আজকাল ওয়েবডেস্ক: পার্সোনাল লোন দ্রুত আর্থিক সমাধান দিতে পারে। তবে এদের সঙ্গে অনেক সময় লুকানো খরচ জুড়ে থাকে। এটি প্রকৃত ব্যয়কে অনেকটাই বাড়িয়ে তোলে। সচেতন ঋণগ্রহীতাদের এই সহজ ফাঁদগুলো চিহ্নিত করা জরুরি যাতে অপ্রত্যাশিত আর্থিক জটিলতায় না পড়তে হয়। কোনও নির্দিষ্ট পার্সোনাল লোন নেওয়ার আগে অবশ্যই তার খুঁটিনাটি ভালোভাবে বুঝে নেওয়া উচিত। যেমন শর্তাবলি, সুদের হার, পরিশোধের মেয়াদ, এবং পণ্যের নমনীয়তা—তারপর আবেদন করা উচিত।


চলুন দেখে নেওয়া যাক সেই পাঁচটি সাধারণ ফাঁদ যা পার্সোনাল লোনকে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি ব্যয়সাপেক্ষ করে তোলে এবং সেগুলো এড়ানোর উপায়:
লুকানো চার্জ লোনের খরচ বাড়ায়

আরও পড়ুন: অবসরে পেতে পারেন ৩ কোটি টাকার বেশি, কীভাবে পাবেন এই সুবিধা


পার্সোনাল লোনের প্রসেসিং ফি সাধারণত মোট লোনের ০.৫% থেকে ৩% পর্যন্ত হয়। এই টাকা সরাসরি কেটে নেওয়া হয় বা অনুমোদিত অর্থ থেকে বাদ দেওয়া হয়। এর ফলে কার্যকরভাবে লোনের খরচ বেড়ে যায়। তাছাড়া, বিলম্বিত ফি, আগাম পরিশোধ ফি, ফোরক্লোজার চার্জ, এবং স্ট্যাম্প ডিউটির মতো অতিরিক্ত খরচগুলো সামগ্রিক ঋণের খরচকে অনেকটা বাড়িয়ে দিতে পারে। এগুলো হিসাব না করলে ঘোষিত সুদের হারের তুলনায় আসল খরচ অনেক বেশি হয়।


পরিবর্তনশীল সুদের হার ও সামর্থ্যের চাপ
বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানে পার্সোনাল লোনের সুদের হার প্রায় ১০.৯০% থেকে ২৪% পর্যন্ত। চূড়ান্ত সুদের হার নির্ভর করে ঋণগ্রহীতার ক্রেডিট প্রোফাইলের ওপর। সামান্য সুদ বৃদ্ধিও EMI বাড়িয়ে দিতে পারে, যার ফলে অনেক সময় ঋণগ্রহীতারা মেয়াদ বাড়াতে বাধ্য হন। এতে মোট সুদের খরচ বেড়ে যায় এবং লোনের সামর্থ্য কমে যায়।


একাধিক লোন ঋণগ্রহীতাকে ফাঁদে ফেলতে পারে
একসঙ্গে একাধিক পার্সোনাল লোন নেওয়া বা সামর্থ্যের বাইরে ঋণ নেওয়া ভয়ঙ্কর হতে পারে। এতে ঋণের বোঝা বেড়ে যায়, সুদ চক্রবৃদ্ধি হারে জমতে থাকে এবং কিস্তি মিস করলে ক্রেডিট স্কোর নেমে যায়। ফলস্বরূপ, আর্থিক স্থিতি নষ্ট হয় এবং ঋণ নেওয়া বিরক্তিকর অভিজ্ঞতায় পরিণত হয়।


দীর্ঘ মেয়াদের লোনে সুদের বোঝা বাড়ে
অনেক সময় EMI-এর চাপ কমাতে ঋণগ্রহীতারা দীর্ঘ মেয়াদের লোন বেছে নেন। এতে মাসিক EMI কমে গেলেও, মোট সুদের খরচ অনেক বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদের লোনে EMI তুলনামূলক বেশি হলেও মোট সুদের বোঝা অনেকটা কম হয়। তাই মেয়াদ ঠিক করার আগে দুই পরিস্থিতির ভালো-মন্দ বিচার করে এবং একজন যোগ্য আর্থিক পরামর্শকের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।


পুনর্গঠন কৌশল উপেক্ষা করলে বাড়তি খরচ
ভালো পরিকল্পনার অভাবে অনেক ঋণগ্রহীতা কার্যকর পরিশোধ কৌশল ব্যবহার করেন না। যেমন—আংশিক পরিশোধ, কম সুদের হারে লোন রিফাইন্যান্স করা, বা বেশি সুদের ঋণ আগে শোধ করা—এসব কৌশল ব্যবহার না করলে লোনের খরচ অপ্রয়োজনীয়ভাবে বেড়ে যায়। তাই সচেতন ঋণগ্রহীতা হিসেবে আপনাকে অবশ্যই সঠিকভাবে লোন পরিকল্পনা করতে হবে এবং কার্যকর পুনর্গঠন কৌশল বেছে নিতে হবে, যাতে অপ্রয়োজনীয় বাড়তি খরচ না হয়।


এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার সহজ উপায় 
কোনও লোন নেওয়ার আগে সব ফি ভালোভাবে যাচাই করুন।
EMI ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে লোনের সামর্থ্য যাচাই করুন।
একসঙ্গে একাধিক লোন বা ক্রেডিট কার্ডের আবেদন করা এড়িয়ে চলুন।
আর্থিকভাবে সম্ভব হলে কম মেয়াদের লোন নিন।
আগাম পরিশোধ ও রিফাইন্যান্স কৌশল সঠিক সময়ে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবহার করুন।


পার্সোনাল লোন জরুরি অবস্থায় জীবনরক্ষাকারী হতে পারে। তবে সেটি হতে হবে পরিকল্পিত আর্থিক পদক্ষেপ। তাড়াহুড়ো করে নেওয়া সিদ্ধান্ত নয়। লুকানো খরচ, দীর্ঘ মেয়াদ, একাধিক ঋণ, এবং দুর্বল পরিকল্পনার মতো ফাঁদ নিঃশব্দে খরচ বাড়িয়ে দেয়। তাই সচেতন হোন, সূক্ষ্ম শর্তাবলি পড়ুন, এবং কার্যকর পরিশোধ কৌশল ব্যবহার করুন।