আজকাল ওয়েবডেস্ক: মধ্যমগ্রামে ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড। কয়েক মাস আগে হওয়া খুনের ঘটনায় মা আরতি ঘোষ ও মেয়ে ফাল্গুনী ঘোষকে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। সোমবার তাদের সাজা শোনাল হল। পিসি শাশুড়ি সুমিতা ঘোষ খুনের ঘটনায় মা ও মেয়েকে যাবজ্জীবন সাজা শোনাল বারাসত আলাদত। সোমবার বিকেলে সপ্তম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা কোর্টের বিচারক প্রজ্ঞাগার্গী ভট্টাচার্য (হুসেন) এই সাজা শোনান। এছাড়াও এক লক্ষ টাকা করে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ওই মহিলার মৃতদেহ ট্রলিব্যাগে ভরে কলকাতার গঙ্গার ঘাটে ফেলতে গিয়েছিল মা ও মেয়ে। কলকাতার উত্তর বন্দর থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয় তারা। তদন্তে নেমে পুলিশের সামনে উঠে আসে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য। জানা যায়, বিবাহবিচ্ছেদের পর সুমিতা অসমে তাঁর ভাইয়ের বাড়িতে থাকতেন। মৃতার ভাইপোর সঙ্গে বিয়ে হয় ফাল্গুনী ঘোষের। বিয়ের কয়েকমাস পরই ঝামেলা করে শ্বশুর বাড়ি থেকে মা অনিতার কাছে চলে আসে ফাল্গুনী। মা ও মেয়ে থাকত মধ্যমগ্রামের দক্ষিণ বীরেশপল্লী এলাকার একটি ভাড়াবাড়িতে।
এদিকে, মা ও মেয়েকে গ্রেপ্তারের পর একাধিক তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন তদন্তকারীরা। খুনে ব্যবহৃত ছুরি বাড়ির সামনের পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়। নির্দিষ্ট সময় চার্জশিটও পেশ করা হয় আদালতে। আট মাসের মধ্যে শেষ হয় বিচারপ্রক্রিয়া। গত শুক্রবার মধ্যমগ্রামের হাড়হিম করা ট্রলি কাণ্ডে মা আরতি ঘোষ ও মেয়ে ফাল্গুনী ঘোষকে দোষী সাব্যস্ত করে বারাসত আদালত। এদিন তাদের সাজা শোনানো হল।
প্রসঙ্গত, ঘটনার পর দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি পিসি শাশুড়ির মৃতদেহ ঘরে রেখেই ফাল্গুনী ও আরতি কলকাতায় আসে। বড়বাজার এলাকা থেকে কেনে ট্রলি। তাঁরা গিয়েছিল বউবাজারের একটি সোনার দোকানেও। সেই দোকানে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার টাকার সোনার গয়নার অর্ডার দিয়েছিল ফাল্গুনী। গয়নার অর্ডারের বিল করেছিল নিহত সুমিতার নামেই। নিহতের মোবাইল থেকে অনলাইনের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম পেমেন্টও করেছিল ফাল্গুনী। বাড়ি ফিরে হাতুড়ি দিয়ে পিসি শাশুড়ির দুটো পা ভেঙে ট্রলিবন্দি করে তারা। ২৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে মা ও মেয়ে ভাড়া বাড়ির সামনে থেকে ভ্যানে করে মধ্যমগ্রামের দোলতলা পর্যন্ত নিয়ে আসে। সেখান থেকেই একটি ট্যাক্সি ভাড়া করে চলে আসে কলকাতার গঙ্গার ঘাটে। ট্রলি বের করে কুমোরটুলি গঙ্গায় ফেলার আগেই স্থানীয়দের সন্দেহ হওয়ায় আর ফেলতে পারেনি। নর্থ পোর্ট থানার পুলিশ এসেই ট্রলি কাণ্ডের রহস্যভেদ করে। খুনের অভিযোগে ফাল্গুনী ঘোষ এবং তার মা আরতি ঘোষকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
মামলার তদন্তভার নেয় মধ্যমগ্রাম থানার পুলিশ। মামলাটি ওঠে বারাসত আদালতে। ঘটনার পুনর্নির্মাণ, ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণ–সহ ভ্যান, ট্যাক্সি চালক ও সোনার দোকানের মালিকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশ ফাল্গুনী ও আরতির বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেয় বারাসত আদালতে। মোট ৩২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। সোমবার বারাসত আদালতে এই রায় ঘোষণার জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ছিল। রাজ্য সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গত সপ্তাহের শুক্রবার মা ও মেয়ে দু’জনকেই বারাসত আদালত দোষী সাব্যস্ত করে। সোমবার তাদের সাজা ঘোষণা করা হয়। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, খুনের জন্য দু’জনের যাবজ্জীবন ও ১ লক্ষ টাকা করে জরিমানা ছাড়াও প্রমাণ লোপাটের জন্য ৭ বছর কারাদণ্ড ও সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই ঘটনা ঘটার পর জুলাইয়ে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। মামলায় ৩২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলা প্রথমে কলকাতা পুলিশের হাতে থাকলেও পরে তা হস্তান্তর করা হয় মধ্যমগ্রাম থানার হাতে। তাদের তরফে তদন্ত করে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে।
