আজকাল ওয়েবডেস্ক: এবারের দীপাবলি ও ধনতেরাসে সোনার বাজারে বড় ধাক্কা লেগেছে। ভারতীয় বাজারে সোনার চাহিদা গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। উৎসবের সিজনে সাধারণত গয়না কেনাকাটার সেরা সময় হিসেবে ধরা হয়, কিন্তু এই বছর উচ্চমূল্য এবং অর্থনৈতিক চাপের কারণে গ্রাহকরা হাত গুটিয়ে নিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পতনের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ রেকর্ডব্রেকিং সোনার দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম টানা বাড়তে থাকায় ভারতে প্রতি ১০ গ্রাম সোনার মূল্য প্রায় এক লাখ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। ফলে মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের জন্য এটি আর সহজলভ্য থাকছে না। কলকাতা, মুম্বই, দিল্লি সহ বড় শহরগুলিতে খুচরা বাজারে গয়নার বিক্রি ২০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে।
আরও পড়ুন: বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর কেন্দ্রের তাপমাত্রা, চিন্তার ভাঁজ বিজ্ঞানীদের কপালে
এছাড়া খাদ্যপণ্য, জ্বালানি ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ খরচে কাটছাঁট করছেন। পরিবারগুলো এখন অগ্রাধিকার দিচ্ছে প্রয়োজনীয় জিনিসে, ফলে সোনা বা বিলাসী পণ্যের দিকে খরচ কমেছে।
দেশের বড় বড় জুয়েলারি সমিতি জানাচ্ছে, গ্রাহকদের ক্রয়ক্ষমতার পরিবর্তন তাদের ব্যবসায় সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। অনেক দোকানদার বিভিন্ন অফার ও ছাড় ঘোষণা করলেও তাতে প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি।
একজন শীর্ষ বিক্রেতা বলেন, আগে যেখানে গ্রাহকরা ৫০ গ্রাম সোনার গয়না কিনতেন, এখন তারা ২০ থেকে ২৫ গ্রামে সীমাবদ্ধ থাকছেন। উৎসবের আনন্দ আছে, কিন্তু বাজেট অনেক ছোট।”

তরুণ প্রজন্ম এখন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মিউচুয়াল ফান্ড, শেয়ারবাজার এবং ডিজিটাল গোল্ডের দিকে ঝুঁকছে। ফলে সোনার ঐতিহ্যবাহী চাহিদা কিছুটা বদলাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘমেয়াদে এই প্রবণতা সোনার বাজারে প্রভাব ফেলতে পারে। অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পতন সাময়িক। ভারতের মতো দেশে সোনা শুধু অলঙ্কার নয়, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বিনিয়োগের প্রতীক। বিয়ের সিজনে আবারও চাহিদা বাড়তে পারে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বাজারে যদি সোনার দাম কিছুটা কমে, তবে ভারতীয় বাজারেও বিক্রি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, উৎসবের সিজনে সোনার বাজারে এবারের ধাক্কা ব্যবসায়ীদের জন্য হতাশাজনক। ক্রেতারা খরচে সংযমী, জুয়েলার্সরা চিন্তিত, আর বাজার এখন তাকিয়ে আছে বিয়ের সিজন ও দামের সম্ভাব্য পতনের দিকে। ক্রেতারা এই সময় সোনা কেনার দিকে বেশি জোর দিতে চাইছেন না। তারা এই সময় অন্য দিকে এই টাকা বিনিয়োগে মন দিয়েছেন। সেখানে ফিক্সড ডিপোজিট বা মিউচুয়াল ফান্ড তাদের নজরে রয়েছে। যদিও তারা সোনা কিনছেন তবে সেই সোনার দাম তারা কম দেখে তবেই কিনছেন। যদি এই পরিস্থিতি উন্নতি না হয় তাহলে সেখানে সোনার ব্যবসায়ীদের এবার মাথায় হাত হবে বৈকি।

