সংবাদ সংস্থা মুম্বই: বলিপাড়ার প্রথম সারির প্রযোজকের মধ্যে প্রথম দিকেই থাকে তাঁর নাম। পরিচালক হিসাবেও তাঁর মুন্সিয়ানার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল দর্শক। তিনি, বিধু বিনোদ চোপড়া। তবে জানেন কি, এই নাম তাঁকে কে দিয়েছিলেন? কে-ই বা তাঁকে জোর করেছিলেন এই বলে যে এ নামটি-ই তাঁকে রাখতে হবে নইলে পরিচালক হিসাবে তাঁকে পাত্তা দেবে না কেউ? দু’টি প্রশ্নের জবাব একটিই-ঋত্বিক ঘটক!
এক অনুষ্ঠানে এসে এই কথা ফাঁস করেছেন খোদ বিধু বিনোদ চোপড়া। তিনি জানান, এফটিআইআই-এর ছাত্র থাকাকালীন তাঁর শিক্ষক ছিলেন এই কিংবদন্তি পরিচালক। তাঁকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন ঋত্বিক। আদর করে তাঁকে 'বাঙালি' ডাকার পাশাপাশি বেশিরভাগ করা বাংলাতেই বলতেন। যদিও সেসবের একবর্ণ বুঝতেন না বিধু, কারণ তিনি বাংলা জানতেন না। কিন্তু ঋত্বিকের স্নেহ থেকেই সেসব কথার ভাব তিনি হৃদয়াঙ্গম করতে পারতেন। এমনই একদিন ঋত্বিক তাঁকে বলেন- “তোর যা নাম, তাতে কোনওদিনও পরিচালক হতে পারবি না। বিনোদ কুমার চোপড়া একটা নাম হল? কেউ পাত্তা দেবে না এমন নামের পরিচালককে। তোর আর কোনও নাম আছে? ডাকনাম কী তোর?” আমতা আমতা করে জবাব আসে, “বিধু”। শোনামাত্রই ঋত্বিক ঘটক বলে ওঠেন –“হ্যাঁ! এই তো। এই নামটাই ভাল। বিধু-কেই ভাল নামের সঙ্গে জোড়া দে। আর দেখতে হবে না।” তাই-ই করেছিলেন বিধু বিনোদ চোপড়া। ওই অনুষ্ঠানে হাসতে হাসতে 'লগে রহো মুন্নাভাই'-এর প্রযোজক বলেন, “তাই আমি আজও বলি, আমার এই নাম রেখেছিলেন ঋত্বিক ঘটক। আর একটা কথা, উনি-ই আমাকে বলতেন, ‘শ্রেষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা কর, ওটাতেই লেগে থাকবি। দেখবি সাফল্য নিজে থেকে দৌড়ে তোর কাছে আসবে। ওঁর বলা সেই কথা-ই আমি ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবিতে ব্যবহার করেছিলাম।”
উল্লেখ্য, পারিন্দা যেমন পরিচালনা করেছিলেন তেমনই স্বাধীনতার পটভূমিকায় প্রেমের আখ্যান বুনেছিলেন বিধু। বানিয়েছিলেন ‘১৯৪২, আ লাভস্টোরি’। ‘পরিণীতা’, ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’-এর মতো সুপারহিট ছবির প্রযোজকও তিনি, চিত্রনাট্যেও অবদান রয়েছে তাঁর।
তিনি মোট ৮টি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ছায়াছবি এবং কিছু স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি ও তথ্যচিত্র তৈরি করেছেন ঋত্বিক ঘটক। তাঁর প্রথম বাণিজ্যিক ছবি ‘অযান্ত্রিক’। বাস্তব জীবনের নানা চিত্র নিয়ে তৈরি তাঁর সিনেমা অবিস্মরণীয়। নির্দেশক হিসাবে তাঁর কাজ শুধু বাংলা নয় সমগ্র ভারতীয় সিনেমায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। উদ্বুদ্ধ করেছেন অনেক নতুন প্রজন্মের নির্দেশকদেরও। চিত্রনাট্যকার হিসাবে তাঁর প্রথম সফল বাণিজ্যিক ছবি ‘মধুমতী’। ১৯৭০-এ পদ্মশ্রী খেতাব পান। ১৯৭৪-এ ‘যুক্তি তক্ক আর গপ্পো’ ছবির জন্য রজত কমল পুরস্কার পান। এফটিআইআই-তে তাঁর ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন বিখ্যাত দক্ষিণী পরিচালক জন আব্রাহাম, কুমার সাহানি। অন্যান্য ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন সাইদ আখতার মির্জা, সুভাষ ঘাই এবং আদুর গোপালকৃষ্ণণ ।
