বলিউডের বাদশাহ হিসেবে পরিচিত তিনি, কিন্তু ছাত্রজীবনেও ছিলেন ‘সেরা ছাত্র’। সহপাঠীরা বারবার বলেছেন—শাহরুখ খানের মধ্যে ছোটবেলা থেকেই ছিল সেই উন্মাদনা, চার্ম আর নেতৃত্ব দেওয়ার অপূর্ব ক্ষমতা। অনেকেই জানেন, তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়েছিলেন, পরে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায় গণযোগাযোগ বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন। কিন্তু অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি—কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে তিনি আইআইটি-র প্রবেশিকা পরীক্ষাও ক্র্যাক করেছিলেন!
২০০০ সালে এক সাক্ষাৎকারে শাহরুখ নিজেই জানান এই গল্প । স্কুলজীবনে বিজ্ঞানের ছাত্র হলেও কলেজে তিনি পড়তে চেয়েছিলেন অর্থনীতি। কিন্তু তাঁর মা চেয়েছিলেন ছেলে বিজ্ঞানের পথেই এগোতে। তখন মা তাঁকে বলেছিলেন—“তুমি যদি অর্থনীতি পড়তে চাও, আগে প্রমাণ করে দেখাও যে তুমি বিজ্ঞানের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষাও দিতে পার।” হাসিমুখেই রাজি হন শাহরুখ। এবং দেন সেই পরীক্ষা। ফলাফল—তিনি পাশ করেন আইআইটি প্রবেশিকা পরীক্ষায়। তারপর মা-ই বলেন—“এবার তুমি অর্থনীতি পড়ো।”
এই ঘটনাই যেন প্রমাণ করে, শাহরুখ শুধু পর্দার ‘কিং’ নন, ছাত্র হিসেবেও ছিলেন অনন্য।
সেই সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান তাঁর শৈশবের কথা। বড় হয়েছেন এক ‘উদার ও মুক্তচিন্তার পরিবারে’। “আমরা কখনও বেঁধে দেওয়া নিয়মে চলিনি। ধর্ম, পড়াশোনা, ক্যারিয়ার—সবকিছুতেই ছিল স্বাধীনতা। শুধু বলা হতো, ভালবাসা দিয়ে করো, নিজের সেরাটা দাও।”
শাহরুখ আরও বলেন, ছোটবেলায় তাঁকে নামাজ পড়তে শেখানো হয়েছিল ভালবাসা দিয়ে, ভয় দেখিয়ে নয়। “যেভাবে বলা হত, তাতে মনে হত সত্যিই করতে ইচ্ছে করছে। আমি চাই আমার সন্তানদেরও একইভাবে বড় করতে—যেখানে ধর্ম, শিক্ষা, জীবনের সবকিছুই থাকবে শ্রদ্ধার জায়গা থেকে, ভয়ের নয়।”
আজ যাঁকে গোটা পৃথিবী ‘কিং খান’ নামে চেনে, তাঁর জীবনের এই অজানা অধ্যায় যেন আরও একবার মনে করিয়ে দেয়—শাহরুখ খানকে গড়ে তুলেছে শুধু প্রতিভা নয়, সেই উদার পারিবারিক পরিবেশ আর এক অদম্য জেদ, যা তাঁকে আলাদা করে দিয়েছে সবার থেকে।
অন্যদিকে, কাঁধে অস্ত্রোপচারের পর দীর্ঘ বিরতি কাটিয়ে আবার শুটিং ফ্লোরে নেমে পড়লেন শাহরুখ খান। মুম্বইয়ে ‘কিং’ ছবির সেটে তাঁর তোলা এক ঝলক ছবি ইতিমধ্যেই ভাইরাল। ভক্তদের উচ্ছ্বাস—“শেষেমেষ তিনি ফিরলেন!”সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, সাদা শার্ট, কালো সানগ্লাস আর চোখে পড়ার মতো সিলভার ফক্স লুক—পাকা চুলে একেবারে নতুন রূপে ‘কিং খান’। ছবিটি তোলা হয়েছে একটি ফুড-চেইন রেস্তরাঁর বাইরে, চারপাশে শুটিং সেটের আলো, ছাতা, ক্যামেরা সাজানো। যদিও তাঁর হাতে স্লিং ছিল কি না, দূর থেকে তা বোঝা যায়নি।
প্রসঙ্গত, জনপ্রিয় ফরাসি নায়ক জ্যঁ রেনোয়াঁর ‘লিওঁ’ ছবি থেকে অনুপ্রাণিত ‘কিং’- র গল্প। সে ছবিতে একজন পেশাদার খুনির ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল জ্যঁ রেনোয়াঁকে, যিনি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে একজন ১২ বছর বয়সী এক অনাথ বালিকার ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান। দুর্ধর্ষ গ্যাংস্টারদের গুলির হাত থেকে সেই বালিকাকে বাঁচাতে বাঁচাতে কীভাবে তাঁর অভিভাবক হয়ে ওঠেন রেনোয়াঁ, তাই নিয়েই এগোয় ছবির গল্প। ‘কিং’-এর গল্পও কমবেশি এক। ওই সূত্র জানিয়েছে, তবে সুহানা যেহেতু আর ১২ বছরের বালিকা নেই, তাই গল্পের কাঠামোয় খানিক পরিবর্তন এনেছেন পরিচালক সুজয় ঘোষ। তবে ছবিতে সুহানার গোটা পরিবারকে ‘লিওঁ’র মতোই আর শাহরুখের চরিত্রটি কমবেশি জ্যঁ রেনোয়াঁর মতোই।
