ফের জোরদার বিতর্কে জড়িয়েছেন কমল হাসন।সনাতন ধর্ম নিয়ে মন্তব্য করে তীব্র বিতর্কের মুখে এই অভিনেতা-রাজনীতিবিদ। পদ্মশিবির থেকে বয়কটের ডাক তো বটেই, এবার তাঁর জীবনের দিকেও ছায়া ফেলল প্রাণনাশের হুমকির কালো মেঘ। তামিল ছোটপর্দার অভিনেতা রবিচন্দ্রন খোলাখুলিভাবেই জানিয়েছেন, সনাতনবিরোধী মন্তব্যের জন্য তিনি হাসনকে খুন করে ফেলবেন।
ঘটনার সূত্রপাত সূরিয়ার এনজিও ‘আগরম ফাউন্ডেশন’-এর ১৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে। সেখানে হাসন কেন্দ্র সরকারের ন্যাশনাল এলিজিবিলিটি কাম এন্ট্রান্স টেস্ট (NEET)-এর কড়া সমালোচনা করে বলেন, এই পরীক্ষা অসংখ্য এমবিবিএস প্রার্থীর স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছে এবং এটি “সনাতন ধর্মেরই এক ক্ষতিকর ফলাফল”। তাঁর এই মন্তব্যের পর থেকেই শুরু হয় প্রবল প্রতিক্রিয়া, বয়কটের ডাক এবং অবশেষে খুনের হুমকি।
একটি ইউটিউব সাক্ষাৎকারে রবিচন্দ্রন শুধু হাসনকে ‘সরলমনা রাজনীতিক’ বলেই থামেননি, প্রকাশ্যে বলেন— “আমি ওর গলা কেটে দেব”। এই চরম হুমকি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে অভিনেতার অনুরাগীদের মধ্যে।
রাজ্যসভার সাংসদ ও ‘মাক্কাল নিধি মাইয়াম’-এর প্রতিষ্ঠাতা হাসন সেই অনুষ্ঠানে কমল হাসন বলেন,“এই যুদ্ধে কেবল শিক্ষা-ই দেশকে বদলে দিতে পারে। একে একমাত্র অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করুন—যা স্বৈরতন্ত্র ও সনাতনের শৃঙ্খল ভাঙতে সক্ষম। অন্য কোনও অস্ত্র হাতে তুলবেন না। তাতে আপনি জিতবেন না, সংখ্যাগুরু তন্ত্রে পরাস্ত হবেন! অজ্ঞ সংখ্যাগুরু আপনাকে হারিয়ে দেবে।”
বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরপরই শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক চাপ আসা। তামিলনাড়ুর বিজেপি ইউনিট হাসানের সাম্প্রতিক মন্তব্যের পর তাঁর অভিনীত ছবিগুলি বয়কটের আহ্বান জানিয়েছে। বিজেপি রাজ্য সম্পাদক অমর প্রসাদ রেড্ডি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও বার্তা দিয়ে বলেন,“আগে ছিলেন উদয়নিধি স্ট্যালিন, আর এখন কমল হাসন—যারা সনাতন ধর্ম ধ্বংস করতে চায়। এবার সময় এসেছে শিক্ষা দেওয়ার।”
তিনি হিন্দুদের অনুরোধ করেছেন হাসনের সিনেমা দেখা বন্ধ করতে, এমনকি ওটিটিতেও নয়। তাঁর মতে, “এভাবে চাপ সৃষ্টি করলে এরা আর কোটি কোটি হিন্দুর ভাবাবেগে আঘাত করে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করবে না।”
বিজেপি-র প্রবীণ নেতা তামিলিসাই সৌন্দররাজনও হাসানকে তীব্র আক্রমণ করে বলেন, তিনি হিন্দু বিশ্বাসকে অপমান করেছেন এবং তাঁর মন্তব্য নিন্দনীয়।
প্রসঙ্গত, ২৫ জুলাই, বর্ষাকালীন অধিবেশনের পঞ্চম দিনে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে তামিলে শপথ নেন কমল হাসান। সদ্য নির্বাচিত এই সাংসদকে স্বাগত জানান অন্যান্য সাংসদরা, টেবিল চাপড়ে প্রশংসা করে। পরে তিনি রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশকে অভিবাদন জানান। শপথ গ্রহণের আগে সংবাদমাধ্যমকে কমল হাসন জানান,“আমি গর্বিত, সম্মানিত। আমি ভারতীয়, নিজের কর্তব্য পালন করব। আজ ইতিহাসে আমার নাম নথিভুক্ত হবে।”
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কমল হাসানের এমএনএম, ডিএমকে নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেয়। সেই আসন-বণ্টনেই রাজ্যসভার একটি আসন পান হাসান। ৬ জুন মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি, সঙ্গে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্টালিন, উপ-মুখ্যমন্ত্রী উদয়নিধি স্টালিন, এবং জোটসঙ্গী নেতারা—ভিসিকে’র থোল তিরুমাভলাভন, এমডিএমকে’র ভাইকো এবং কংগ্রেস নেতা সেলভা পেরুণথাগাই।
এটাই কমল হাসানের প্রথম আনুষ্ঠানিক সাংবিধানিক পদ। ২৩৪ সদস্যবিশিষ্ট তামিলনাড়ু বিধানসভায় রাজ্যসভার জন্য প্রয়োজন ছিল ন্যূনতম ৩৪টি ভোট—সেটা তিনি নির্বিঘ্নে পেয়ে যান।দিল্লিতে রাজ্যসভা সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার ঐতিহাসিক মুহূর্তে তাঁর পাশে ছিলেন এক নিঃশব্দ সাক্ষী, তাঁর কন্যা শ্রুতি হাসান।শপথের পর ইনস্টাগ্রামে এক মর্মস্পর্শী পোস্টে লেখেন—“ভালবাসি ও তোমার জন্য গর্বিত, আপ্পা। চিরকাল।”
