অভিনেত্রী প্রিয়া মারাঠে, যিনি জনপ্রিয় টেলিভিশন ধারাবাহিক পবিত্র রিশতা-তে বর্ষার চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের মন জয় করেছিলেন, মাত্র ৩৮ বছর বয়সে ক্যানসারের কারণে প্রয়াত হয়েছেন। রবিবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে টেলিভিশন জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মারণব্যাধি তাঁকে জীবনযুদ্ধে হারিয়ে দিল।

এক সময় ‘পবিত্র রিশতা’  ধারাবাহিকে বর্ষা চরিত্রে প্রিয়ার অভিনয় তাঁকে ঘরে ঘরে পরিচিতি দিয়েছিল। শুধু টেলিভিশন নয়, বিভিন্ন মঞ্চ এবং অন্যান্য প্রজেক্টেও তাঁর অভিনয়ের ছাপ রয়েছে। অনেক সহকর্মী তাঁকে স্মরণ করে জানিয়েছেন, প্রিয়া ছিলেন এক অত্যন্ত প্রতিভাবান, মাটির মানুষ এবং সর্বদা হাসিখুশি স্বভাবের।

প্রিয়া গত দু’বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছিলেন। অবশেষে মীরা রোডে তাঁর বাসভবনে ভোররাতে, প্রায় চারটের সময় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

প্রিয়ার পরিজনদের মধ্যে রয়েছেন তাঁর স্বামী, অভিনেতা শান্তনু মোগে। হঠাৎ এই চলে যাওয়া স্বামী-পরিবারের পাশাপাশি সমগ্র টেলিভিশন এবং বিনোদন জগৎকে স্তম্ভিত করেছে। মাত্র কয়েক বছর আগে পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাওয়া এক প্রতিভাবান শিল্পীর জীবন এমনভাবে থেমে যাওয়া অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না।

প্রিয়া এবং অভিনেতা শান্তনু ২০১২ সালের এপ্রিলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ব্যক্তিগত জীবনের পাশাপাশি পেশাগত জীবনেও তাঁরা হাতে হাত রেখে এগিয়ে গিয়েছেন। দু’জনকে একসঙ্গে দেখা গিয়েছিল ঐতিহাসিক ধারাবাহিক ‘স্বরাজ্যরক্ষক সম্ভাজী’তে। সেখানে তাঁরা সহ-অভিনেতা হিসেবে কাজ করেছিলেন।

প্রিয়া ছোটপর্দায় পা রাখেন মারাঠি ধারাবাহিক ‘ইয়া সুখানো ইয়া’–এর মাধ্যমে। এরপর তিনি অভিনয় করেন একাধিক জনপ্রিয় মারাঠি ধারাবাহিকে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘চার দিবস সাসুছে’। হিন্দি টেলিভিশনে তাঁর প্রথম কাজ ছিল জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘কসম সে’তে, যেখানে তিনি বিদ্যা বালি চরিত্রে অভিনয় করেন। পাশাপাশি তিনি কমেডি রিয়েলিটি শো ‘কমেডি সার্কাস’এরও অংশ ছিলেন।

প্রিয়ার অন্যতম স্মরণীয় চরিত্র হল ‘পবিত্র রিশতা’তে। সেই ধারাবাহিকে তিনি অঙ্কিতা লোখান্ডের চরিত্র অর্চনার বোনের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। এই ধারাবাহিকই তাঁকে সর্বাধিক পরিচিতি এনে দেয়। তিনি স্বল্প সময়ের জন্য ‘বড়ে আচ্ছে লাগতে হ্যায়’  ধারাবাহিকেও কাজ করেছিলেন।

শুধু হিন্দি নয়, মারাঠি ধারাবাহিকেও তিনি সমানভাবে সক্রিয় ছিলেন। ‘তু তিথে মে’ ছিল তাঁর অভিনীত জনপ্রিয় মারাঠি সিরিয়ালগুলির মধ্যে একটি। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে তিনি ‘সাথ নিভানা সাথিয়া’তে যোগ দেন এবং ভবানী রাঠৌর চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেন। এছাড়াও ভক্তরা তাঁকে দেখেছেন ‘উত্তরণ’, ‘ভারত কা বীর পুত্র – মহারানা প্রতাপ’, ‘সাবধান ইন্ডিয়া’, এবং ‘আতা হউ দে ধিংগানা’–এর মতো জনপ্রিয় ধারাবাহিকে।

তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে নানান চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে প্রিয়া দর্শকদের মনে এক বিশেষ স্থান দখল করে নিয়েছিলেন, যা তাঁর অকাল প্রয়াণ সত্ত্বেও আজও অমলিন থাকবে।