নিজস্ব সংবাদদাতা: ‘বিনোদিনী’ ছবি নিয়ে তরজা তুঙ্গে পরিচালক রাম কমল মুখোপাধ্যায় এবং সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে। নটি বিনোদিনী চরিত্রটি ফের বড়পর্দায় নিয়ে আসছেন সৃজিত তাঁর ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবির মাধ্যমে। এই প্রসঙ্গে সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে রুক্মিণী মৈত্র বলেছিলেন, “উনি যে সাহস দিয়েছেন, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মতো পরিচালক ওঁকে দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছে সেটাই তো প্রাপ্য বিনোদিনীর।” সেই সাক্ষাৎকারের ভিডিও সৃজিত মুখোপাধ্যায় ভাগ করেন ফেসবুকে। এরপর সরাসরি নাম না তুললেও ওই পোস্টে রাম কমল মুখোপাধ্যায়কেই যে ‘হাইব্রিড মায়েস্ত্রো’ বলে কটাক্ষ করেছেন সৃজিত, তা বলার জন্য কোনও পুরস্কার নেই! এবার পাল্টা মুখ খুললেন খোদ ‘বিনোদিনী’র পরিচালক। 

 

“আমিও পড়েছি সৃজিতের এই পোস্ট। আমাকে অনেকেই জিজ্ঞেস করেছেন সৃজিত ওই শব্দটি আমার উদ্দেশ্যেই লিখেছেন কি না। জানি না কেন লিখেছেন তবে মনে তো হয়, উনি আমাকে উদ্দেশ্য করেই লিখেছেন। তবে কটাক্ষ করে বলছেন না প্রশংসার ছলে, সেই ভাব লেখার অক্ষর থেকে এখনও অস্পষ্ট আমার কাছে। যদি তিনি আমাকে তিনি ঋতুপর্ণ এবং বনশালির সঙ্গে তুলনা করে থাকেন, তাহলে তুলনাটি আমার কাছে অত্যন্ত গর্বের, আনন্দের। কিন্তু সৃজিত আমাকে যদি ব্যঙ্গ করে লিখে থাকেন...তাহলে কেন ব্যঙ্গ করলেন সেটা শুধু উনি-ই বলতে পারবেন। কারণ ব্যক্তিগত স্তরে সৃজিতের সঙ্গে কখনও কোনও বিষয়ে আমার মতবিরোধ হয়নি। এই ছবি নিয়ে তো নয়-ই, কোনও বিষয়েই নয়। বরং সৃজিতের ছবির আমি অনুরাগী। ওঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘অটোগ্রাফ’ থেকে শুরু করে সবকটি ছবিই আমি দেখেছি। কেবল ‘সত্যি বলে সত্যি কিছু নেই’ ছাড়া। এবং ওঁর বহু ছবির আমি প্রশংসা করেছি প্রকাশ্যে, সমাজমাধ্যমের পাতায়। 

 


“ওঁর সঙ্গে তো আমার সম্পর্ক ভাল বলেই জানতাম...তবে এবার বিনোদিনী ছবিটির সঙ্গে লহ গৌরাঙ্গের নাম রে নিয়ে ওঁর কী সমস্যা সেটা জানি না। আমার মনে হয় কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। এখানে একটা ব্যাপার আমি পরিষ্কার করে দিতে চাই। আমি নিজেকে কখনওই বনশালি অথবা ঋতুপর্ণ ঘোষের সঙ্গে তুলনা করিনি। আমার এই ছবি দেখে বহু দর্শক একথা বলেছেন, তাঁদের মধ্যে সাংবাদিকরাও রয়েছেন। শুধু বাংলার নয়, এ রাজ্যের বাইরেও। আর দেখুন, প্রতিটি পরিচালক অন্য কোনও পরিচালকের থেকে অনুপ্রাণিত হন। ঋতুপর্ণ ঘোষ যেমন সত্যজিৎ রায়ের থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। অন্যদিকে, সত্যজিৎ রায় একাধিকবার জানিয়েছিলেন তিনি পরিচালক হিসাবে অনুপ্রাণিত হয়েছেন ‘দ্য বাইসাইকেল থিফ’ ছবির পরিচালক ভিত্তরিও ডি সিকা-কে দেখে। আমরা তো কম বেশি সবাই কারও না কারও দ্বারা অনুপ্রেরিত হই। আমি অবশ্যই পরিচালক হিসাবে ঋতুপর্ণ ঘোষ এবং বনশালির কাজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছে। এবার শুধু সেই কারণেই যদি সৃজিত আমাকে হাইব্রিড মায়েস্ত্রো বলে থাকেন, তাহলে খারাপ তো লাগবেই।” 

 

সৃজিত লেখেন, “বিনোদিনী চরিত্রটির জন্য আমার প্রথম থেকে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়কেই পছন্দ ছিল। আর সেটা ২০২০ সালেই ঠিক করা হয়। ‘লহ গৌরাঙ্গের নাম রে’ ছবিটি লেখা হয় ২০১৯ সালে। এছাড়া বেশ কিছু মহিলাকেন্দ্রিক ছবি যেমন ‘রাজকাহিনী’ ২০১৫ এবং ‘বেগমজান’ ২০১৭ সালে লেখা হয়। এই ছবি ঋতুপর্ণ ঘোষ, সঞ্জয় লীলা বনশালি অথবা কোনও হাইব্রিড মায়েস্ত্রোর থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা হয়নি। এই ছবি তৈরি হচ্ছে চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবন ও তাঁর সময়কালের অনুপ্রেরণায়।”