আজকাল ওয়েবডেস্ক: যদি নিয়মিতভাবে মিউচুয়াল ফান্ডে সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বা কিস্তিভিত্তিক বিনিয়োগের মাধ্যমে টাকা বিনিয়োগ করেন, তবে আপনার আর্থিক লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব। অনেকের লক্ষ্য থাকে একটি বড় অঙ্ক জমা করা—ধরুন, আগামী ১২ বছরে ১ কোটি টাকা। প্রশ্ন হল, এই লক্ষ্য পূরণ করতে হলে মাসে কত টাকা বিনিয়োগ করা প্রয়োজন?


আসলে, এটি নির্ভর করে বিনিয়োগ থেকে বার্ষিক কত শতাংশ রিটার্ন পাওয়া যাচ্ছে তার ওপর। রিটার্ন যত বেশি হবে, প্রতি মাসে বিনিয়োগের অঙ্ক তত কম হবে। আবার, রিটার্ন কম হলে লক্ষ্য পূরণে বেশি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।


কম্পাউন্ডিংয়ের জাদু
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কম্পাউন্ডিং বা চক্রবৃদ্ধি সুদ। এই ধারণা অনুযায়ী, প্রথম দিকে যে রিটার্ন পাওয়া যায়, তা পরবর্তীতে মূলধনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন রিটার্ন তৈরি করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই প্রক্রিয়ায় আপনার মূলধন দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তাই অনেকেই কম্পাউন্ডিংকে বিনিয়োগকারীদের সেরা বন্ধু বলে থাকেন। কিংবদন্তি বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেট বহুবার এর প্রশংসা করেছেন। এমনকি বিশিষ্ট বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন একে ‘বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।


এসআইপি কী?
সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বা SIP হল একটি বিনিয়োগ পদ্ধতি, যেখানে নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা সাপ্তাহিক, মাসিক বা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে নিয়মিতভাবে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা হয়। এই পদ্ধতি বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদে আর্থিক লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে। এছাড়া এখানে রুপি কস্ট অ্যাভারেজিং এর সুবিধা পাওয়া যায়, অর্থাৎ বাজার ওঠা-নামার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে গড় হয়ে যায়।

আরও পড়ুন:  ফিক্সড ডিপোজিটে সুদের হার তুলনা: কোন ব্যাঙ্ক দিচ্ছে সবচেয়ে বেশি মুনাফা?


১২ বছরে ১ কোটি: কত বিনিয়োগ প্রয়োজন?
একটি SIP ক্যালকুলেটর ব্যবহার করে হিসাব করলে নিম্নলিখিত চিত্র পাওয়া যায়—
যদি বিনিয়োগ থেকে ১০% বার্ষিক রিটার্ন পাওয়া যায়, তবে মাসে অন্তত ৩৬,০০০ বিনিয়োগ করতে হবে, তাহলেই ১২ বছরে ১ কোটি টাকা জমবে।
যদি বার্ষিক রিটার্ন হয় ১১%, তবে মাসে প্রয়োজন হবে প্রায় ৩৩,৫০০।
আর যদি রিটার্ন হয় ১২% প্রতি বছর, তবে মাসে প্রায় ৩১,২৫০ বিনিয়োগ করলেই লক্ষ্য পূরণ হবে।


কেউ যদি আগামী ১২ বছরে ১ কোটি টাকার লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান, তবে তাঁকে প্রতি মাসে ৩১,০০০ থেকে ৩৬,০০০ এর মধ্যে বিনিয়োগ করতে হবে। এই হিসাব কেবল তখনই কার্যকর হবে যখন বিনিয়োগ ডাবল ডিজিট অর্থাৎ ১০% বা তার বেশি বার্ষিক রিটার্ন দেবে।


সবচেয়ে বড় কথা, SIP দীর্ঘমেয়াদে শুধু মূলধন বৃদ্ধি করে না, বরং বিনিয়োগকারীদের শৃঙ্খলা গড়ে তোলে। নিয়মিত বিনিয়োগ, বাজারের ওঠানামা উপেক্ষা করা এবং কম্পাউন্ডিংয়ের শক্তিকে কাজে লাগানো—এই তিনটি বিষয় মিলেই একজন সাধারণ বিনিয়োগকারীকে আর্থিক লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে পারে।


তাই যারা আগামী এক দশকেরও কম সময়ে বড় অঙ্ক গড়ে তুলতে চান, তাঁদের জন্য SIP একটি কার্যকর ও সহজ উপায়।