঞ্চাইজির উত্তরসূরি। ইনস্টাগ্রামে চন্দ্র বরোট ও অমিতাভ বচ্চনের পুরনো ছবি শেয়ার করে ফারহান লেখেন—“ আসল ডন ছবির পরিচালক আমাদের মধ্যে আর নেই। শুনে খুবই খারাপ লাগছে। শান্তিতে ঘুমোন চন্দ্র বরোটজি। ওঁর পরিবারকে জানাই আমার সহমর্মিতা।”
?utm_source=ig_embed&utm_campaign=loading" target="_blank" rel="noopener">A post shared by Farhan Akhtar (@faroutakhtar)
চন্দ্র বরোট: ‘ডন’ শুধু সিনেমা নয়, এক বন্ধুত্বের গল্পও। আজ যাকে ব্লকবাস্টার বলে প্রশংসা করা হয়, সেই ১৯৭৮ সালের ‘ডন’-এর চিত্রনাট্য প্রথমে বলিউডের একাধিক তারকা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কিন্তু বন্ধুর ঋণের বোঝা মেটাতে চন্দ্র বরোট, অমিতাভ বচ্চন ও জিনাত আমান মিলে শুরু করেছিলেন এই প্রকল্প।চন্দ্র বরোট ছিলেন মনোজ কুমারের সহকারী পরিচালক। সেখানেই ‘রুটি কাপড়া আর মকান’-এর শুটিংয়ে আলাপ হয় অমিতাভ ও জিনাতের সঙ্গে। এই ছবির সিনেমাটোগ্রাফার নারিমান ইরানি ওরফে ‘বাওয়া’-র সঙ্গেও গড়ে ওঠে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। সেই বন্ধুত্ব থেকেই জন্ম নেয় ‘ডন’—একটি আইকনিক হিন্দি সিনেমা।
ডন’-এ অমিতাভ বচ্চনের দুটো রূপ—একদিকে মাফিয়া, আর একদিকে সাধারণ গ্রামবাসী। সঙ্গী সেই সময়ের দুর্দান্ত সংগীত, বিদ্যুৎ-ঝলসানো সংলাপ ও অ্যাকশন। ছবিটি মুক্তির পর রাতারাতি কাল্ট ক্লাসিক হয়ে ওঠে। ২০০৬ সালে ফারহান আখতার প্রথম রিমেক করেন ‘ডন’, যেখানে অ্যান্টি-হিরোর ভূমিকায় ছিলেন শাহরুখ খান। সঙ্গী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, অর্জুন রামপল, ইশা কোপ্পিকার প্রমুখ। ২০১১-তে আসে ‘ডন ২: দ্য কিং ইজ ব্যাক’, যেখানে আবার ফিরলেন শাহরুখ-প্রিয়াঙ্কা জুটি। এবং বর্তমানে এই ছবির সিরিজের তৃতীয় কিস্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন ফারহান, যেখানে নতুন ‘ডন’ হিসেবে দেখা যাবে রণবীর সিং-কে।
চন্দ্র বরোট আজ নেই। কিন্তু তিনি রেখে গেলেন এমন একটি উত্তরাধিকার, যা আজও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ছুঁয়ে যাচ্ছে। ‘ডন’ শুধু একটি ছবি নয়, এক রোমাঞ্চকর ইতিহাস—আর সেই ইতিহাসের প্রথম অধ্যায়টি লিখেছিলেন তিনিই।
প্রসঙ্গত, '১২০ বাহাদুর' ছবিতে মুখ্যচরিত্রে দেখা যাবে ফারহান আখতার-কে। কিছুদিন আগের সে ছবিতে নিজের লুকও ফাঁস করেছেন তিনি। '১২০ বাহাদুর' ছবির নেপথ্যে রয়েছে ১৯৬২ সালের ভারত-চিন যুদ্ধ। ১৯৬২ সালে রেজাংলা উপত্যকার যুদ্ধ এই ছবির প্রেক্ষাপট। কীভাবে ৩০০০ চীনা সৈন্যকে এই রেজাংলা উপত্যকায় বীরবিক্রমে রুখে দিতে পেরেছিল মাত্র ১২০জন ভারতীয় জওয়ান, সেই বীরগাথা পর্দায় বলবে এই ছবি। মেজর শয়তান সিংহ ভাটি-র ভূমিকায় রয়েছেন ফারহান।
পোস্টারে পুরোদস্তুর এক ভারতীয় জওয়ানের লুকে দেখা যাচ্ছে ফারহানকে। ছোট করে ছাঁটা চুল, ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত মুখ। চোখ থেকে ফেটে বেরোচ্ছে তীব্র রাগ। পিছু না হঠে যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুদের উদ্দেশে গুলিবর্ষণ করে চলেছেন ফারহান। ২০২৩-এর সেপ্টেম্বরে ইনস্টাগ্রামে এই ছবির ঘোষণা করেছিলেন ফারহান। ঘোষণার সঙ্গে একটি মোশন পোস্টারও শেয়ার করেছিলেন তিনি। সেই পোস্টারে দেখা যাচ্ছে, হিমালয়ের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের একটি পর্বতচূড়ায় ভারতীয় সেনার যুদ্ধপোশাকে সশস্ত্র অবস্থায় একা দাঁড়িয়ে রয়েছেন ফারহান। চারপাশে যুদ্ধের আবহ। সুদূরে বরফের উপর আছড়ে পড়ছে বোমা। আরও জানিয়েছিলেন, ‘১২০ বাহাদুর’ ছবিতে 'মেজর শয়তান সিংহ ভাটি'র চরিত্রে দেখা যাবে তাঁকে।