আজকাল ওয়েবডেস্ক: ভারতের নিজস্ব বিস্কুট ব্র্যান্ড পার্লে-জি, কেবল মুচমুচে এবং পুষ্টিকর বিস্কুট নয়, যা একটি সরল প্যাকেটে মোড়ানো। বরং একটি প্রতীক যা কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত সকল ভারতীয়কে একত্রিত করেছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে দেশের মানুষ এই সাধারণ বিস্কুটের সরল, কিন্তু মুখে জল আনা স্বাদে মুগ্ধ হয়ে আসছে। এর উৎপত্তি ১৯২০-এর দশকের গোড়ার দিকে ঔপনিবেশিক আমলে।
পার্লে-জি-র গল্প শুরু ১৯২০ সালে। সেই সময় মোহনলাল চৌহান প্রাথমিকভাবে ৬০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। ব্রিটিশদের শিল্প আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে জার্মানি থেকে বিস্কুট তৈরির মেশিন আমদানি করেছিলেন। মোহনলাল তাঁর পাঁচ পুত্র - মানেকলাল, পিতাম্বর, নরোত্তম, কান্তিলাল এবং জয়ন্তীলালের সঙ্গে মুম্বইয়ের শহরতলি ভিলে পার্লেতে একটি সাধারণ বিস্কুট তৈরির কারখানা স্থাপন করেছিলেন। মজার ব্যাপার হল, পার্লে-জি-তে পার্লে শব্দটির উৎপত্তি এখান থেকেই, যদিও ‘জি’ প্রথমে গ্লুকোজের জন্য ব্যবহৃত হত, কিন্তু ব্র্যান্ডের ভক্তরা ভালবেসে এটিকে ‘জিনিয়াস’ হিসেবে পরিবর্তন করেছেন।
ভারতের স্বাধীনতার পর, পার্লে-জি সাধারণ মানুষ এবং দেশের উদীয়মান মধ্যবিত্ত উভয়ের জন্যই পছন্দের খাবার হিসেবে আবির্ভূত হয়। কারণ এটি একই সঙ্গে সাশ্রয়ী মূল্যের কিন্তু সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর ছিল। বছরের পর বছর ধরে, পার্লে-জি প্রস্তুতকারী সংস্থা পার্লে প্রোডাক্টস, একটি স্থির গতিতে প্রসারিত হয় এবং বিশ্বায়নের আগে ভারতীয় বাজার বিদেশী এফএমসিজি পণ্যের জন্য বন্ধ থাকলেও। এটি ১৯৮০-এর দশকে ফ্রুটি, লিমকা, থামস আপ, গোল্ড স্পট এবং লিমকার মতো ঘরোয়া নামগুলির জন্ম দেয়। কোকা-কোলা ভারতের বাজারে প্রবেশের পর থামস আপ অধিগ্রহণ করে নেয়।
২০১১ সালে, নিলসেনের একটি প্রতিবেদনে পার্লে-জিকে বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত বিস্কুট হিসেবে নামকরণ করা হয়েছিল, যা ওরিও এবং অন্যান্য বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডগুলিকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছলে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় আসে, যার ফলে পার্লে-জি-কে কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হতে হয়। সংস্থাটিকে হয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি করতে হত অথবা অথবা লোকসানের মুখে পড়তে হত। সাশ্রয়ী মূল্যের উপভোক্তা-বান্ধব ব্র্যান্ড হওয়ার চেতনার প্রতি অটল থেকে, পার্লে পরবর্তী সিদ্ধান্তটি নেয়। প্রতিযোগীরা দাম বৃদ্ধি করলেও পার্লে-জি বিস্কুটের দাম বাড়ায়নি পার্লে। বিভিন্ন তথ্য অনুসারে, এক সময়ে Parle-G মাসে এক বিলিয়ন প্যাকেট বিস্কুট বিক্রি করত, যা কোম্পানির সূচনালগ্নের তুলনায় এক বিশাল অঙ্ক।
সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মোহনলাল চৌহান ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে লড়াইয়ের প্রতীক হিসেবে যে বিস্কুট সাম্রাজ্য শুরু করেছিলেন, তার নেতৃত্বে রয়েছেন তাঁর বংশধর বিজয় চৌহান, শরদ চৌহান এবং রাজ চৌহান, যারা প্রত্যেকেই পার্লে প্রোডাক্টসের বিপণন, উৎপাদন থেকে শুরু করে সম্প্রসারণ পর্যন্ত বিভিন্ন দিক পরিচালনা করেন।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, পার্লে তার প্রিয় পার্লে-জি বিস্কুট ছাড়িয়ে তার পণ্যের পরিসর প্রসারিত করেছে এবং এখন সংস্থার পোর্টফোলিওতে অন্যান্য জনপ্রিয় পণ্য যেমন ২০-২০ বিস্কুট, মিল্কশক্তি বিস্কুট, মেলোডি টফি, ম্যাঙ্গো বাইট ক্যান্ডি, পপিনস, লন্ডনডেরি চকোলেট, কিসমি টফি বার, মোনাকো ক্র্যাকারস, ম্যাগিক্স চকোলেট এবং সকলের শৈশবের প্রিয় ক্র্যাকজ্যাক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
পার্লে-জি-র সাফল্য স্পষ্টতই চৌহান পরিবারের আর্থিক সমৃদ্ধিতে রূপান্তরিত হয়েছে। বিজয় চৌহান এবং পরিবারের মোট সম্পদের পরিমাণ ৫.৫ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৪৫,৫৭৯ কোটি টাকা) যা তাদেরকে ভারতের অন্যতম ধনী ব্যবসায়িক পরিবারে পরিণত করেছে।
