বলিউডের ইতিহাসে ‘শোলে’ শুধু এক জনপ্রিয় ছবি নয়—এক কালজয়ী ছবি। ১৯৭৫ সালে মুক্তি পেয়েছিল বলিউডের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ছবি ‘শোলে’ । সালিম-জাভেদ রচিত এই ওয়েস্টার্ন-স্প্যাগেটি ধাঁচের অ্যাকশন ড্রামা পরিচালনা করেছিলেন রমেশ সিপ্পি। ধর্মেন্দ্র, অমিতাভ বচ্চন, আমজাদ খান, হেমা মালিনী, জয়া বচ্চন, সঞ্জীব কুমার প্রমুখের অনবদ্য অভিনয়, আর ডাকা-সাহসিকতার কাহিনি মিলিয়ে এই ছবি তৈরি করেছিল এক অমর মাইলস্টোন।গব্বর সিংয়ের ভয়ঙ্কর সংলাপ থেকে শুরু করে জয়-ভীরুর বন্ধুত্ব— সবই আজও পপ কালচারের অংশ। ছবিটি মুক্তির পর একটানা পাঁচ বছর চলেছিল প্রেক্ষাগৃহে, যা ভারতীয় সিনেমায় বিরল নজির। ২০০২ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের সমীক্ষায় শোলে শীর্ষস্থান দখল করে “সর্বকালের সেরা ১০ ভারতীয় ছবি”-র তালিকায়। ছবির ৫০তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ছবির পরিচালক রমেশ সিপ্পি এক সাক্ষাৎকারে খুলে দিলেন শোলের শুটিংয়ের অজানা কাহিনি।

ছবিতে জয় (অমিতাভ বচ্চন) আর রাধার (জয়া বচ্চন) দৃশ্যগুলো ছিল অল্প সংলাপের, কিন্তু তাতেই তৈরি হয়েছিল অসাধারণ আবেগঘন রসায়ন। সেই মুহূর্তগুলো নিয়ে সিপ্পির স্মৃতি—“খুব কষ্টকর ছিল ওই দৃশ্যগুলো ধারণ করা। মাত্র ৩–৪ মিনিটের ‘ম্যাজিক আওয়ার’-এ শট ধরতে হতো। মুখ যেন স্তম্ভের আড়ালে না যায়, কাউন্টার শটগুলো যেন ঠিক হয়—এইসব ভেবেই সময় লাগত। তবে ধৈর্যের ফল মেলে, পর্দায় ঠিকঠাক সেই আবহ ফুটে উঠেছিল ।”

ধর্মেন্দ্র আর হেমা মালিনীর খুনসুটিতে ভরা সেই আইকনিক দৃশ্যের কথাও টেনে আনেন পরিচালক। “বসন্তীকে বন্দুক চালানো শেখানোর দৃশ্যটা খুব মজার ছিল। হেমাজির শরীরে কাতুকুতু একটু বেশিই ছিল। ওই দৃশ্যের মাধ্যমে তাঁদের সম্পর্ক এক ধাপ এগিয়েছিল। দর্শকও সেটা অনুভব করেছিলেন।”
‘শোলে’তে জয়া বচ্চনের কাস্টিং নিয়েও উঠেছিল বিতর্ক। শুটিংয়ের প্রথমে বিদ্রুপ পরিচালককে। তৎকালীন সময়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন—জয়া বচ্চনের মতো অভিনেত্রীকে কেন ‘নিঃশব্দ’ চরিত্রে নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু পরিচালক রমেশ সিপ্পির ব্যাখ্যা ছিল আলাদা। তাঁর কথায়, “অনেকে বলেছিল, জয়ার মতো অভিনেত্রীকে নিয়ে লাভ নেই। কিন্তু ঠিক সেই কারণেই আমি তাঁকে নিয়েছিলাম। চরিত্রে কোনও সংলাপ না থাকলেও, চোখ-চাহনি দিয়েই তিনি আবেগ প্রকাশ করতে পেরেছিলেন। ৫০ বছর পরেও আমরা সেই চরিত্রের কথা বলি—এটাই সবচেয়ে বড় প্রমাণ।”

‘শোলে’র আগে সিপ্পির পরিচালনার শুরু হয়েছিল ‘আন্দাজ’ দিয়ে। কেন সেই ছবি বেছে নিয়েছিলেন?“অন্যরা যা করছে, আমি তার থেকে আলাদা কিছু করতে চেয়েছিলাম। তাই আন্দাজকে বেছে নিই। প্রথম ছবির জন্য সেটা ছিল সঠিক সিদ্ধান্ত।”
তবে ৫০ বছর পেরিয়ে শোলে—আজও কিংবদন্তি! ৫০ বছরে এসে স্পষ্ট, রমেশ সিপ্পির প্রতিটি সিদ্ধান্ত—কাস্টিং থেকে শুটিং, দৃশ্যের বিন্যাস থেকে সংলাপ—সবই ছিল সুপরিকল্পিত। আর তাই ‘শোলে’ আজও শুধু একটি ছবি নয়, ভারতীয় সিনেমার সাংস্কৃতিক ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়।
আজও ভারতীয় সিনেমার ‘কালজয়ী ক্লাসিক’ হিসেবে ‘শোলে’র নাম উচ্চারিত হয় শ্রদ্ধার সঙ্গে।
