আজকাল ওয়েবডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্রিপ্টো সপ্তাহ’-এর প্রাক্কালে বিটকয়েনের দাম রেকর্ড ভেঙে নতুন সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছেছে। CoinMarketCap-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিটকয়েনের মূল্য দাঁড়িয়েছে ১২০,৯৩৮.৯৫, যা গত সাত দিনে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে বিটকয়েনের বাজার মূলধন এখন ২.৪ ট্রিলিয়ন, যা গুগলের ২.১৯ ট্রিলিয়ন বাজার মূলধনকে অতিক্রম করে এক লাফে বিশ্বের ৬ষ্ঠ বৃহত্তম সম্পদে পরিণত হয়েছে।
এই উত্থানের পেছনে মূল কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা দেখছেন ট্রাম্পের প্রো-ক্রিপ্টো অবস্থান, ETF-এ প্রবল বিনিয়োগ প্রবাহ এবং বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থার ট্রেজারিতে বিটকয়েন সংরক্ষণের প্রবণতা। BuyUcoin-এর সিইও শিবম ঠাকরাল বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্রিপ্টো সপ্তাহ’ নিয়ে উত্তেজনা এবং প্রতিষ্ঠিত বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ এই উত্থানের বড় চালিকা শক্তি।’’ শুধু বিটকয়েন নয়, অন্যান্য ক্রিপ্টো মুদ্রাও উল্লেখযোগ্য লাভ দেখাচ্ছে। Ethereum (ETH) ১৮.২৬% বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩,০৪৪.৯৩-এ, Solana (SOL) ১০.০৩% বেড়ে ১৬৭.২৮, এবং Dogecoin (DOGE) ১৭.৫০% বেড়ে হয়েছে ০.২০৫০। সবচেয়ে বড় চমক দিয়েছে Stellar (XLM), যা ১০০.৭৭% লাফিয়ে ০.৫০৪৯-এ পৌঁছেছে। XRP-ও ২৯.৪৪% বেড়ে ২.৯৩-এ পৌঁছেছে, যা সম্ভবত আইনি স্বচ্ছতা ও বাজার আস্থার কারণে।
এই সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসে ‘ক্রিপ্টো সপ্তাহ’ পালিত হচ্ছে, যেখানে Clarity Act, GENIUS Act ও Anti-CBDC Surveillance Act-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিল গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই আইনগুলি স্টেবলকয়েনকে স্বীকৃতি দেওয়া, কেন্দ্রীয় ডিজিটাল মুদ্রা প্রতিরোধ এবং ক্রিপ্টো নিয়ন্ত্রণের স্পষ্ট কাঠামো তৈরি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। Bitget Research-এর প্রধান বিশ্লেষক রায়ান লি জানান, ১২০,০০০ ছাড়িয়ে যাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। তিনি বলেন, “ETF-এ শক্তিশালী প্রবাহ, কর্পোরেটদের বিটকয়েনে আস্থা এবং ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের ইতিবাচক মনোভাব—সব মিলিয়ে বাজারে স্থিতিশীলতা আসতে পারে।” তিনি আশা করছেন Q3-তে বিটকয়েনের গড় মূল্য ১২৫,০০০ থাকবে।
আরও পড়ুন: পুতিনের প্রতি ক্ষোভে ইউক্রেনকে প্যাট্রিয়ট মিসাইল দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, আসছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা: ট্রাম্প
Ethereum-এর মূল্যও এখন পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ—৩,০৪৮.২৩। বিশেষজ্ঞদের মতে, DeFi প্রকল্পে আগ্রহ, Pectra আপগ্রেড এবং ETF চাহিদা এই বৃদ্ধির মূল উৎস। তবে বাজার এখনও অস্থির থাকতে পারে, বিশেষ করে বিটকয়েনের দামে সংশোধন বা নীতিমালার পরিবর্তনের আশঙ্কা রয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত ২০২৫ সালে বিটকয়েন ২৯% বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট ক্রিপ্টো বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৩.৭৮ ট্রিলিয়ন। যদিও বাজারে উচ্চ উত্তেজনা বিরাজ করছে, BuyUcoin-এর শিবম ঠাকরাল সতর্ক করে বলেন, “ক্রিপ্টো ফিয়ার অ্যান্ড গ্রীড ইনডেক্স ৭০ ছুঁয়েছে, যা বাজার অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দেয়।” তবে ‘ক্রিপ্টো প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে ট্রাম্পের নতুন অবস্থান বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে এনেছে। বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, স্পষ্ট নিয়মনীতি এবং নীতিগত সহায়তা পেলে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ আরও বাড়বে। যদিও সাময়িক অস্থিরতা থাকতে পারে, তবে বাজারের সামগ্রিক ধারাবাহিকতা আশাব্যঞ্জক।
বিটকয়নের দাম এখন অনেকটাই বেড়েছে, আর এটা বিশেষভাবে চোখে পড়ার মতো কারণ দুনিয়ার অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা থাকলেও এর দাম বাড়ছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে "ক্রিপ্টো প্রেসিডেন্ট" বলে দাবি করেছেন এবং ক্রিপ্টোকারেন্সিকে তিনি জোরালোভাবে সমর্থন করছেন। এই কারণে অনেক বিনিয়োগকারী এখন আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। ট্রাম্প বলছেন, এই খাতকে বাড়াতে হলে নতুন নিয়ম-কানুন তৈরি করা দরকার। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিটকয়নের দাম এখন যেমন বাড়ছে, তা হঠাৎ করে কমেও যেতে পারে। তাই বিনিয়োগকারীদের সাবধানে চলার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দুনিয়ার অর্থনীতি আর সরকারের নতুন নিয়ম-কানুনের খবর ঠিকমতো নজরে রাখলে, বাজারে কী হতে পারে তা কিছুটা আঁচ করা যাবে।
