বলিউডের ঝলমলে দুনিয়ায় একের পর এক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়ে শ্রোতাদের মনে জায়গা করে নিয়েছেন কণিকা কাপুর। তাঁর কণ্ঠে সানি লিওনির ‘বেবি ডল’ এক দশক আগে যেমন শ্রোতাদের মাতিয়ে দিয়েছিল, আজও সেই গান বাজলেই নাচে উঠতে বাধ্য হন শ্রোতারা। কিন্তু এত সাফল্যের পরও কণিকার দাবি—ভারতে গায়কেরা তাঁদের পরিশ্রমের সঠিক মূল্য পান না। বরং অনেক সময় গানের জন্য পারিশ্রমিক হিসাবে হাতে আসে মাত্র ১০১ টাকা!
সম্প্রতি, কণিকা বলেন—“ভারতে গায়করা আসলে কোনও টাকা পান না। আমি সব চুক্তিপত্র দেখাতে পারি—১০১ টাকা লেখা থাকে। বলা হয়, আপনাদের উপকার করা হচ্ছে। ভারতের সবচেয়ে বড় গায়ককেও আমি চিনি, যিনি তাঁর সেরা গানগুলোতে কোনও পারিশ্রমিক পাননি, কোনও স্বত্ব নেই, কিছুই নেই।” এখানেই না থেমে তিনি আরও যোগ করেন, “গান গেয়ে আসলে কেউ রোজগার করতে পারে না। আয় হয় কেবল শো থেকে। যতদিন পর্যন্ত গলার আওয়াজ থাকবে, ততদিন শো করে টাকা আসবে। কিন্তু কাল যদি কিছু হয়, গায়কদের জন্য কোনও সুরক্ষা নেই, কোনও পেনশন প্ল্যান নেই।”
বলিউডে গায়কদের দুরবস্থা নিয়ে সরব হলেন কণিকা। ভারতে চলচ্চিত্র সংগীত শিল্প বহু কোটি টাকার হলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রে রয়্যালটি বা পাবলিশিং রাইটস থাকে মিউজিক লেবেলের হাতে। গায়করা গানের জন্য সামান্য পারিশ্রমিক পান, কিন্তু গানের জনপ্রিয়তা থেকে যে বিশাল অঙ্কের আয় হয়, তার ভাগ তাদের হাতে আসে না। কণিকা কাপুরের মন্তব্য আবারও সেই দীর্ঘদিনের অভিযোগকে সামনে আনল।
কণিকা কাপুরের বলিউডে অভিষেক হয় ২০১৪ সালে সানি লিওনির আইটেম নাম্বার ‘বেবি ডল’ দিয়ে। গানটি রাতারাতি তাঁকে তারকা বানিয়ে দেয়। এরপর একে একে তাঁর কণ্ঠে উঠে আসে জনপ্রিয় গান—
‘লাভলি’ (‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’, দীপিকা পাড়ুকোন)
‘চিট্টিয়া কলাইয়া’ (‘রয়’, জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ)
‘দেশি লুক’ (‘এক পহেলি লীলা’, সানি লিওনি)
‘বিট পে বুটি’ (‘ ফ্লাইং জাট’, জ্যাকলিন ও টাইগার শ্রফ)
এই গানগুলো তাঁকে শুধু বলিউডে নয়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও জনপ্রিয় করে তোলে।
সাফল্যের পাশাপাশি বিতর্কও পিছু ছাড়েনি কণিকার। কোভিড মহামারির সময় লন্ডন থেকে দেশে ফিরে কোয়ারেন্টাইন ভেঙে দিল্লি ও লখনউতে একাধিক পার্টি করার অভিযোগে তিনি সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিলেন। পরে অবশ্য তিনি ক্ষমা চান।
সম্প্রতি কণিকার কণ্ঠে শোনা গেছে ‘গোরি হ্যায় কলাইয়াঁ’–র নতুন ভার্সন, ‘মেরে হাজব্যান্ড কী বিবি’ ছবিতে। গানটিতে অভিনয় করেছেন অর্জুন কাপুর, ভূমি পেডনেকর ও রাকুল প্রীত সিং। গানটির কথা লিখেছেন আইপি সিং, সুর দিয়েছেন অক্ষয় ও আইপি, আর র্যাসপে ছিলেন বাদশাহ।
বলিউডে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে সাফল্য অর্জন করার পরও কণিকা কাপুরের ক্ষোভ স্পষ্ট—ভারতে গায়কদের সম্মান ও আর্থিক সুরক্ষা নেই। গানের জনপ্রিয়তা যদি কোটি টাকার ব্যবসা তৈরি করে, তবে সেই সাফল্যের প্রকৃত ভাগীদার গায়ক-গায়িকারা কেন বঞ্চিত হবেন—এই প্রশ্নই এখন ফের সামনে এনেছেন তিনি।
কণিকার এই বিস্ফোরক দাবি বলিউড সংগীতশিল্পীদের দীর্ঘদিনের ক্ষোভকেই প্রতিধ্বনি করেছে। ঝলমলে গ্ল্যামার আর ব্লকবাস্টার হিটের আড়ালে শিল্পীদের বাস্তব জীবন যে কতটা অনিশ্চিত, তা আবারও প্রকাশ্যে এল।
