সংবাদ সংস্থা মুম্বই: আজও যাঁরা মনে করেন ‘লগান’ শুধুই একটি সিনেমা ছিল, তাঁদের জন্য রইল এই অজানা গল্প। ২০০০ সালে গুজরাটের ভুজের মরুভূমিতে চলছিল ‘লগান’-এর শুটিং। সেট জুড়ে ছিল কড়া শৃঙ্খলা আর ‘মনে রাখার মতো’ সব সিদ্ধান্ত। এবার জানা গেল, তৃতীয় দিনেই ছবির শুটিং বাসে ওঠার সময় দেরি করায়, সহকারী পরিচালক অপূর্ব লাখিয়া আমির খানকেই ফেলে গাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন সেটে!

অপূর্ব লাখিয়া, যিনি পরে ‘শুটআউট অ্যাট লোখান্ডওয়ালা’ ছবি তৈরি করেছিলেন, তখন আমিরের প্রথম প্রযোজনা লগান-এ ছিলেন সহকারী পরিচালক। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে গলওয়ান উপত্যকায় ভারত-চীন সংঘর্ষে শহীদ কর্ণেল বিকুমল্লা সন্তোষ বাবুর জীবনকাহিনি অবলম্বনে তৈরি হচ্ছে নতুন ছবি। সেই ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় থাকছেন সলমন খান, আর পরিচালনায় রয়েছেন অ্যাকশন থ্রিলার ছবিখ্যাত পরিচালক অপূর্ব লাখিয়া। অপূর্বর কথায় — “ আমির চেয়েছিলেন, লগান-এর সেটে হলিউডমার্ক কড়া ডিসিপ্লিন নিয়ে আসতে। আমি বলেছিলাম, একটাই বাস যাবে। কেউ দেরি করলে বাস আর অপেক্ষা করবে না। তৃতীয় দিন আমির খান নিজেই দেরি করল কলটাইমে বাসে পৌঁছতে!”
এদিকে বাসের গেটে তখন ছিলেন অভিনেতা রণিত রায়, যিনি সেটের সিকিউরিটি সামলাচ্ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই রণিত বাসের দরজা বন্ধ করতে রাজি হচ্ছিলেন না। অপূর্ব কী করলেন? “আমি রণিতকে এক লাথি মারলাম, ও দরজার বাইরে গিয়ে পড়ল। আর আমরা বাস চালিয়ে দিলাম। এদিকে ছবির বাসের মধ্যে গোটা ইউনিট থম মেরে আমাকে চেয়ে দেখছে। অভিনেতা যশপাল শর্মা বলে উঠেছিলেন, -“কাল তোকে বোম্বার টিকিট কাটতে হবে ভাই!”—কিন্তু অপূর্ব বলেছিলেন, “গেলে যাব। তবু আমাকে এই সিদ্ধান্তের জন্য মনে তো রাখা হবে!” আমিরকে এই ছেড়ে যাওয়ার ঘটনায় সেট জুড়ে শুরু হয় তুমুল উত্তেজনা।

এই ঘটনার ৯০ মিনিট পর, আমির আসেন সেটে—চুপচাপ। কোনও রাগ নেই। কোনও প্রশ্ন নেই। অপূর্ব বলেন— “সেই নীরবতাই ছিল আমিরের বার্তা —'ভাল করেছিস'।” এরপর লগান ছবির প্রধান অভিনেত্রী গ্রেসি সিংও ছাড় পাননি। শুটিংয়ের পঞ্চম দিনে দেরি করেছিলেন গ্রেসি সিং। তাঁকেও বাসে নেওয়া হয়নি সেদিন। এই ছবির শুটিং চলেছিল ছ'মাস নয়, প্রায় এক বছর। মরুভূমিতে। লগান-এর প্রথম এডিট কাট ছিল ৫ ঘণ্টা ৩০ মিনিট, যাতে ছিল নাইট ক্রিকেট ও দু'টি ইনিংস, পরে কেটে বানানো হয়েছিল এক মন্তাজ ও সংক্ষিপ্ত ফাইনাল ম্যাচে।
২০০১ সালে ‘লগান’ শুধু হিটই হয়নি, অস্কারে বিদেশি ভাষার ছবির বিভাগে ‘লগান’ মনোনীত হয়। । কিন্তু এবারে জানা যাচ্ছে, সেটের পিছনে লুকিয়ে ছিল শৃঙ্খলা, সাহস আর কিছু বিস্ফোরক সিদ্ধান্ত। আর এই সিদ্ধান্তগুলোই তৈরি করেছিল ইতিহাস। আর অপূর্ব লাখিয়ার ‘ছেড়ে যাওয়া’ সিদ্ধান্ত যেন ‘লগান’-এর পর্দার বাইরের সবচেয়ে সাহসী দৃশ্য।
