অসম আবারও প্রমাণ করল, একজন শিল্পী সত্যিই অমর। মৃত্যুর পর প্রথম জন্মদিনে পুরো রাজ্য একসুরে স্মরণ করল তাদের প্রিয় ‘জুবিন দা’কে। মঙ্গলবার সকাল থেকেই অসমের আকাশ জুড়ে ছিল এক অন্যরকম আবেগের সুর, যে সুরের জন্ম দিয়েছেন জুবিন গর্গ নিজে। সোমবার রাত বারোটায় কাহিলিপাড়ার সেই পরিচিত বাড়ির সামনে ভক্তরা যখন ভিড় জমাতে শুরু করেন, তখন কারও চোখেই ঘুম নেই। নরম আলো, হাতে গামোছা-এভাবেই তাঁরা কেক কেটে জন্মদিন শুরু করেন। গায়কপত্নী গরিমা সাইকিয়া গার্গ আর বোন পালমী বড়ঠাকুর উপস্থিত ছিলেন সেই নীরব মুহূর্তে। ভক্তরা গাইলেন, “শুভ জন্মদিন, জুবিন দা”।তারপর একের পর এক তাঁর জনপ্রিয় সব গান, ‘মায়া’, ‘মিসিং ইউ’, ‘অয়নাম’, ‘মনতলগা’ যার প্রতিটিই সেই রাতে যেন আরও ব্যথা বড় করে তুলল।
মঙ্গলবার সকালে কাহিলিপাড়ায় হাজির হল বিশাল ২০ কেজির জন্মদিনের কেক। তারপর যে ঘটনা ঘটল তা প্রায় চমকে দেওয়ার মতোই।জুবিন গার্গের বাবা কপিল বোরঠাকুর ও স্ত্রী গরিমা মিলে শিল্পীর একটি মূর্তি উন্মোচন করলেন। মুহূর্তটি দেখে জড়ো হওয়া শত শত মানুষের চোখ ভিজে উঠল। হাততালি, কান্না আর এক গভীর শূন্যতার অনুভব সব মিলিয়ে অসামান্য আবেগময় পরিবেশ তৈরি হয়েছিল।
?utm_source=ig_embed&utm_campaign=loading" target="_blank" rel="noopener">A post shared by I LOVE BONGAIGAON (@ilovebongaigaon)
সোমবার রাত থেকেই মানুষ ভিড় করছেন ‘জুবিন ক্ষেত্র’-এ, যেখানে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছিল। ভক্তদের হাতে গামোছা, ফুল, প্রদীপ। কেউ গান গাইছেন, কেউ মাটিতে বসে নীরবে প্রার্থনা করছেন। অসমের ইতিহাসে এমন গভীর সম্মিলিত শোকের ছবি বিরল।
শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা-ও। তাঁর কথায়, “দেহ হারায়, আলো নয়”। অসমের মুখ্যমন্ত্রী এক আবেগভরা বার্তায় লিখেছেন, “কিছু উপস্থিতি দৃষ্টির আড়াল হলেও স্মৃতিতে আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আজ আমরা স্মরণ করছি সেই শিল্পীকে, যিনি ছিলেন, আছেন, থাকবেন আমাদের হৃদয়ের হৃদস্পন্দন…আমাদের প্রিয় জুবিন।”
জুবিনের বয়সের প্রতীক হিসেবে বিজেপি আয়োজন করেছিল ৫৩টি রক্তদান শিবির অসমের প্রতিটি জেলায়। অন্যদিকে কংগ্রেস এদিন সন্ধ্যায় পাঞ্জাবাড়িতে আয়োজন করেছিল ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা সংস্কৃতি হৌক মৈত্রেয়ীর মন্ত্র’ নামে এক বিশেষ স্মরণসভা। গুয়াহাটি প্রেস ক্লাবের সাংবাদিকরাও এদিন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, “জুবিন শুধু গায়ক নন, অসমের সংস্কৃতির প্রাণশক্তি।”
প্রসঙ্গত, ১৯৭২ সালের ১৮ নভেম্বর মেঘালয়ের তুরায় জন্ম জুবিন গার্গ। এ বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হয় সিঙ্গাপুরে, যেখানে তিনি গিয়েছিলেন নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যাল–এ যোগ দিতে। তাঁর মৃত্যুর রহস্য আজও বহু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে আর সেই অজানা বেদনা আজও তাড়া করে ফেরে অসমবাসীকে।
৫৩তম জন্মদিনে অসম যেন প্রমাণ করল একজন শিল্পীর মৃত্যু হয় কিন্তু তাঁর সৃষ্টি শিল্পের অনুরণন থেকে যায় অসংখ্য মানুষের জীবনে।