আজকাল ওয়েবডেস্ক: অর্থমন্ত্রক সূত্রের খবর, পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি) কাঠামো পুনর্গঠনের প্রস্তুতিরর ফলে ৪০,০০০ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। এই বিপুল ঘাটতি কীভাবে মোকাবিলা করা হবে? তার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে কেন্দ্র। জিএসটি সচিবালয়ের আধিকারিকদের একটি প্যানেল 'ফিটমেন্ট' কমিটি - প্রত্যাশিত ঘাটতির বিশদ খসড়া তৈরি করেছে, যা কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয়কেই বহন করতে হবে।

প্রস্তাবিত জিএসটি সংস্কারের লক্ষ্য ৫ শতাংশ এবং ১৮ শতাংশ- এই দুই-স্তরের কর কাঠামো জারি থাকবে। জিএসটি ব্যবস্থাকে সহজ করা, আম আদমির বহুল ব্যবহৃত পণ্যগুলির দাম কমানো এবং ক্ষতিকারক পণ্যের উপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপের লক্ষ্যেই জিএসটি-র নয়া কর কাঠামো নির্ধারণের কাজ চলছে। এই সংস্কারের ফলে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য উভয় সরকারের রাজস্ব ব্যাপক হারে মার খেতে পারে বলে আশঙ্কা।  

ইতিমধ্যেই কেন্দ্র অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্ম বন্ধের জন্য আইন তৈরি করেছে। ফলে সরকার ২০,০০০ কোটি টাকা জিএসটি এবং টিডিএস হারাতে চলেছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, জিএসটি কর-কাঠামো সংস্কারের কথা বলেই বেশিরভাগ পরিষেবার ক্ষেত্রেই বড় ধরনের পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম। তবে,  স্বাস্থ্য ও জীবন বিমা প্রিমিয়ামের উপর থেকে জিএসটি অপসারণের প্রস্তাবে সায় রয়েছে কেন্দ্রর।

কেন্দ্রীয় আধিকারিকদের মতে, জিএসটি কর-কাঠামো সংস্কারের ফলে রাজস্ব প্রাথমিকভাবে কমবে। তবে তা অস্থায়ী। ভোক্তাদের ব্যয় বৃদ্ধির মাধ্যমে তা পুষিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এই বছরের শুরুতে, সরকার ভোগ বৃদ্ধির জন্য বার্ষিক ১২.৭৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কর ছাড় চালু করেছে।

জিএসটি কাউন্সিলের ৫৬তম সভা ৩-৪ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হবে, তার আগে ২ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। মূলত সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে বা অক্টোবরের শুরুতে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, রাজ্যগুলির সঙ্গে পরামর্শের পরে সভাটি এগিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কেন্দ্র এখন বিজয়াদশমীর (২ অক্টোবর) মধ্যে নতুন জিএসটি হার কার্যকর করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। একজন আধিকারিক বলেছেন, "যদি সব কিছু ঠিক থাকে, তাহলে দশেরাতেই জিএসটি নয়া কর-কাঠামো বাবাস্তবায়িত হতে পারে।"

জিএসটি সংক্রান্ত বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিগোষ্ঠীর (জিওএম) বৈঠক হত ২০-২১ আগস্ট দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে জিএসটি-র ১২ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ কর-স্তর বাদ দেওয়ার প্রস্তাবকে অনুমোদন পেয়েছে। বৈঠকে অংশগ্রহণকারী রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা ৫ শতাংশ এবং ১৮ শতাংশ- দ্বিতস্তরীয় কর-স্ল্যাবের কার্যকরে সম্মত হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বাধীনতা দিবসের দিন ভাষণে দীপাবলির মধ্যে পরবর্তী প্রজন্মের জিএসটি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, "সরকার সাধারণ মানুষের উপর করের বোঝা কমাতে পরবর্তী প্রজন্মের জিএসটি সংস্কার আনবে। যা দেশবাসীর জন্য দীপাবলি উপহার হবে।" তিনি বলেন, নাগরিকদের সুবিধা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এই সংস্কার।

সংস্কারের প্রকৃত লক্ষ্য:

দাম নিয়ন্ত্রণ – মুদ্রাস্ফীতির চাপে বাড়তি খরচ সামলাতে সাধারণ মানুষের স্বস্তি।

প্রক্রিয়া সহজকরণ – কর প্রদানের প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও দ্রুত করা।

ভোগ বৃদ্ধি – কর কমলে বাজারে চাহিদা বাড়বে, অর্থনীতিতে গতি আসবে।

এককর নীতি শক্তিশালীকরণ – গোটা দেশে একই কর কাঠামো কার্যকর করা।

জনগণের উপকারিতা:

নিত্যপণ্যের দাম কমবে – খাদ্যপণ্য, গৃহস্থালি সামগ্রী ও পরিষেবার খরচ কমতে পারে।

ব্যবসায় সুবিধা – ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা সহজে কর দিতে পারবেন, সময় ও খরচ বাঁচবে।

অর্থনীতিতে চাঙ্গাভাব – উৎপাদন ও কর্মসংস্থান বাড়তে পারে।

দুর্নীতি রোধ – প্রযুক্তি-নির্ভর কর ব্যবস্থা ভুল হিসাব ও অনিয়ম কমাবে। 

আরও পড়ুন- মধ্যবিত্তদের জন্য সুখবর! নতুন আয়কর আইনে কী থাকছে