আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেসের ঐক্যবদ্ধ চেহারা জেলাবাসীর সামনে তুলে ধরতে এবং তৃণমূল পরিচালিত মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে 'ঠান্ডা লড়াই' নিরসনের জন্য অবশেষে পদক্ষেপ নিল তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব। 


শনিবার সন্ধে থেকে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত কলকাতার একটি অফিসে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের ২৩ জন তৃণমূল সদস্যকে নিয়ে একটি বিশেষ বৈঠক করেন তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কুশলী সংস্থা এবং দলের শীর্ষ কয়েকজন পদাধিকারী।


সূত্রের খবর এই বৈঠকে তৃণমূলের 'বিক্ষুব্ধ' সদস্যরা জেলা পরিষদের সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা এবং শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শফিউজ্জামান শেখের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগড়ে দেন। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ থেকে বিক্ষুব্ধ তৃণমূল জেলা পরিষদ সদস্যদেরকে তাঁদের অভিযোগগুলোর দ্রুত নিরসন করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে বৈঠকের বিষয় নিয়ে জেলা পরিষদের কোনও সদস্য সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলতে রাজি হননি। 


সূত্রের খবর, শনিবারের এই বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলা থেকে ২১ জন এবং বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা থেকে দু'জন জেলা পরিষদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। সন্ধে আটটা থেকে এই বৈঠক শুরু হয়ে রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ বৈঠক শেষ হয় বলে জানা গিয়েছে। 


৭৮ আসন বিশিষ্ট মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদে গত নির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটের মোট ৭২ জন জিতেছিলেন। ৮ জন বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে জিতলেও পরবর্তীকালে একজন কংগ্রেস সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় এখন মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের তৃণমূলের মোট সদস্য সংখ্যা ৭৩ জন। 


সূত্রের খবর, জেলা পরিষদে তৃণমূল সদস্যদেরকে নিয়ে যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ রয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে কিছু 'পোস্ট' করা নিয়ে জেলা পরিষদ সদস্যা শাহনাজ বেগমের সঙ্গে সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানের 'মতানৈক্য' হয়।  অভিযোগ এরপরই সভাধিপতি কারও মতামত না নিয়ে একতরফাভাবে শাহনাজ বেগমকে ওই গ্রুপ থেকে অপসারিত করে দেন। এরপরই জেলা পরিষদের একাধিক সদস্য সভাধিপতির এই মনোভাবের প্রতিবাদ করেন এবং তাঁরা অভিযোগ করেন গ্রুপটিতে সভাধিপতি এবং শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ ছাড়া বাকি কারও মতামত প্রকাশের জায়গা নেই। দু'জনে গ্রুপটি 'দখল' করে রেখেছেন। 


সূত্রের খবর, এরপর ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষকের সঙ্গে অন্য বেশ কয়েকজন জেলা পরিষদ সদস্যের উত্তপ্ত কথা কাটাকাটি হয়। এরপরই একে একে প্রায় ২৩ জন তৃণমূল জেলা পরিষদ সদস্য ওই গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে যান। সভাপতির ব্যবহারে 'অপমানিত' শাহনাজ  বেগম কিছুদিন আগে দল ত্যাগের মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 


 এরপর থেকেই তৃণমূল নেতৃত্বের উপর মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ সদস্যদের ক্ষোভ নিরসনের জন্য চাপ বাড়ছিল। সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার অন্তর্গত জেলা পরিষদ সদস্যরা সাংসদ খলিলুর রহমানের বাড়িতে একত্রিত হয়ে সর্বসম্মতিক্রমে কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। 


জেলা পরিষদ সদস্যদের মনোভাব আঁচ করার পরেই আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে দলের ঐক্যবদ্ধ চেহারা জেলাবাসীর সামনে তুলে ধরতে যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে মাত্র কয়েক ঘন্টার নোটিসে ২৩ জন সদস্যকে কলকাতায় ডেকে পাঠানো হয়। তৃণমূল সূত্রের খবর, এই বৈঠকে প্রথমে অভিষেক ব্যানার্জির উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও জরুরি কাজ থাকায় শনিবার রাতে তিনি বৈঠকে থাকতে পারেননি। তাঁর পরিবর্তে দলের বেশ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা বৈঠকে উপস্থিত থেকে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ সদস্যদের বিভিন্ন অভিযোগের কথা শোনেন।


 জেলা পরিষদের এক সদস্য বলেন, তৃণমূল সদস্যদের ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটির আর কোনও গুরুত্ব নেই। সেখানে শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ এবং সভাধিপতি সম্ভবত তাঁদের বিভিন্ন  কাজের ফিরিস্তি দেন। কিন্তু তা দেখার মত কোনও সদস্য সেখানে নেই। তিনি আরও অভিযোগ করেন, বর্তমানে মুর্শিদাবাদ জেলায় কংগ্রেস-বিজেপি বা সিপিএম দলের বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে না। নিজেদের দলের সদস্যদের বিরুদ্ধেই লড়াই করতে হচ্ছে, যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। 

 

গোটা বিষয়টি নিয়ে শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ এবং সভাধিপতির প্রতিক্রিয়ার জন্য তাঁদের ফোন করা হলেও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি। 

 

&t=19s
তৃণমূল কংগ্রেসের জঙ্গিপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা দলের সাংসদ খলিলুর রহমান বলেন," দলের সদস্যদের ক্ষোভ নিরসনের জন্য দলের শীর্ষ নেতৃত্ব হস্তক্ষেপ করেছে এটি একটি খুব ভাল দিক। গোটা বিষয়টি দলের নেতৃত্ব দেখছে। আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ ভাবেই আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ জেলায় লড়াই করব।"