রং মেখে বাইকে বসা ‘শিবঠাকুর’-এর পোস্টার ঘিরে উঠেছিল ধর্মীয় ক্ষোভ। মামলা ঝুলছিল সাত বছর ধরে। এবার আদালতের সামনে আত্মসমর্পণ করলেন বলিউড অভিনেতা রাজকুমার রাও! অবশ্য জামিনও মিলল, তবে শর্তসাপেক্ষে।
২০১৭ সালে মুক্তি পায় রাজকুমার রাও ও শ্রুতি হাসান অভিনীত ছবি ‘বহেন হো গি তেরি’। ছবির প্রচারের সময় ৪ এপ্রিল একটি পোস্টার প্রকাশ্যে আসে যেখানে রাজকুমারকে দেখা যায় শিবের সাজে, পায়ে চটি, একেবারে উদাস মুখে একটি সিলভার রঙের বাইকে বসে থাকতে। পেছনে বন্ধ দোকানের ঝাঁপ— যেন কোনও গলির মোড়ে যাত্রার প্রস্তুতি চলছে।
এই পোস্টার ঘিরেই তীব্র বিতর্ক। অভিযোগ ওঠে, হিন্দু ধর্মের ভাবাবেগে আঘাত করার চেষ্টা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে। এরপরই জালন্ধরে মামলা দায়ের হয় রাজকুমার রাও, শ্রুতি হাসান, ছবির প্রযোজক-পরিচালক-সহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
অভিযোগের ধারায় ছিল –
ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৯৫এ ধারা (ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার চেষ্টা),
১২০বি ধারা (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র),
এবং তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৭ নম্বর ধারা।
এরপর অভিনেতার নামে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি হয়।
তাহলে এত বছর পরে কেন আদালতে হাজিরা অভিনেতার? রাজকুমারের আইনজীবী দর্শন সিং দয়ালের বক্তব্য অনুযায়ী, “শমন পাঠানোর ঠিকানায় ভুল ছিল। অভিনেতা এখন মুম্বইয়ে থাকেন, কিন্তু সমনে দিল্লির ঠিকানা ছিল। তাই সময়মতো হাজিরা দিতে পারেননি।”
অবশেষে ২০২৫ সালের ২৮ জুলাই জালন্ধরের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন রাজকুমার রাও। তাঁর জামিনের আবেদন গ্রহণ করে আদালত শর্তসাপেক্ষে জামিন মঞ্জুর করেছে।অন্যদিকে, শ্রুতি হাসান ইতিমধ্যেই বেকসুর খালাস। কারণ, তদন্তে প্রমাণ মেলেনি যে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করেছেন।
এই প্রসঙ্গে রাজকুমার কী বলছেন?আইনজীবীর মাধ্যমে অভিনেতা জানান, তিনি তো শুধুই একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন—সেটিও ছিল এক যাত্রাদলে শিব ঠাকুরের রূপ ধারণ করা এক যুবকের ভূমিকায় -“এটি একেবারে সৃজনশীল উপস্থাপনা, উদ্দেশ্য ছিল না কারও ভাবাবেগে আঘাত করার।”
তাঁর আরও দাবি,“ছবিটি সেন্সর বোর্ড থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। এবং আমি সংবিধানের ১৯(১)(ক) ধারা অনুযায়ী মত প্রকাশের স্বাধীনতা ভোগ করি।”
উল্লেখ্য, ‘বহেন হো গি তেরি’ ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন অজয় কে পন্নালাল। ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন রাজকুমার রাও ও শ্রুতি হাসান। অভিনেতা সম্প্রতি ‘মালিক’ ছবিতে শেষ দেখা গেছেন।
‘গ্যাংস অফ ওয়াসেপুর’ ছিল নাকি প্রথমে রাজকুমার রাও আর নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকির মুখোমুখি সংঘর্ষের গল্প! সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এমনই বিস্ফোরক দাবি করলেন রাজকুমার নিজেই। বললেন, “অনুরাগ স্যার নিজে ফোন করেছিলেন। তখন ছবিটার কাহিনি ছিল আমার আর নওয়াজ ভাইয়ের চরিত্রকে ঘিরেই।”
এরপর তাঁরা দু’জনেই গিয়েছিলেন আসল ওয়াসেপুরে—স্থানীয় ভাষা, ওখনকর বাসিন্দাদের কথা ছোড়ার ভঙ্গি থেকে হাবভাব - সব বুঝতে, রেকর্ডার হাতে মানুষের কথাবার্তা তুলেও এনেছিলেন। “ ছবিটা নিয়ে ভীষণ উত্তেজিত ছিলাম,” বললেন রাজকুমারের। কিন্তু হঠাৎ একদিন ‘রাগিনি এমএমএস’-এর ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে রাজকুমার পেলেন অনুরাগ কাশ্যপের ফোন—“ দ্যাখ, চিত্রনাট্য তো চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে… কিন্তু এখন তোর চরিত্রটা অনেক ছোট হয়ে গিয়েছে... প্রায় নেই বললেই চলে। তাই এবার তুই দ্যাখ...এই ছবিতে অভিনয় করবি কি না।” শুনে খানিক দমে-ই গিয়েছিলেন রাজকুমার। তবু তাঁর জবাব ছিল, “স্যার, আমি আপনার সঙ্গেই কাজ করতে চাই। চরিত্র বড় হোক বা ছোট, আমি করবই।”
স্বভাবতই মনখারাপ হয়েছিল ‘মালিক’ অভিনেতার। বললেন, “খারাপ তো লেগেছিলই… তিনদিন ধরে ট্রেনে চেপে গিয়েছি, ফিরেও এসেছি ট্রেনে। কারও কাছেই টাকা ছিল না তখন। কিন্তু যতক্ষণ কাজ পাচ্ছি, ততক্ষণ সব ঠিক আছে।” পরে সেই রাজকুমারই ‘শহিদ’ ছবিতে কাজের সুযোগ পেয়েছিলেন অনুরাগ কাশ্যপের জন্য! অনুরাগ নিজে পরিচালক হংসল মেহতা-কে রাজকুমারের কথা বলেছিলেন। আর এরপর 'শাহিদ' হয়ে উঠেছিল রাজকুমারের কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট।
