আজকাল ওয়েবডেস্ক: দুই বন্ধুর চোখে স্বপ্ন ছিল দেশের সেনাবাহিনীর পোশাক পরে শত্রু দেশের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে লড়াই করার। তাতে যদি বীর শহিদের মৃত্যু হয়, তা হবে সব থেকে গর্বের। দু'জনের সেই স্বপ্ন পূরণ হওয়ার আগেই, ভারতীয় সেনার 'অগ্নিবীর' বাহিনীতে যোগ দেওয়ার আগে, শেষ মুহূর্তের শারীরিক প্রশিক্ষণ করতে গিয়ে ভয়াবহ এক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল মুর্শিদাবাদের এক যুবকের। এই ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে অপর এক যুবক বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

মর্মান্তিক এই ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার সকালে মুর্শিদাবাদের সুতি থানার অন্তর্গত চাঁদেরমোড় টোল প্লাজার কাছে, ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত যুবকের নাম রাহুল সিংহ (২১)। তাঁর বাড়ি সুতি থানার অন্তর্গত মুরালিপুকুর গ্রামে। রাহুল ঔরঙ্গাবাদ ডিএন কলেজের ইংরেজি বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। আগামী ২৭ ডিসেম্বর তাঁর ভারতীয়  সেনার 'অগ্নিবীর' বাহিনীতে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। 

এই ঘটনায় গুরুতর জখম হয়েছেন সুদীপ দাস নামে সুতির পারুলিয়ার অপর এক যুবক। সুদীপ জঙ্গিপুর কলেজের রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ওই যুবকের নামও 'অগ্নিবীর'-এর তালিকায় রয়েছে বলে তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে। 


 
'অগ্নিবীর' বাহিনীতে যোগদানের দিন এগিয়ে আসায় গত কয়েকদিন ধরেই সুদীপ এবং রাহুল গ্রামের বিভিন্ন মাঠে নিয়মিত দৌড়নো এবং অন্যান্য অনুশীলন করছিলেন। কিন্তু গত দু'দিন ধরে তাঁরা মাঠে অনুশীলন না করে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে 'মর্নিং ওয়াক' এবং 'জগিং' করতেন। 

বুধবার সকালে দুই যুবক যখন বাড়ি থেকে সুতির চাঁদেরমোড় টোল প্লাজার দিকে ১২ নম্বর জাতীয় সড়কের দিকে যাচ্ছিলেন সেই সময় অজ্ঞাত পরিচয়ের একটি গাড়ি এসে দুই যুবককে পেছন থেকে ধাক্কা মারে। এই ঘটনায় গুরুতর জখম রাহুল এবং সুদীপ দু'জনেই সংজ্ঞাহীন হয়ে রাস্তার ধারে লুটিয়ে পড়েন। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ তাঁদেরকে উদ্ধার করে জঙ্গিপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাহুলকে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। সুদীপ দাসের অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল থেকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসকরা রেফার করে দিয়েছেন। 

আহত সুদীপ দাসের কাকা রতন কুমার দাস বলেন, "সুদীপ এবং রাহুল দু'জনেই 'অগ্নিবীর' বাহিনীতে যোগদান করার জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। আগামী ২৭ ডিসেম্বর রাহুলের 'অগ্নিবীর' বাহিনীতে যোগদান করার কথা এবং এই কারণে  বৃহস্পতিবার সকালেই তাঁর বাড়ি থেকে রওনা হওয়ার কথা ছিল।"
 
তিনি জানান, "বুধবার ভোরে দুই বন্ধু শেষবারের মতো জাতীয় সড়ক ধরে শারীরিক কসরত করছিলেন। সেই সময় একটি গাড়ি দু'জনকে পেছন থেকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায়। দীর্ঘক্ষণ দু'জন রাস্তার ধারে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন। পরে স্থানীয় বাসিন্দা এবং পুলিশ দু'জনকে দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করায়।"
 
সুতি থানার এক আধিকারিক বলেন, "প্রাথমিক তদন্তে আমাদের অনুমান কোনও একটি ছোট গাড়ির ধাক্কায় এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সূত্রের খবর এদিন সকালে ওই এলাকায় কুয়াশা না থাকায় দৃশ্যমানতার সমস্যা ছিল না।" পুলিশের অনুমান ,গাড়ির চালক সম্ভবত ঘুমিয়ে পড়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি দু'জনকে ধাক্কা মেরেছে। এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে ঘাতক গাড়িটিকে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।