দুর্গাপুজোর ঢাক বেজে উঠেছে। চন্দন-ধূপ-আলোর আবেশে বাঙালির হৃদয়ে শুরু হয়ে গেছে দেবীপক্ষ। আর এই শুভ সূচনার দিনে টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হচ্ছে সেই বহুল প্রতীক্ষিত অনুষ্ঠান— মহালয়া।
মহালয়া মানেই দুর্গাপুজোর আগমনীর সুর বেজে ওঠে। চলতি বছর ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়া। মহালয়ার পুণ্যলগ্ন মানেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে মহিষাসুরমর্দিনীর অমৃত গাঁথা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালিদের কাছে বদলেছে মহালয়ার ছবি। এখন টেলিভিশনের পর্দায় দর্শক দেখেন মহিষাসুর বধ। বাংলা টেলিভিশনের মহালয়ার প্রতি বরাবরই আগ্রহ দেখা যায় দর্শকের। কোন অভিনেত্রীদের দূর্গার কোন রূপে দেখা যাবে তা নিয়ে কৌতূহল থাকে তুঙ্গে।
প্রতি বছর বিভিন্ন চ্যানেলে দেবী রূপে ধরা দেন দর্শকের পছন্দের নায়িকারা। এবছর সান বাংলার তরফে থাকছে বিশেষ নিবেদন— ‘অকাল বোধন’, যেখানে পায়েল দে বহু বছর পর আবার ফিরছেন 'মহিষাসুরমর্দিনী' রূপে। কিন্তু 'মহাদেব'-এর চরিত্রে থাকছেন কোন অভিনেতা? জানা যাচ্ছে, এই চরিত্রের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে অভিনেতা সম্রাট মুখোপাধ্যায়কে। তাঁকে এই মুহূর্তে দর্শক দেখছেন সান বাংলার ধারাবাহিক 'আকাশ কুসুম ২'-এ।

এই নিয়ে পরপর ১০ বছর মহালয়ার সঙ্গে যুক্ত সম্রাট। আজকাল ডট ইন-কে তিনি বলেন, "এক টানা দশ বছর ধরে বিভিন্ন চ্যানেলের মহালয়ার সঙ্গে যুক্ত আছি। কোনও বছর মহাদেব, কোনও বছর আবার মহিষাসুর! মাঝে শুধু ২০২০ সালে করোনা অতিমারীর জন্য কাজ করিনি। তাছাড়া আমি আধ্যাত্মিক মানুষ, দেবতাদের চরিত্রে অভিনয় করাটা ভাগ্যের ব্যাপার বলে মনে করি।"
অন্যদিকে, ছোটপর্দার অত্যন্ত পরিচিত ও জনপ্রিয় মুখ পায়েল দে, যাঁকে সম্প্রতি 'কোন সে আলোর স্বপ্ন নিয়ে' ধারাবাহিকে 'আলো'-র চরিত্রে দর্শক বেশ ভালবাসছেন, তিনি আবারও মা দুর্গার রূপে ধরা দেবেন এই মহালয়ায়। পায়েল বলছেন,“এটা যেন এক স্বপ্নপূরণের অনুভূতি। ২০১৭ সালে শেষ মহিষাসুরমর্দিনী করেছিলাম। এত বছর পর আবার সেই সুযোগ এনে দেওয়ার জন্য সান বাংলাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।”
পায়েল আরও জানান, বর্তমানে মহড়া চলছে জোরকদমে। অভিনয়, নাচ ও পৌরাণিক আবহের সঙ্গে আধুনিক প্রেজেন্টেশনের এক অসাধারণ সংমিশ্রণ তৈরি হয়েছে ‘অকাল বোধন’-এ।
আরও পড়ুন: রাজা-মধুবনীর ঘরে আসছে দ্বিতীয় সন্তান! স্ফীতোদরের ছবি সামনে এনে কোন ইঙ্গিত দিলেন তারকা জুটি?
অকাল বোধনের কাহিনি কী?
‘অকাল বোধন’-এর গল্প উঠে এসেছে ত্রেতা যুগ থেকে। রামচন্দ্র যখন রাবণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছেন, তখন রাবণ প্রায় জয়ী হতে চলেছে দেবীর আশীর্বাদে। সেই সময় ব্রহ্মার উপদেশে রামচন্দ্র অকাল বোধন করেন— দেবী দুর্গার অকাল সময়ে আরাধনা। কিন্তু দেবী ভক্তের ভক্তি পরীক্ষা করতে পুজোর এক পদ্ম ফুল লুকিয়ে ফেলেন। রামচন্দ্র তখন নিজের চোখ তির দিয়ে অর্পণ করতে যান। সেই আত্মনিবেদনে খুশি হয়ে দেবী তাঁকে আশীর্বাদ করেন। এরপর রাম হনুমানকে দেবীর মাহাত্ম্য বোঝাতে মহিষাসুরমর্দিনী রূপে তাঁর গৌরব বর্ণনা করেন। সেই কাহিনিরই নৃত্যনাট্য রূপ হতে চলেছে ‘অকাল বোধন’।
এই অনুষ্ঠানের অন্যান্য চরিত্রে রয়েছেন সান বাংলা পরিবার-এর অভিনেতা-অভিনেত্রীরা। মূলত চ্যানেলটির নিজস্ব তারকারাই এই পৌরাণিক কাহিনিকে প্রাণ দিচ্ছেন মঞ্চে। মহালয়ার দিন ভোরবেলা, চিরাচরিত ঐতিহ্য বজায় রেখেই, সান বাংলা-র পর্দায় সম্প্রচারিত হবে এই মহোৎসব।
মহালয়ার সকালে এবার আর শুধু রেডিও নয়, টিভির পর্দায় পায়েল দে-র দুর্গারূপে আগমনে আরও বেশি করে গর্জে উঠবে ‘জয় মা দুর্গা’ ধ্বনি!
