৫২ বছর বয়সী জুবিন গর্গের মৃত্যু নিয়ে দেশজুড়ে রহস্যজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়। গত ১৯ সেপ্টেম্বর, সিঙ্গাপুরে স্কুবা ডাইভিং করতে গিয়ে মৃত্যু হয় গায়কের। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি রাজ্যজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এবার গায়কের রহস্যজনক মৃত্যু মামলায় অবশেষে বড়সড় পদক্ষেপ গ্রহণ করল অসমের বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি)।
শুক্রবার গুয়াহাটির মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে এই চাঞ্চল্যকর মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। তদন্তের গভীরতা ও ব্যাপকতা বোঝাতে কর্তৃপক্ষ যে নজির সৃষ্টি করেছে, তা রীতিমতো চোখে পড়ার মতো—প্রায় সাড়ে তিন হাজার পৃষ্ঠার সুবিশাল এই চার্জশিট চার-চারটি বিশাল ট্রাঙ্কে ভরে আদালতে আনা হয়। এই দৃশ্য দেখে এজলাসে উপস্থিত অনেকেরই চোখ কপালে ওঠার জোগাড়।
তদন্তকারী দলের সদস্যরা এদিন অত্যন্ত কড়া নিরাপত্তায় ছ'টি গাড়ির এক বিশাল কনভয় করে আদালত চত্বরে পৌঁছান। এম পি গুপ্তার নেতৃত্বে গঠিত এই নয় সদস্যের বিশেষ টিম দীর্ঘ সময় ধরে এই জটিল মামলার অনুসন্ধান চালিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, কেবলমাত্র চার্জশিট নয়, এর সঙ্গে জমা দেওয়া হয়েছে অজস্র গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্যপ্রমাণ, যা এই মামলায় অপরাধের প্রকৃতির ওপর আলোকপাত করবে।
উল্লেখ্য, গায়ক জুবিন গার্গের মৃত্যু ঘটেছিল গত সেপ্টেম্বর মাসের ১৯ তারিখে। তিনি তখন সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত চতুর্থ ‘নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভাল’ উপলক্ষ্যে সেখানে গিয়েছিলেন। গভীর সমুদ্রের জলে সাঁতার কাটার সময়েই এক অত্যন্ত রহস্যজনক পরিস্থিতিতে তাঁর মৃত্যু হয়। শুরু থেকেই তাঁর মৃত্যুকে ঘিরে একাধিক প্রশ্ন তৈরি হয়, যা রাজ্যে ব্যাপক জনবিক্ষোভের জন্ম দেয়।
সাধারণ মানুষের তীব্র দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই অসম সরকার দ্রুত এই বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করে পুরো ঘটনার তদন্তভার তাদের হাতে তুলে দেয়। এসআইটি তাদের প্রচেষ্টায় এখনও পর্যন্ত এই মামলার সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে মোট সাতজনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের মধ্যে অন্যতম হলেন অনুষ্ঠানের প্রধান আয়োজক শ্যামকানু মহন্ত। জানা গিয়েছে, এই পুরো তদন্ত প্রক্রিয়ায় ৩০০-র বেশি সাক্ষীর বয়ান অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে রেকর্ড করা হয়েছে, যার বিস্তারিত বিবরণ এই বিপুল পরিমাণ চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। জটিল এই মামলার প্রতিটি খুঁটিনাটি দিক অত্যন্ত মনোযোগের সাথে খতিয়ে দেখা হয়েছে, যাতে কোথাও সামান্য ফাঁক না থাকে।
প্রসঙ্গত, অসমের কিংবদন্তী গায়ক, সুরকার জুবিন গর্গের অকালমৃত্যু নিয়ে গত ২৫ নভেম্বর, অসম বিধানসভায় এক চাঞ্চল্যকর দাবি করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ড: হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। তিনি স্পষ্ট কথায় জানালেন যে সিঙ্গাপুরে সমুদ্রে ডুবে এই শিল্পীর মৃত্যু নিছক কোনও 'দুর্ঘটনা' ছিল না, বরং এটি ছিল একটি 'খুন'।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী এই বিষয়ে বলেছিলেন, "প্রাথমিক তদন্তের পরই অসম পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে এটি কোনও দুর্ঘটনা নয়, এটি ছিল সহজ-সরল একটা খুন।"
