২০১৮ সালে মুক্তি পেয়েছিল শাহরুখ খানের অভিনীত উচ্চাভিলাষী ছবি ‘জিরো’, যেখানে কিং খানকে দেখা গিয়েছিল এক বামন চরিত্র বউয়া সিং-এর ভূমিকায়। ছবিতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন অনুশকা শর্মা (একজন সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত বিজ্ঞানীর চরিত্রে) এবং ক্যাটরিনা কাইফ (একজন সেলেব্রিটির চরিত্রে)। বিশাল বাজেট— প্রায় ২০০ কোটি টাকার ছবি, কিন্তু বিশ্বজুড়ে আয় করতে পারেনি সেই অর্থও, বন্ধ ছিল মাত্র ১৭৮ কোটি টাকাতে। বক্স অফিসে ব্যর্থতা, সমালোচনার বন্যা— সবকিছু মিলিয়ে শাহরুখ খান বেশ কয়েক বছরের বিরতি নেন অভিনয় থেকে।

তবে এই ছবিকে ঘিরে বিতর্ক ফের সামনে এল, অনেকদিন পরে— আর সেটা তীব্র ও স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরলেন অভিনেতা লিলিপুট। সম্প্রতি, এক সাক্ষাতকারে হাজির হয়ে তিনি ‘জিরো’ ছবিতে শাহরুখের অভিনয় ও চরিত্র চিত্রণ নিয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করলেন। জানিয়ে রাখা ভাল, জনপ্রিয় ও বিতর্কিত ওয়েব দিরিজ মির্জাপুর-এর একাধিক সিজনে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে দেখা গিয়েছে লিলিপুট-কে।

 “বামনের অভিনয় করতে গেলে শুধু চেহারা ছোট করলেই হয় না”— বললেন লিলিপুট
লিলিপুটের কথায়—“ দৃষ্টিহীন ব্যক্তির চরিত্রে একজন দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন মানুষ অভিনয় করতে পারেন, কিন্তু সাধারণ উচ্চতার কোনও অভিনেতা একজন বামনের চরিত্র ঠিকভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন না, এটা খুব কঠিন। বামনের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি বা হাত-পায়ের নড়াচড়া সবই স্বাভাবিক, শুধু শরীরের গঠনে কিছু পার্থক্য— এটা বোঝাতে গেলে অভিনয়ের গভীরতায় যেতে হয়।”

তিনি আরও যোগ করেন— “তুমি একজন সুদর্শন সুপারস্টার। স্ক্রিনে ছোট করে দেখালে দর্শকের মাথা থেকে সেই সুপারস্টার ইমেজ চলে যাবে না। আমরা দেখছি এক সুপারস্টার, যে প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজেকে ছোট করে দেখাচ্ছে। কিন্তু বামনের যে শরীরগত বৈশিষ্ট্য— ছোট ছোট, মোটা আঙুল, মুখের গঠন, হাঁটার ভঙ্গি— সেসব কিছুই ফুটে ওঠেনি। তাহলে এমন ছবি বানিয়ে কী লাভ?”

“কমল হাসনের অভিনয়ের ধারেকাছেও যেতে পারেননি শাহরুখ!” মন্তব্য লিলিপুটের।  নাম তুলে সরাসরি তুলনা টেনে তিনি বলেন—“ ‘আপ্পু রাজা’-তে কমল হাসন কীভাবে একজন বামনের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন, সেটা দেখুন! কী অভিনয়! কী পর্যবেক্ষণ! তিনি শরীরের প্রতিটি মুভমেন্ট, প্রতিটি ডিটেলিং নিখুঁতভাবে ধরেছিলেন। আর এখানে (জিরো-তে) আপনি শুধুই কৃত্রিমভাবে ছোট হয়েছেন। আর সেটা করেও আপনি কমল হাসনকে নকল করেছেন, যাঁর অভিনয়ের পায়ের ধুলোরও যোগ্য নন আপনি।”

শাহরুখের জাতীয় পুরস্কার পাওয়া আর এই সমালোচনা— টাইমিং নিয়েও ওঠে প্রশ্ন। লিলিপুটের এই মন্তব্য এসেই গেছে এমন এক সময়, যখন সদ্য শাহরুখ খান ‘জওয়ান’ ছবির জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা অভিনেতার সম্মান পেয়েছেন। শাহরুখের জন্য এটি প্রথম জাতীয় পুরস্কার হলেও, কমল হাসন এই সম্মান পেয়েছেন জীবনে তিনবার। তাই অনেকেই মনে করছেন, এই বক্তব্য শুধু ‘জিরো’ নিয়ে নয়, বরং তার পেছনে দীর্ঘদিনের আক্ষেপ, শ্রেণিবিভাজনের রাগ, এবং প্রতিষ্ঠিত ‘স্টারডম’ বিরোধী হতাশা লুকিয়ে রয়েছে।

‘জিরো’ কী বার্তা দিতে চেয়েছিল? পরিচালক আনন্দ এল রাই-এর এই ছবিতে ‘বাউয়া’ সিং নামক এক উচ্চতা-হীন ব্যক্তির আত্ম-অন্বেষণ, প্রেম ও আত্মসম্মানের লড়াই ছিল মুখ্য। ‘বাউয়া’ একদিকে প্রেমে পড়েন সেরিব্রাল পালসি আক্রান্ত এক বিজ্ঞানীর (অনুষ্কা) প্রতি, অন্যদিকে জড়িয়ে পড়েন এক নামী অভিনেত্রীর (ক্যাটরিনা) জীবনে। তবে ছবির চিত্রনাট্য, চরিত্রায়ণ, এবং প্রভাব— কোনওটাই দর্শকের মন জয় করতে পারেনি।

একদিকে শাহরুখের জাতীয় পুরস্কার জয়, অন্যদিকে পুরনো এক ব্যর্থ ছবি নিয়ে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য— সবমিলিয়ে টলমল বলিউডের বাতাস। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই দুই পক্ষের বাদানুবাদ শুরু। কেউ বলছেন লিলিপুট ‘তিতকুটে সত্য’ বললেন, কেউ আবার তাঁকে ‘অতিরিক্ত তিক্ততা’র জন্য দায়ী করছেন। তবে একটা জিনিস স্পষ্ট— ‘জিরো’ ছবির ব্যর্থতা আজও শাহরুখের কেরিয়ারে এক বিরক্তিকর অধ্যায় হয়ে থেকে গিয়েছে।