আজকাল ওয়েবডেস্ক: শুক্রবার সোনার বাজারে প্রবল ধাক্কা লাগে যখন হোয়াইট হাউস সোনা আমদানির শুল্ক নিয়ে “ভুল তথ্য” মোকাবিলার ঘোষণা করে। এরপরই রেকর্ড উচ্চতা থেকে দাম কমে আসে। মূল্যবান ধাতু শিল্পে বিভ্রান্তি ও বিশ্বে স্বর্ণ বাণিজ্যে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।


গোল্ড ফিউচারস বা সোনার ভবিষ্যৎ চুক্তির দাম পূর্বে প্রতি আউন্সে ৩,৪৯১.৩০ ডলারে পৌঁছে রেকর্ড করলেও, ঘোষণার পরে কমে ৩,৪৬৩.৩০ ডলারে নেমে আসে। এরপর আবার কিছুটা সংশোধন হয়ে, ইউএস গোল্ড ফিউচারস ০.১% বাড়ে এবং ৩,৪৫৭ ডলার দাঁড়ায়।  অন্যদিকে স্পট গোল্ড স্থির ছিল ৩,৩৯৮ ডলার প্রতি আউন্সে।

আরও পড়ুন:  কানারা ব্যাঙ্কে সুদের হারে বড় বদল, ফিক্সড ডিপোজিট থেকে সেভিংস অ্যাকাউন্ট সবেতেই মাথায় হাত


হোয়াইট হাউস জানায় সোনার বার এবং অন্যান্য বিশেষ পণ্যের উপর শুল্ক নিয়ম সম্পর্কে ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে একটি আদেশ শীঘ্রই জারি করা হবে। একজন হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা বলেন, সোনার উপর শুল্ক সংক্রান্ত ভুল তথ্য সম্পর্কে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দিতে শীঘ্রই একটি আদেশ জারি করার পরিকল্পনা রয়েছে।


এই বিশৃঙ্খলার সূচনা হয় যখন ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন (CBP) জানায় যে, ১ কেজি ও ১০০ আউন্সের কাস্ট সোনার বার যা মার্কিন ফিউচার্স মার্কেটে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয় সেগুলি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক সুইস রপ্তানির উপর আরোপিত ৩৯% দেশভিত্তিক আমদানি শুল্ক থেকে অব্যাহতির তালিকায় নেই।


CBP জানায়, এই সোনার বারগুলোকে HS কাস্টম কোড 7108.13.5500-এর অধীনে শ্রেণিবদ্ধ করা উচিত। এটি ওয়াশিংটনের এপ্রিল মাসের শুল্ক-ছাড় তালিকায় ছিল না। এই সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র সুইজারল্যান্ডকেই নয় যারা বিশ্বের সর্ববৃহৎ স্বর্ণ পরিশোধন ও পরিবহন কেন্দ্র সহ যেকোনো দেশকেই প্রভাবিত করবে যারা এই ধরণের সোনার বার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করে।


সুইস প্রেশাস মেটালস অ্যাসোসিয়েশন এই ঘটনার কঠোর সমালোচনা করে আন্তর্জাতিক সোনার প্রবাহে গুরুতর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টোফ ওয়াইল্ড বলেন, আমরা এই শুল্কের প্রভাব নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সোনা শিল্প ও সোনা বিনিময়ের ক্ষেত্র। যেটি আমাদের দীর্ঘকালীন ও ঐতিহাসিক অংশীদার। ওয়াইল্ড আরও বলেন, ৩৯% শুল্কের ফলে সুইস সোনার বারের যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি একপ্রকার বন্ধই হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে সুইজারল্যান্ডের অন্তত একটি বড় রিফাইনারি চালান বন্ধ করে দিয়েছে এবং অন্যান্য কিছু সোনা পরিবহন সংস্থাও একই পথে হাঁটছে।


যদিও অনিশ্চয়তা রয়েছে তবে বিশ্লেষকরা বলছেন যে, মার্কিন স্বর্ণ ভবিষ্যৎ বাজার বর্তমানে COMEX-এর মালিকানাধীন গুদামে থাকা বিপুল পরিমাণ মজুদের কারণে আপাতত সুরক্ষিত। StoneX-এর বিশ্লেষক রোনা ও’কনেল জানান, এই মজুদগুলি বর্তমানে ওপেন ইন্টারেস্টের ৮৬% পর্যন্ত পৌঁছেছে। এখানে স্বাভাবিক সীমা থাকে ৪০–৪৫%। ফলে তাৎক্ষণিক ঘাটতির ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।


এরফলে বিশ্বের বাজারে ফের একবার সোনার বাজার পরিবর্তন হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে। সেখান থেকে দেখতে হলে সোনার দামের ওপর এবার যে মার্কিন দেশের নজর পড়েছে সেকথা বলাই যায়। যদি সেটাই হয় তাহলে সোনার দাম আরও বাড়তে পারে।