হলিউডের প্রথম সারির অন্যতম তারকা অভিনেত্রী গ্যাল গ্যাডোট। ‘ওয়ান্ডার উম্যান’ এবং ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’—দুই ছবিতেই ঝলমলে উপস্থিতি তাঁর। কিন্তু একটা সময়ে এই গ্ল্যামার-কুইন মঞ্চেই ছিটকে গিয়েছিলেন ভারতীয় প্রতিযোগী তনুশ্রী দত্তের কাছে! ২০০৪ সালের মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতা—গ্যাল ছিলেন অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অন্যতম, কিন্তু ‘টপ ১৫’-এও উঠতে পারেননি। সেখানে ভারতের তনুশ্রী পৌঁছে গিয়েছিলেন সরাসরি ‘টপ ১০’-এ!

 

 

তনুশ্রী সেই বছর জিতেছিলেন ‘মিস ইন্ডিয়া ইউনিভার্স’ খেতাব এবং দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে গিয়েছিলেন মিস ইউনিভার্স প্রতিযোগিতায়। গ্যাল গ্যাডোট পরে বলেছিলেন— “আমি তো জিততেই চাইনি। মিস ইউনিভার্স হওয়ার কোনো ইচ্ছেই ছিল না...” কিন্তু অন্যদিকে, তনুশ্রীর তখনই শুরু হয় স্পটলাইটে আসার পালা।

 

ভারতে ফিরে আসার পর তনুশ্রী রীতিমতো সিনেমার প্রস্তাবে ভেসে যান। মাত্র এক বছর পর, ২০০৫-এ, ইমরান হাশমির সঙ্গে ‘আশিক বানায়া আপনে’-তে ডেবিউ করেই রাতারাতি খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে যান। তাঁর বোল্ড রোম্যান্স ও স্ক্রিন প্রেজেন্স তাঁকে পরিণত করে ‘সেনসেশন’-এ। এরপর একে একে তিনি করেন ‘চকোলেট’, ‘ঢোল’, ‘রিস্ক’, ‘গুড বয় ব্যাড বয়’, ‘ভাগম ভাগ’-এর মতো একাধিক জনপ্রিয় সিনেমা।

 

 

তবে ২০১৩ সালের পর রূপোলি পর্দা থেকে সরে যান তিনি। কিন্তু ২০১৮-তে ফের ফিরে আসেন শিরোনামে— ‘মি টু’ (MeToo) আন্দোলনের জোয়ারে। তনুশ্রী প্রথম জনসমক্ষে অভিযোগ আনেন বর্ষীয়ান অভিনেতা নানা পটেকরের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার। সেই অভিযোগ ছিল বিস্ফোরক, সাহসী, এবং বহু নারীর কণ্ঠকে উজ্জীবিত করেছিল।

 

 

এবার ফের তনুশ্রী বলছেন, তাঁকে ‘টার্গেট’ করা হচ্ছে। সম্প্রতি এক ভিডিওতে কাঁদতে কাঁদতে জানিয়েছেন— “আমাকে অনুসরণ করা হচ্ছে। আমার বাড়িতে এক দাসীকে লাগানো হয়েছিল, সে আমার উপর নজর রাখছিল। আমায় প্রতিনিয়ত হেনস্থা করা হচ্ছে।”

তিনি আরও জানান, “আমি আগামীকাল পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাব। আগের মি টু কেসের সঙ্গে এটা জুড়বেন না। এটা সম্পূর্ণ নতুন এক হুমকি। আমি চাই প্রশাসন এটা গুরুত্ব সহকারে নিক।” তবে তিনি স্পষ্ট করেছেন, পুরনো কেস আবার তুলতে চাইছেন না। “আমি শুধু নিরাপত্তা চাই। আমি যেদিন থেকে মুখ খুলেছি, আমার জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। আমার কেরিয়ার ধ্বংস হয়ে গেছে,”—বেদনার সুরে বলেন তনুশ্রী।এতদিন কাজের পরিবেশ নিয়ে সরব হলেও, নিজের বাড়িতেই যে তিনি এত বড় সন্ত্রাসের মুখে দিন কাটাচ্ছেন—তা এতদিন জানতেই পারেননি কেউ। এবার আর মুখ বুজে না থেকে, সমাজের কাছেই সাহায্যের আবেদন জানালেন তনুশ্রী দত্ত। তাঁর প্রশ্ন, “নিজের বাড়িতে যদি কেউ নিরাপদ না থাকেন, তাহলে কোথায় যাব?”এই অবস্থায় তনুশ্রীর পাশে কে আছেন, তা স্পষ্ট নয়। পরিবার বা বন্ধুবান্ধবের থেকে কতটা সহায়তা পাচ্ছেন, তাও অজানা। তবে এটা নিশ্চিত, এই কঠিন সময়ে তনুশ্রীর পাশে একজন নির্ভরযোগ্য সাপোর্ট সিস্টেম দরকার, না হলে আরও বড় বিপদের আশঙ্কা।

 

এক সময় গ্যাল গ্যাডোটকে হারিয়ে বিশ্বমঞ্চে দেশের মুখ উজ্জ্বল করা সেই মেয়ে—আজ নিজ দেশেই নিজেকে অসহায় মনে করছেন। প্রশ্ন জাগে—যেখানে সাহসী কণ্ঠকে নিরাপত্তা নেই, সেখানে ন্যায় কীভাবে জয়ী হবে?