দুই বাংলার অন্যতম চর্চিত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। নিজের অভিনীত ছবি সম্পর্কে সমাজমাধ্যমে খুব বেশি কথা না বললেও প্রায় সময়েই তিনি নিজের পরিবার ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নানান পোস্ট করেন। কখনও তা থাকে নিজের মা-বাবার বিষয়ে, কখনও সেই পোস্টের বিষয় থাকে তাঁর স্ত্রী অথবা তাঁদের একমাত্র সন্তান শুদ্ধ। এদিন শুদ্ধকে নিয়ে একটি মন ভাল করা পোস্ট করেছেন চঞ্চল। যাতে ছেলের প্রতি অপত্য স্নেহর পাশাপাশি ফুটে উঠেছে তাঁর সহজ যাপন ও জীবন-দর্শনও।  ছেলে শুদ্ধ সম্পর্কে এক সাক্ষাৎকারে চঞ্চল বলেছিলেন, “ও প্রচুর গান শোনে, গান ভালবাসে। অভিনয়েও তার অনেক আগ্রহ।”  

এই পোস্টে দেখা যাচ্ছে একটি ব্লেজার পরে দাঁড়িয়ে রয়েছে চঞ্চল-পুত্র। তার গায়ের ব্লেজারটি কিন্তু  পুরনো। কিন্তু তার ভাঁজে লুকিয়ে আছে এক প্রজন্মের গল্প-ভালবাসা, স্মৃতি আর সময়ের টানাপোড়েনের গল্প। অভিনেতা চঞ্চল রায়চৌধুরী সেই ব্লেজার নিয়েই এক আবেগঘন অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন, যা হাজারো বাবার মনে এক অচেনা নরম স্পর্শ রেখে গেছে।

তিনি লিখেছেন, “যতদূর মনে পড়ে, গত শীতেও এই ব্লেজারটার মালিকানা ছিল আমারই। ভাবছেন নিজের টাকায় বানিয়েছিলাম? না! আমার খালাতো ভাই প্রবীর একদিন নিজের গা থেকে খুলে বলেছিল, ‘দাদা, তোকে খুব মানিয়েছে, এটা তুই নিয়ে যা।’ সেই মুহূর্তে আমি মুখে কিছু বলিনি, কিন্তু ভীষণ খুশি হয়েছিলাম। তারপর থেকে এটাই আমার প্রিয় ব্লেজার।”

বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও সেই পোশাকটি তাঁর জীবনের এক আবেগ হয়ে ছিল। কিন্তু এ বছর সেই প্রিয় ব্লেজারের মালিকানা বদলে যাচ্ছে। কারণ তাঁর ছেলে শুদ্ধ এখন বড় হয়েছে, আর বাবার প্রতিটি পোশাকই আজ তার গায়ে একদম খাপে খাপ বসে যায়।

তিনি লিখেছেন, “মনে হয় এটাই প্রকৃতির নিয়ম। একদিন বাবা-মায়ের সমস্ত কিছুই সন্তানের হাতে চলে যায়। আর সেই দখলেই থাকে আমাদের আনন্দ। তবে শুধু পোশাক নয়, আমি চাই আমার ছেলে আমার মূল্যবোধ, পরিশ্রম আর আদর্শটাও উত্তরাধিকার হিসেবে গ্রহণ করুক।”

এই সাধারণ অথচ গভীর ভাবনাটা যেন প্রতিটি পরিবারের চেনা বাস্তব। একসময় যে বাবা সন্তানের জন্য জামা-কাপড় কেনেন, তিনিই একদিন দেখেন, তাঁর পুরনো শার্ট, ব্লেজার, বা ঘড়ি সন্তানের শরীরে নতুন করে প্রাণ পাচ্ছে।

লেখাটির শেষভাগে তিনি ছেলেকে উদ্দেশ করে লেখেন, “অতি বিলাসিতা আমার পছন্দ নয়, তাই আমার পোশাক আমরা বাপ-ছেলে মিলে ভাগাভাগি করেই পরি। আমার প্রতিটি পোশাকে মিশে আছে আমার পরিশ্রমের ঘ্রাণ, সাধনার গন্ধ। তাকে কখনও অবজ্ঞা করিস না বাপ।”

একটি ব্লেজারকে ঘিরে এই গল্পটি আসলে এক নিঃশব্দ উত্তরাধিকার যেখানে ভালবাসা, মূল্যবোধ আর শ্রদ্ধার শিক্ষা অদৃশ্য সুতোর মতো বয়ে চলে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।

 

 

 


চঞ্চলের ফেসবুক পোস্টটি নীচে দেওয়া হল। বানান অপরিবর্তিত রেখেই। 

“ যতদুর মনে পড়ে,গত শীতেও এই ব্লেজার খানার মালিকানা আমার হাতেই ছিলো!!
ভাবছেন আমি নিজের টাকায় এটা বানিয়েছিলাম???
জ্বী না….বেশ কয়েক বছর আগে আমার খালাতো ভাই প্রবীর নিজের শরীর থেকে খুলে আমাকে পরিয়ে দিয়ে বলেছিল….”দাদা,তোকে খুব সুন্দর মানিয়েছে..এটা তুই নিয়ে যা।”
আমি মুখে না বললেও,মনে মনে খুশী হয়েই গ্রহন  করেছিলাম জিনিসটা!!!!
আমার খুব পছন্দের ব্লেজার ছিলো এটা।
এরকম আরো কিছু কালেকশন আমার কাছে আছে….কোনটা নিজের টাকায় কেনা,আবার কোনটা প্রীতি উপহার!!!
কিন্তু উৎকন্ঠার ব্যা পারটা হলো,এবার শীতে আমার এসব প্রিয় এবং পছন্দের দামী জিনিসগুলোর মালিকানা বোধহয় আর আমার থাকবে না!!!
ছেলেটা বড় হতে হতে আমার সমস্ত পোশাকই এখন তার শরীরে খাপে খাপ সেট হয়ে যাচ্ছে…..
এটাই মনে হয় প্রকৃতির নিয়ম!!!
একটা সময় বাবা মায়ের সমস্ত কিছুই সন্তানের দখলে চলে যায়॥
এ আনন্দ যেন বাবা মায়ের জন্যি অকল্পনীয় শান্তি।
শুধুই কি সন্তানের হাতে বাবা মায়ের বৈষয়িক অর্জন গুলো হাত বদল হলেই বাবা মা খুশী হন,নাকি সন্তানের প্রতি আরেকটু বেশী কিছু প্রত্যাকশা করে,স্বপ্ন দেখে???
সবাই চায় বাবা মায়ের আদর্শ,যোগ্যঅতা বা সকল ভালো অর্জন গুলোও যেন সন্তানেরা ভেতরে ধারণ করে,আগলে রাখে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য!!!
হে সন্তানেরা….
শুধু মাত্র সহায় সম্পত্তি পোশাক আশাক নয়……
বাবা মায়ের সকল ভালো অর্জন গুলোও নিজের জীবনে বয়ে নিয়ে সফল হও।
সকল সন্তানের জন্যল আশীর্বাদ ও শুভকামনা….
বড় হও,সফল হও॥
আর আমার ছেলে শুদ্ধ’র কাছে অনুরোধ,অতি বিলাসিতা আমার কখনই পছন্দ নয়,তাই আমার সমস্ত পোশাক…বাপ বেটা দুজনই ভাগাভাগি করেই পরি চল!!!
আমার প্রতিটি পোশাকে আমার শরীরের যে পরিশ্রম আর সাধনার ঘাম গন্ধ লেগে আছে,সেটাকে কখনো অবজ্ঞা করিস না বাপ!!!!
অনেক বড় মানুষ হ……..” 

 

 


প্রসঙ্গত, বাবার পথেই হাঁটবে ছেলে। ইদের মরসুমে মুক্তি পাচ্ছে বাংলাদেশি পরিচালক মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী পরিচালিত ছবি ‘মনোগামী’ (‘দ্য লাস্ট ডিফেন্ডার্স অফ মনোগামী’)। ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করছেন চঞ্চল চৌধুরী। তবে চমক রয়েছে। এই ছবির মাধ্যমেই সিনেমা জগতে অভিষেক হতে চলেছে চঞ্চলের কিশোর পুত্র শুদ্ধের।এই ছবিতে চঞ্চলের ছেলের চরিত্রেই অভিনয় করেছে শুদ্ধ। ছবির অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন আমিনো হোসেন এবং নবাগতা অভিনেত্রী তথা সঙ্গীতশিল্পী জেফার রহমান।