মিল্টন সেন, হুগলি: কোনও রাজনৈতিক কারণে নয়। জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই খুন করা হয়েছে কানাইপুরের তৃণমূল কংগ্রেস নেতা পিন্টু চক্রবর্তী ওরফে মুন্নাকে। খুন করার জন্য তিন লক্ষ টাকা দিয়ে সুপারি কিলার ভাড়া করা হয়েছিল। তৃণমূল নেতাকে কাটারি দিয়ে নৃশংস ভাবে খুন করেছিল ভাড়াটে দুই খুনিই। পুলিশি তদন্তে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে কানাইপুর হত্যাকাণ্ডে। দুই খুনিকে গ্রেপ্তার করেথে উত্তরপাড়া থানার পুলিশ।
শনিবার দুপুরে উত্তরপাড়া থানায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে গোটা ঘটনা তুলে ধরেন ডিসিপি শ্রীরামপুর অর্নব বিশ্বাস। এদিন তিনি বলেন, “জমি বিবাদের জেরেই এই খুন বলে এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে। এর পিছনে রাজনৈতিক কোনও উদ্দেশ্য এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভাড়াটে খুনি ব্যবহার করে পরিকল্পনামাফিক খুন করা হয়েছে। এর পিছনে আরও কেউ আছে কি না সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। খুনের ঘটনাকে পরিণতি দিতে উত্তর ২৪ পরগণার বারাসাত এবং শাসনের ভাড়াটে খুনিকে কাজে লাগানো হয়।
পুলিশ সূত্রে খবর, কানাইপুরেরই বিশ্বনাথ দাস ওরফে বিশা তিন লক্ষ টাকা দিয়ে ভাড়া করেন শাসনের বিশ্বজিৎ প্রামাণিক এবং বারাসাতের দীপক মণ্ডলকে। বিশা একদা কোন্নগড় এলাকার ত্রাস কুখ্যাত দুষ্কৃতী বাঘার ভাই। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার দু’দিন আগে ভাড়াটে খুনিরা বিশার বাড়িতে এসে উঠেছিল। সময় নিয়ে এলাকা রেইকি করে। গত বুধবার রাতে তাঁরই অফিসের সামনে কাটারি দিয়ে কুপিয়ে পিন্টু চক্রবর্তী ওরফে মুন্নাকে খুন করে। খুনের পর কিছুটা হেঁটে, কিছুটা দৌড়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। কিছুটা দূরে অপেক্ষা করছিল বিশা। দু’জনকে সেখান থেকে স্কুটারে করে স্টেশনে পৌঁছে দেয় সে।
আরও পড়ুন: বিজেপিকে আক্রমণ করতে গিয়ে এ কী করে বসলেন রাহুল গান্ধী! মৃত নেতাকে নিয়ে টানাটানি শুরু করলেন
তদন্তে নেমে প্রথমেই ঘটনাস্থল এবং সংলগ্ন এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্তকারীরা। ফুটেজে দেখা যায় আততায়ীরা কাটারি দিয়ে কুপিয়ে খুন করছে। খুনের পর পায়ে হেঁটে পালিয়ে যাচ্ছে, সেটাও দেখা যায়। পাশাপাশি, দু’জন এলাকা রেইকি করছে সেটাও দেখা যায়। পুলিশ লক্ষ করে সেই রেইকির সময় আততায়ীরা ক্রমাগত ফোনে কথা বলছিল। সেটা দেখে শুরু হয় খোঁজ। ওই সময়ে ফোনের লোকেশন ট্র্যাক করে দেখা হয় কোথায় কোথায় ওই এলাকা থেকে ওই সময় ফোন যাচ্ছিল। এবং কোন কোন নম্বর থেকে কোন কোন নম্বরে ফোন করা হয়েছে। ট্র্যাক করে বেশ কয়েকটি নম্বর আসে পুলিশের হাতে। ফোন নম্বরগুলি নিয়ে তদন্ত চালানোর সময় পুলিশ লক্ষ করে একটি নম্বর বন্ধ ছিল। যে নম্বর থেকে ক্রমাগত ফোন হয়েছে ঠিক ওই সময়ে। ট্র্যাক করে পুলিশ জানতে পারে বন্ধ ওই নম্বর কোন এলাকায় রয়েছে।
সেই তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাতে পুলিশ অভিযান চালায়। বেলঘরিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয় মূল চক্রী বিশাকে। ঘটনার পর দুই সুপারি কিলারকে স্কুটারে চাপিয়ে রেল স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে বিশা বেলঘরিয়া গিয়ে বোনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। ওই দিনই তল্লাশি চালিয়ে বারাসাতের একটি হোটেল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সুপারি কিলার দু’জনকে। ধৃতদের রবিবার শ্রীরামপুর আদালতে পেশ করা হবে। পরবর্তী সময়ে ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে চলবে জিজ্ঞাসাবাদ। পুলিশ জানার চেষ্টা করে শুধু বিশা, না কি এর নেপথ্যে জড়িত রয়েছে আরও কেউ।
ছবি পার্থ রাহা।
