বলিউডের ছবি নির্মাতা হিসেবে সুনীল দর্শন বরাবরই ছিলেন এক নিঃশব্দ শক্তপোক্ত সিঁড়ি । তাঁর তৈরি ছবি আন্দাজ, ইন্তেকাম কিংবা তালাশ: দ্য হান্ট বিগিন্স হয়তো বক্স অফিস ফর্মুলা মেনে দুরন্ত আয় করেনি কিন্তু একটি স্বত্বন্ত্র ঘরানার ছবি তৈরি করেছিলেন তিনি।তবে সম্প্রতি এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সুনীল দর্শন এমন এক অধ্যায়ের পর্দা তুললেন, যা বলিউডের ইতিহাসে এক অস্বস্তিকর সম্পর্ক-এর দলিল হয়ে থাকবে। তাঁর কথায়, অভিনেতা সানি দেওল-এর সঙ্গে করা তিনটি ছবি তাঁর জীবনের "সবচেয়ে কঠিন সময়" ছিল।

“আমি ভেবেছিলাম ওর মতো তারকা দরকার সিনেমার… বিশ্বাস করেছিলাম” বক্তব্য প্রিয়াঙ্কা চোপড়া অভিনীত প্রথম হিন্দি ছবি আন্দাজ-এর প্রযোজকের। সুনীল জানান, ১৯৯০-এর দশকে যখন তিনি সানি দেওলকে কাস্ট করেন ‘ইন্তেকাম’-এ, তখন সানি বড় তারকা না হলেও ছিলেন ভবিষ্যতের সম্ভাবনাময় এক অভিনেতা। “আমরা আগে থেকেই কিছু ছবির ডিস্ট্রিবিউশন করতাম। সানির প্রতি আমার এক বিশেষ ভরসা ছিল। ওর মধ্যে একটা জেদ ছিল, আর আমি বিশ্বাস করতাম—এই ধরনের অভিনেতাকে বলিউডে দরকার।”
কিন্তু সেই বিশ্বাসেই চিড় ধরতে বেশি সময় লাগেনি। সুনীলের দ্বিতীয় ছবি ‘লুটেরে’ থেকেই শুরু বিপত্তি, তৃতীয় ছবিতে তুঙ্গে যায় সানির সঙ্গে তাঁর তিক্ততা। প্রথম ছবির সাফল্যের পর তাঁরা ফের একসঙ্গে কাজ করেন ‘লুটেরেe’-তে। আর সেখান থেকেই শুরু হয় সমস্যার সূত্রপাত। সুনীল বলেন— “ওঁর সা=ঙে কাজ করাটাই এক বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। অনেকটা যেন কোনও নাছোড়বান্দা ছোট শিশুকে দিয়ে কাজ করানোর মতো!”
এরপর তাঁদের তৃতীয় ছবি ‘অজয়’-এ পৌঁছে সম্পর্ক এতটাই নষ্ট হয় যে, সুনীল নাকি আর কোনও কাজ করতে চাননি সানির সঙ্গে। তাই হয়তো এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলে উঠলেন, “ দ্বিতীয় ছবির পর থেকেই সানির সঙ্গে আর কোনও কাজ করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে হয়নি আমার, কিন্তু আমাকে জোর করে বোঝানো হয়েছিল ফের কাজ করার জন্য, তাই রাজি হয়ে গিয়েছিলাম।” আর এই "ইমোশনাল ম্যানিপুলেশন"-এর অভিযোগই ফের নতুন আলো ফেলছে সানি দেওল ঘিরে বহুদিনের গুঞ্জনে।
সানি নাকি তাঁর থেকে অগ্রিম টাকা নিয়েও ছবি করেননি! তাই শুরু হয় আইনি যুদ্ধ, জানান সুনীল দর্শন। সবচেয়ে বিস্ফোরক অভিযোগটি আসে এখানেই। সুনীল দর্শনের দাবি, সানি দেওল একটি নতুন ছবির জন্য আগাম টাকা নিয়েছিলেন, কিন্তু সেই প্রজেক্ট আর বাস্তবায়িত হয়নি।“এঁদের হাতে প্রচুর ক্ষমতা তাই তাঁরা কোনও কিছুরই পরোয়া করে না। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ঈশ্বর এর বিচার একদিন না একদিন করবেন। ” মন্তব্য, সুনীলের। এই ঘটনার জেরে শুরু হয় আইনি লড়াই। যদিও তাঁর কথায়, তিনি এখনও ধর্মেন্দ্র এবং দেওল পরিবারকে সম্মান করেন।
এরপর দীর্ঘ বিরতির পর কামব্যাক—‘আন্দাজ ২’-এর দায়িত্ব নিজেই কাঁধে তুলে নিয়েছেন সুনীল। প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় পর এবার সুনীল দর্শন ফিরছেন তাঁর নতুন প্রোজেক্ট ‘আদায় ২’-এর হাত ধরে। এই ছবিটি পরিচালনা, প্রযোজনা ও লেখার দায়িত্ব তিনিই একা হাতে সামলেছেন।ছবির তিন মুখ্য চরিত্রে থাকছেন নবাগত আয়ুষ কুমার, আকাশা ও নাতাশা ফার্নান্ডেজ। সঙ্গীত পরিচালনায় ফিরছেন একসময়ের হিট জুটি নাদিম-সামীর। আগামী ৮ অগাস্ট মুক্তি পাবে আন্দাজ ২।
সানি দেওলের সম্পর্কে এই অভিযোগ কি তাহলে নতুন করে বলিউডের পুরনো মুখোশ খুলে দেবে? সানি দেওল বরাবরই বলিউডের শক্তিশালী পরিবারের অংশ, তাঁর রাজনৈতিক পরিচিতিও সর্বজনবিদিত। একাধিক সহকর্মীর সঙ্গে তিক্ত সম্পর্কের গুঞ্জন আগে থেকেও ছিল। তবে এবার, এক নির্মাতা প্রকাশ্যেই বললেন—“এই অধ্যায়টা এত তিক্ত ছিল যে মুখেও আনা যায় না।”
এই মন্তব্য শুধু অতীত স্মৃতি নয়, বলিউডের ‘সিস্টেমিক পাওয়ার-প্লে’-এর ছবিও তুলে ধরে।
