মিল্টন সেন, হুগলি, ২৪ জুলাই: কিশোরীর অতৃপ্ত আত্মা নাকি ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায়। ভর করছে স্থানীয় কিশোরীদের উপর। অসুস্থ হয়ে পড়ছেন কিশোরীরা। নানা রকম অস্বাভাবিক আচরণ করছেন তাঁরা। পরিস্থিতি জোরালো হতে দেখে, কুসংস্কার দুর করতে উদ্যোগী হয়েছেন খোদ মহকুমা শাসক। বছর পাঁচেক আগে অপমৃত্যু হয় স্থানীয় এক ষোড়শীর। এই ঘটনায় তীব্য চাঞ্চল্য।
স্থানীয়দের বিশ্বাস এক অশরীরী আত্মা নাকি ঘুরে বেড়াচ্ছে এলাকায়। ভূত ভর করছে এলাকার কিশোরীদের উপর। ঘটনার জেরে কুসংস্কারে পরিপূর্ণ পরিবেশ। চলছে অনলাইনে ঝাড়ফুঁক! অবাক করা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকদিন ধরেই এসব কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল। এখনও বেশ থমথমে, ভয়ের পরিবেশ হুগলি চুঁচুড়া পুরসভার ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের ছাতাগলি বড়ুয়াপাড়া এলাকায়। যদিও ঘটনার সূত্রপাত মাস দেড়েক আগে। কিন্তু যাকে কেন্দ্র করে গোটা গল্প তাঁর মৃত্যু হয়েছে বছর পাঁচেক আগে। অপমৃত্যু হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে ষোলো বছরের এক কিশোরীর। ঘটনার গোড়ার দিকে হঠাৎ করেই প্রতিবেশি এক কিশোরীর আচরণে অস্বাভাবিকতা দেখা যায়।

ওই কিশোরীর পরিবারের সদস্য দাবি করেন তাঁদের মেয়েকে ভূতে ধরেছে। পাঁচ বছর আগের ওই মৃত কিশোরীর আত্মা নাকি ভর করেছে। এবং সেই কিশোরী নাকি তাঁর পরিবারকে জানিয়েছে গয়ায় গিয়ে পিন্ড দিলে তবেই তাঁর মুক্তি হবে। একইভাবে এলাকার আরও এক কিশোরীও অসুস্থ। সেও অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছে। দাবি করেছেন পরিবারের সদস্যরা। সেখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত।
এরপর শুরু হয় মৃত কিশোরীর মা বাবার সঙ্গে প্রতিবেশি ওই পরিবারের অশান্তি। অসুস্থ কিশোরীর ক্ষুব্ধ পরিবার চড়াও হয় পাঁচ বছর আগে গত হওয়া কিশোরীর বাড়িতে। সম্প্রতি স্থানীয় যে কিশোরী অসুস্থ হয়েছে তাঁর পারিবারের দাবি,ভূত তাড়াতে তারা ঝাড়ফুঁক করিয়েছেন। এমনকি চিকিৎসাও করানো হয় কিশোরীকে। তাঁর অভিযোগ, প্রতিবেশী ওই মেয়ের মৃত্যুর পর ঠিকমত শ্রাদ্ধশান্তি করেনি পরিবার। তাই এলাকায় এমন ঘটনা ঘটছে। যদিও মৃত কিশোরীর মা বাবা জানান, তাঁরা মেয়ের মৃত্যুর পর থেকে ওই বাড়িতেই বসবাস করছেন। কখনও কোনও সমস্যা হয়নি।

প্রতিবেশিদের অনেকেই অবশ্য জানিয়েছেন, কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে স্থানীয় কয়েকজন এমন করছে। ভূত প্রেত বলে বাস্তবে কিছু নেই। পরিস্থিতি ঘোরালো হচ্ছে দেখে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন সদর মহকুমা শাসক স্মিতা সান্যাল শুক্লা।
আরও পড়ুনঃ 'সুখ দিতে পারো না বেঁচে থেকে লাভ কী?' শরীরী খিদে মেটাতে ব্যর্থ স্বামীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন স্ত্রী
পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে ষোলো নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অর্পিতা সাহাকে সঙ্গে নিয়ে এলাকায় গিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে কুসংস্কার দূর করতে উদ্যোগী হতে বলেন।
সেই অনুযায়ী কাউন্সিলর অর্পিতা বুধবার ছাতাগলিতে গিয়েছিলেন ওই পরিবারগুলির সঙ্গে কথা বলতে। এদিন অর্পিতা সাহা বলেছেন, একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে। মহকুমা শাসকের নির্দেশে তিনি ওই এলাকায় গিয়েছিলেন। একটা বাচ্চা মেয়ে মারা গিয়েছিল। তাও অনেকদিন আগে। পাশের বাড়ির একটি মেয়েকে নাকি ভুতে ধরেছে। এটা ঠিক নয়। হয়তো কোনও কারনে বাচ্চাটা অসুস্থ হয়েছে। নিজেদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। তিনি দুটো পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। মেয়ের মৃত্যুর পর পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম সবই করেছে কিশোরীর পরিবার। এটা একটা কুসংস্কার।পাড়া-প্রতিবেশীরা অধিকাংশই ওই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে। যদিও এটা একটা খুব ভালো দিক।
