জীবন চলিয়া গিয়াছে বারোটি বছর পার!

২০১৩ থেকে ২০২৫। এক দশকেরও বেশি সময়। অনেক কিছু যেমন বদলাল, তেমন একই রকম থেকে গেল কত কিছুই। রবিবাসরীয় সকালে তেমনই উপলব্ধি অঙ্কুশ হাজরার। বর্তমানে যিনি নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘রক্তবীজ ২’-এর অ্যান্টি হিরো।

মার্চ, ২০১৩। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেল রাজ চক্রবর্তী পরিচালতি ‘কানামাছি’। আদ্যোপান্ত পলিটিক্যাল থ্রিলার। প্রেমের উপাদান ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকলেও রাজনীতির অলিগলি-তলপেট চিড়ে তৎকালীন সমাজের প্রতিবিম্বই বেশি করে ধরা পড়েছিল পর্দায়। নায়ক অঙ্কুশ হাজরা। ছবিতে তিনি সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিক। খলনায়ক এক অসৎ, ধূ্র্ত নেতার চরিত্রে আবির চট্টোপাধ্যায়। শেষ দৃশ্যে বাণিজ্যিক ছবির শতাব্দী-প্রাচীন নিয়ম অনুযায়ী ‘দুষ্টের দমন’ করে নায়ক। ক্লাইম্যাক্সে আবির-অঙ্কুশের সেই তুমুল মারপিটও ভোলার নয়।

কাট টু অক্টোবর, ২০২৫। ফের পলিটিক্যাল থ্রিলার। প্রতিপক্ষ আবির-অঙ্কুশ। তবে এবার রোল রিভার্সাল থুড়ি ভূমিকা অদলবদল। পর্দায় আবির কর্তব্য পরায়ণ, সাহসী পুলিশ অফিসার। অঙ্কুশ জিহাদি। ১২ বছর পেরিয়েও টলিউডের সুদর্শন দুই নায়ককে এক সূত্রে গেঁথে দিল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। তবে কি তাঁদের ‘জয়-বীরু’ হয়ে ওঠা আর হল না?

একগাল হেসে আজকাল ডট ইনকে অঙ্কুশ বলেন, “এই বিষয়টা আমি লক্ষ্য করেই নন্দিতাদি আর শিবুদাকে বলেছিলাম আমাদের নিয়ে যেন ভবিষ্যতে ওরা জয়-বীরু ধরনের চরিত্র লেখে। আবিরদার সঙ্গে আমার সম্পর্ক এত সু্ন্দর! কিন্তু দেখুন, পর্দায় সব সময় একে অপরকে তাড়া করে বেড়াচ্ছি। ওকে আমি এতটাই ভালবাসি যে ওর সঙ্গে এরকম চরিত্র করাটা খুব কঠিন হয়ে পড়ে।”

‘কানামাছি’তে অঙ্কুশের সেই বেদম প্রহারের প্রতিশোধ কি ‘রক্তবীজ ২’-এ নিতে পারলেন আবির? শিষ্টের পালনে কি গায়ের জোরেই দুষ্টের দমন হল? অঙ্কুশ যদিও  উত্তর দিলেন না। খানিক আভাস দিয়ে বললেন, “এই ছবির সবটা জুড়েই তো দারুণ অ্যাকশন। তবে এখানে গায়ের জোরের থেকেও বেশি মস্তিষ্কের জোর থাকবে। আরও এমন কিছু থাকবে, যা দর্শককে দম নিতে দেবে না। বাকি উত্তর ছবি দেখলেই পাবেন।”

দুই নায়কের সখ্য দীর্ঘদিনের। ইন্ডাস্ট্রির অগ্রজ-অনুজের বিধিবৎ পরিধি তাঁরা কবেই পেরিয়েছেন! ছবির সেটে হাসিঠাট্টার আমেজ ধরে রাখলেও ‘অ্যাকশন’ শুনেই বন্ধুত্ব ভুলতে হত তাঁদের। ‘রক্তবীজ ২’-এর মুনির আলমের কথায়, “আবিরদা দারুণ অভিনেতা! আমারও অভিনয়ের একটু উন্নতি হয়েছে। তাই আমরা এরকম মারকাটারি শত্রুতা পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি। আমি শুনেছি, ‘ছাওয়া’ করার সময় ভিকি কৌশল এবং অক্ষয় খন্না একে অপরের সঙ্গে কথা বলতেন না। কারণ কথা বললে নাকি একে অপরের প্রতি সেই ঘৃণা আনতে সমস্যা হত। আমার আর আবিরদার সেই বালাই ছিল না। শুধু ‘কাট’টা বলার অপেক্ষা। আমি ওর সঙ্গে মজা করতাম, জড়িয়ে ধরতাম, চুমু খেতাম, কোলে উঠে পড়তাম। কোনও কিছুই বাদ রাখিনি।”

অপেক্ষায় আছেন অঙ্কুশ। মারপিট নয়, আবিরের সঙ্গে একটি বার গলা জড়াজড়ি করে বন্ধু্ত্ব রচনার সাধ সেলুলয়েডে। নায়কের স্বীকারোক্তি, “আমি তো মুখিয়ে রয়েছি। দু’জনের জন্য মানানসই চিত্রনাট্য পেলেই করব। আমার বিশ্বাস, কেউ যদি আমাদের নিয়ে বন্ধুত্বের ছবি করেন, দর্শক তা লুফে নেবেন।”

‘রক্তবীজ ২’ মুক্তি পাবে ২৬ সেপ্টেম্বর। অনেকেই মনে করছেন, এই ছবির ভবিষ্যৎ পূর্ব-নির্ধারিত। ব্লকবাস্টার তকমা নাকি বাঁধাধরা। অঙ্কুশ যদিও এখনই এতটা নিশ্চিত হতে চান না। তাঁর কথায়, “আগে থেকেই এতটা ভেবে নেওয়া ঠিক নয়। তবে এটা সত্যি যে, একটা সুপারহিট ছবির সিক্যুয়েল করলেই ৫০ শতাংশ কাজ হয়ে যায়। ‘রক্তবীজ’এ দর্শক যা দেখেছেন, ‘রক্তবীজ’২ তার কয়েক গুণ বেশি চমক পাবেন। মানুষের যেহেতু আগে থেকেই এই ছবি নিয়ে একটা আগ্রহ তৈরি হয়েছে, তাই আশা করছি, বক্স অফিসে একটা ভাল ফিগারই দেখতে পাব।”