মিল্টন সেন, হুগলি: চন্দননগরে রাশিয়ান গুপ্তচর! সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয়, তারপর বিয়ে। আর সেই বিয়ের পরই গুপ্তচরবৃত্তির আশঙ্কা চন্দননগরের বসু পরিবারের। রাশিয়ান তরুণী চন্দননগরের বধূ ভিক্টোরিয়া জিগালিনার বিরুদ্ধে এবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হলেন তাঁর স্বামী সৈকত বসু। অভিযোগ, তাঁদের সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন ভিক্টোরিয়া। অভিয়োগ পেয়েই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে লুক আউট নোটিশ জারি করার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
জানা গিয়েছে, চন্দননগর পুরনিগমের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীপল্লীর বাসিন্দা সৈকত বসু। কয়েক বছর আগে রুশ যুবতী ভিক্টোরিয়া জিগলিনার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। এটি সৈকতের দ্বিতীয় বিবাহ। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সৈকত তথ্যপ্রযুক্তি সেক্টরে কাজ করেন। অনেক দিন বিদেশে ছিলেন। রাশিয়ান যুবতীকে বিবাহ করার পর চন্দননগরের বাড়িতে কিছু দিন ছিলেন। আগেও একবার বাড়ি থেকে চলে গিয়েছিলেন ভিক্টোরিয়া। ভারতীয় দূতাবাসে সৈকতের গোটা পরিবারকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। সৈকতের অভিযোগ করেছেন, তাঁর স্ত্রী রুশ গুপ্তচরবৃত্তি করতেন।
এদিকে এই বিষয়ে কিছুই জানতেন না বলে দাবি করেছেন মেয়র রাম চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “চন্দননগরে থাকত রাশিয়ান গুপ্তচর! জানা ছিল না।“ তিনি জানিয়েছেন, চন্দননগরের নাম এবং রাশিয়ান গুপ্তচর এর কথা তিনি সংবাদমাধ্যম থেকেই জানতে পেরেছেন।

চন্দনননগরের ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রঞ্জিত জানিয়েছেন, তিনি ওই পরিবার বা বধূকে চিনতেন না। গোটা বিষয়টা তিনি সংবাদ মাধ্যম থেকে জেনেছেন।
প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয়। সেখান বন্ধুত্ব হয়ে শেষ পর্যন্ত বিয়ে। ২০১৭ সালে রাশিয়ান বান্ধবীকে বিয়ে করেছিলেন হুগলির চন্দননগরের বাসিন্দা সৈকত। তাঁর দাবি, বিয়ের পর তিনি জানতে পারেন, স্ত্রী ভিক্টোরিয়া রাশিয়ার এক প্রাক্তন গুপ্তচরের মেয়ে। এরপরই শুরু হয় অশান্তি। সৈকতের বাবা সমীর বসু প্রাক্তন নৌসেনা অফিসার। অভিযোগ, ভারতীয় সেনার সদর দপ্তরে বারবার যেতে চান ভিক্টোরিয়া। কিন্তু তাঁর পারিবারিক ইতিহাস জানার পর সাড়া দেয়নি বসু পরিবার। অভিযোগ এরপরই নানাভাবে ওই পরিবারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা করেন তরুণী।
আরও পড়ুন: বিশ্বের একমাত্র দেশ যার নিজের কোনও সেনা নেই, নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া হয় কীভাবে?
কয়েকদিন আগে কর্ণাটকের উপকূলবর্তী পর্যটন শহর গোকর্ণয় একটি আশ্চর্য ঘটনা নজরে আসে। রামতীর্থ পাহাড়ের একটি দুর্গম ও বিপজ্জনক গুহা থেকে এক রাশিয়ান মহিলা এবং তাঁর দুই শিশু কন্যাকে উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ। জানা গিয়েছে ৪০ বছর বয়সী যুবতীর নাম নিনা কুটিনা। পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁরা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বিচ্ছিন্নভাবে ওই গুহায় বসবাস করছিলেন। গত ৯ জুলাই বিকেল ৫টা নাগাদ রুটিন টহলদারির সময়ে পুলিশ তাঁদের খুঁজে পায় এবং উদ্ধার করে।
পুলিশ, ওয়েলফেয়ার অফিসার এবং আশ্রমের প্রধানদের নিয়মিত জিজ্ঞাসাবাদের সময়, রুশ মহিলা নিনা কুটিনা স্বীকার করে নেন য়ে তাঁর ভিসা এবং পাসপোর্ট গুহায় হারিয়ে যেতে পারে। গোকর্ণ পুলিশ এবং বন বিভাগের কর্মকর্তাদের যৌথ অনুসন্ধান অভিযানের ফলে কুটিনার পাসপোর্ট এবং ভিসা উদ্ধার হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দেখা যায় যে, নিনা মূলত ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল বৈধ ব্যবসায়িক ভিসায় ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। ২০১৮ সালের ১৯ এপ্রিল গোয়ার পানাজিতে ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস বা FRRO একটি বহির্গমন অনুমতিপত্র জারি করা হয়। রেকর্ড অনুসারে, নিনা পরবর্তীতে নেপাল ভ্রমণ করেন এবং ২০১৮ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ফের ভারতে আসেন। ফলে প্রমাণিত যে, তিনি অনুমোদিত সময়সীমার বেশি সেখানে ছিলেন।
নিজস্ব ছবি।
