আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এবার আর লড়াই শুধু দেওয়াল লেখায় সীমাবদ্ধ নয় বা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মধ্যেও হবে না। গত কয়েক বছরে গোটা দেশের সঙ্গে এই রাজ্যেও 'সমাজ মাধ্যম প্রভাবী'দের প্রভাব বৃদ্ধির কারণে রাজনৈতিক তথ্যভিজ্ঞ মহলের ধারণা মেঘনাদের মত অনেক ডিজিটাল যোদ্ধাও পর্দার আড়ালে থেকে রাজনৈতিক লড়াইয়ে বড় ভূমিকা নিতে চলেছেন।
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির উদ্যোগে ইতিমধ্যে রাজ্যের শাসক দল 'আমি বাংলার ডিজিটাল যোদ্ধা' নামে একটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। দলের তরফ থেকে এই কর্মসূচির জন্য একটি ওয়েবসাইটও খোলা হয়েছে। যারা তৃণমূলের ডিজিটাল যোদ্ধা হতে চান, ওই ওয়েবসাইটে গিয়ে নিজেদের নাম, ফোন নম্বর ,জেলা এবং বিধানসভা কেন্দ্রের নাম লিখে জমা দিতে হচ্ছে।
তৃণমূলের পাশাপাশি রাজ্য বিজেপির তরফ থেকে 'নমো যুব যোদ্ধা' নামেও একটি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। বিজেপি যেমন তাদের ডিজিটাল যোদ্ধাদের মাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেসের বিভিন্ন 'নেগেটিভ' দিক সমাজ মাধ্যমে থাকা কোটি কোটি লোকেদের জানানোর চেষ্টা করছে, তেমনই সমাজ মাধ্যমকে ব্যবহার করে যারা প্রতিনিয়ত বাংলা বিরোধী কুৎসা -অপপ্রচার করছে ডিজিটাল যোদ্ধাদের ব্যবহার করে তাদের মোকাবিলা শুরু করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।
রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের বক্তব্য, বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই কেবল রাজপথ -সংসদে নয়। অভিষেক ব্যানার্জির নির্দেশ ,কুৎসার জবাব সমাজমাধ্যমেও দিতে হবে। তৃণমূল সূত্রের খবর, আপাতত তাদের লক্ষ্য বুথ পিছু কমপক্ষে ১০ জন ডিজিটাল যোদ্ধা তৈরী করা। রাজ্যে শাসক দল ডিজিটাল যোদ্ধা কর্মসূচি শুরু করার প্রথম ২৪ ঘন্টার মধ্যেই প্রায় পঞ্চাশ হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছিল।
তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির ডাকে সাড়া দিয়ে এখনও পর্যন্ত সব থেকে বেশি ডিজিটাল যোদ্ধা হওয়ার আবেদন জমা পড়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে।
একদা কংগ্রেস 'গড়' হিসেবে পরিচিত এই জেলায় গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস তিনটি আসনই দখল করেছে। গত বিধানসভা নির্বাচনে ২২টির মধ্যে ২০টি আসন থেকে জিতেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীরা। এবার তাদের লক্ষ্য ২২ টি আসন থেকেই জেতা।
তাই বিধানসভা নির্বাচনের দিন ঘোষণা না হলেও এখন থেকেই ডিজিটাল যোদ্ধাদের কাজ কিন্তু শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যেই মুর্শিদাবাদ তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে বাছাই করা কয়েকশো ডিজিটাল যোদ্ধাদের এক প্রস্থ প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলা যুব সভাপতি ভীষ্মদেব কর্মকার বলেন,' রাজ্য থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ জেলায় সবথেকে বেশি ডিজিটাল যোদ্ধা আমাদের দলীয় পোর্টালে নাম লিখিয়েছেন। কয়েকদিন আগেও এই সংখ্যা ২৮ হাজারের কিছু বেশি ছিল। বর্তমানে এই সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে আমাদের অনুমান।'
তিনি জানান ,'দলীয় পোর্টালে ফর্ম ফিলাপ করার পর ডিজিটাল যোদ্ধারা নিজেদের সমাজ মাধ্যমের পাতায় তৃণমূল কংগ্রেসের স্বপক্ষে এবং বিরোধীদের কুৎসা জবাব দিচ্ছেন। গোটা মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে আমাদের নেতা অভিষেক ব্যানার্জির শুরু করা এই কর্মযজ্ঞে বিপুল সাড়া পাচ্ছি আমরা। '
ভীষ্মদেববাবু আরও বলেন,' যে সমস্ত ডিজিটাল যোদ্ধার কাজ দল তারিফ যোগ্য মনে করছে তাঁদেরকে আমরা বিভিন্নভাবে ব্যবহার করছি। নির্বাচিত ডিজিটাল যোদ্ধাদেরকে 'দিদির দূত' মোবাইল ফোন অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে নিজেদের সৃজনশীল কাজকর্ম সেখানে পোস্ট করতে বলা হচ্ছে। এর পাশাপাশি সমাজ মাধ্যমে আলাদা গ্রুপ তৈরী করা হয়েছে। সেখানে তাঁরা নিজেদের 'কনটেন্ট' এবং বিভিন্ন ধরনের 'রিলস' এবং 'কার্টুন' পোস্ট করছেন। প্রত্যেক ডিজিটাল যোদ্ধা নিজেদের সমাজমাধ্যমের পাতাতেও আমাদের নেতা অভিষেক ব্যানার্জি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং দলের বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির প্রচার করছেন।'
তিনি আরও জানান ,' বিজেপি যে হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদের রাজনীতি করছে তার বিরুদ্ধে আমাদের ডিজিটাল যোদ্ধারা সমাজ মাধ্যমের পাতায় প্রচারের ঝড় তুলেছেন। রাজ্যে জুড়ে এসআইআর শুরুর পর দলের বক্তব্য সমাজ মাধ্যমে তুলে ধরছেন এই ডিজিটাল যোদ্ধারা। কাজের নিরিখে ডিজিটাল যোদ্ধাদের ভবিষ্যতের দলের তরফে পুরস্কৃত করা হতে পারে।'
