বলিউডের ঝাঁ চকচকে গ্ল্যামারের পেছনে থাকা নিকষ কালো ছায়াময় সব পথ নিয়ে ফের সরব অভিনেত্রী কাল্কি কোয়েচলিন। সহজ কথায়, কাস্টিং কাউচ, যৌন হেনস্থা। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নিজের জীবনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করলেন তিনি। কাস্টিং কাউচ বা কাজের বিনিময়ে যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব—এই বলিউডের অন্ধকার অধ্যায় যেন তার জীবনেও পড়ে গিয়েছিল ছায়া।
সেই সাক্ষাৎকারে কাল্কি জানান, এই অভিজ্ঞতা ছিল তার অভিনয় জীবনের শুরুর দিকেই। তিনি তখন সবে লন্ডনে পড়াশোনা করছেন, অভিনেত্রী নন। কানের চলচ্চিত্র উৎসবে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মুঠোফোনের প্রচার অনুষ্ঠানে 'প্রোমো গার্ল' হিসেবে গিয়েছিলেন। সেখানেই এক ভারতীয় প্রযোজকের সঙ্গে আলাপ। তিনি কাল্কির মা-র এক পরিচিতের মাধ্যমেই পরিচয় পান। সিনেমার প্রদর্শিনীর আমন্ত্রণ, তারপর ডিনারে যাওয়ার প্রস্তাব। কাজের সম্ভাবনা জানতে চাওয়া মাত্রই স্পষ্ট বুঝিয়ে দেন—এই কাজ পেতে হলে ‘তার সঙ্গে থাকতে হবে!’

এরপরের অভিজ্ঞতা ছিল মুম্বইয়ে। তখন কাল্কি ইন্ডাস্ট্রিতে ঢুকে পড়েছেন। একটি বড় বাজেটের ছবির অডিশনে গিয়েছেন। প্রযোজক বলেন, “এই ফিল্মটা করতে চাইছ? খুব ভাল। কিন্তু সেটা হলে আগে আমাকে ভাল করে চিনতে হবে তোমায়।” তার মানে, আবার সেই একই ‘ডিনারের আমন্ত্রণ’—যা আদতে এক রকমের অলিখিত শর্ত।কাল্কি সোজা জানিয়ে দেন, “আমি নিজের সময় নষ্ট করতে চাই না, আপনারও না।”
আজও চলচ্চিত্র দুনিয়ায় কাস্টিং কাউচ, প্রভাবশালীদের অপব্যবহার, আর নতুন অভিনেত্রীদের ওপর মানসিক চাপে গল্প থেমে নেই। কাল্কি বলেন, “অনেক সময় এগুলো এমনভাবে বলা হয় যেন স্বাভাবিক, কিন্তু এগুলো মানসিকভাবে কতটা প্রভাব ফেলে, তা কেউ বোঝে না।”
বর্তমানে কাল্কিকে শেষ দেখা গিয়েছে তামিল ছবি ‘নেসিপ্পায়া’-তে। সামনে মুক্তি পেতে চলেছে তাঁর ইংরেজি ছবি ‘এমা অ্যান্ড এঞ্জেল ’, যা তার বিচিত্র ও সাহসী কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে বলেই মনে করছে বলিউড।
এই প্রথম নয়। এর আগেও বলিউডের নানান আলো-আঁধারি বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছেন কাল্কি। জানিয়েছিলেন, স্রেফ পুরনো একটি ছোট গাড়িতে চেপে হাজির হয়েছিলেন বলে এক নামি বলিউডি ফিল্মি অ্যাওয়ার্ডে ঢোকার আগে তাঁকে আটকে দেওয়া হয়, কারণ তিনি নিয়ে যাননি কোনও বড় গাড়ি বা বাহারি !
“বছরের পর বছর আমি আমার সেই ছোট্ট গাড়িতে করে সেই নামি অ্যাওয়ার্ডেগেছি। এমনও হয়েছে, আমার পোশাক গাড়ির চেয়েও বড়! গেটের কাছে গাড়ি আটকে দিয়ে বলা হত ঢুকতে পারবে না। আমায় প্রমাণ করতে হতো আমি কাল্কি,” বললেন তিনি। স্টার ইমেজ না বানালে, সঙ্গে নিজের বিরাট টিম নিয়ে ঘোড়ামারা না করলে বলিউডে সুযোগ মেলে প্রস্তাবও অফারও কমে যায়,” বললেন তিনি। তবে এই জীবনযাত্রা তাঁর নয়।
“আমি সেই জীবন চাই না—আমি স্বাধীনতা ভালবাসি। আমি নিজে গোয়ায় একটা সুন্দর বাড়িতে থাকি, মুম্বইয়ে যাতায়াত করি বিমানে । আমার খরচ সব সেখানেই যায়। আমি জানি এমন অনেক তারকাকে, যারা এক কামরার ফ্ল্যাটে থাকেন, কিন্তু ছবি সংক্রান্ত আলোচনার জন্য বিরাট গাড়ি নিয়ে যান। বাহারি গাড়ি আর চালকের পেছনে একটা গ্ল্যামার বানানো হয়, কিন্তু ভিতরে থাকে ফাঁপা গল্প,”—সোজা কথায় সোজা ছুরির মতো কল্কি কেটে ফেললেন বলিউডের গ্ল্যামার-অভিনয়। তবে তিনি স্বীকার করেন, বড় তারকাদের নিরাপত্তার জন্য দেহরক্ষী, পিআর টিমের প্রয়োজন হয়। এবং তারকার ইমেজ-বিল্ডিং পুরোপুরি অপ্রয়োজনীয় নয়।
