আজকাল ওয়েবডেস্ক: বিজেপিশাসিত রাজ্য ওড়িশায় বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকের খুনের ঘটনার তীব্র নিন্দা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। ভিনরাজ্যে বাংলভাষীদের উপর অত্যাচার ও নিগ্রহের ঘটনায় ধিক্কার জানিয়েছেন তিনি। এর পাশাপাশি নির্যাতিত এবং নিগৃহীত সকল পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণেরও আশ্বাস দিয়েছেন মমতা।

গত বুধবার রাতে মুর্শিদাবাদ জেলার পরিযায়ী শ্রমিক জুয়েল রানাকে বাংলাদেশি সন্দেহে ওড়িশার সম্বলপুর জেলায় পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে শনিবার মমতা সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, “প্রতিটি বিজেপি-শাসিত রাজ্যে বাংলাভাষী মানুষের উপর যে নির্মম অত্যাচার ও নিগ্রহ নেমে এসেছে আমরা তাকে তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। আমরা নিগৃহীত, সন্ত্রস্ত ও অত্যাচারিত সেইসব পরিযায়ী বাংলাভাষী পরিবারের পাশে আছি, সেই সব পরিবারকে আমরা সমস্ত রকম সমর্থন দেব। মানুষের জীবনের বিনিময়ে কোনও মূল্য হয় না, কিন্তু যেসব ক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটছে সেইসব ক্ষেত্রে আমাদের অর্থনৈতিক ক্ষতিপূরণের অঙ্গীকার রইল।”

এই নিগ্রহের ঘটনায় বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে, তা স্পষ্ট হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর পোস্টে। তিনি লিখেছেন, “অতি সম্প্রতি জঙ্গিপুর এলাকার কিছু পরিযায়ী শ্রমিকের উপর বিজেপি-শাসিত ওড়িশা রাজ্যে নানা অত্যাচার নেমে এসেছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে জঙ্গিপুরের সুতি এলাকার এক তরুণ পরিযায়ী শ্রমিককে সম্বলপুরে ২৪ ডিসেম্বর তারিখে পিটিয়ে মারা হয়েছে। মুর্শিদাবাদে পরিযায়ী শ্রমিকরা ওড়িশা থেকে সন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনায় আমরা পরিবারগুলির সঙ্গে আছি এবং নিহতের পরিবারের প্রতি আমাদের আর্থিক সহায়তাও পৌঁছে যাবে।” মমতা ফের উল্লেখ করেছেন, “বাংলা ভাষা বলা কোনও অপরাধ হতে পারে না।”

জুয়েলের খুনের তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ইতিমধ্যেই সুতি থানায় জিরো এফআইআর রুজু করেছে। ছ’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজ্য পুলিশের টিম তদন্ত করতে ওড়িশা গিয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার ২৪ ডিসেম্বর ওড়িশার সম্বলপুর জেলার শান্তিনগর এলাকায় মুর্শিদাবাদের সুতি থানার চক বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা জুয়েলকে বাংলাদেশী সন্দেহে পিটিয়ে মারার অভিযোগ ওঠে। মারধর করা হয় সুতির আরও দুই বাসিন্দা পলাশ শেখ এবং আমির শেখ। সেই বাংলাদেশি সন্দেহেই। দু’জনে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। 

ঘটনার মাত্র চারদিন আগেই ওড়িশায় কাজ করতে গিয়েছিলেন জুয়েল। ঘটনার দিন রাত ৯টা নাগাদ কয়েকজন স্থানীয় যুবক জুয়েল এবং অন্যান্যদের কাছে ভারতীয় হওয়ার নথি দেখতে চান। এরপরেই তাঁদের পরনের পোশাক দেখে তাঁদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। অভিযোগ, কিছু বোঝার আগে হঠাৎ করেই লাঠি এবং অন্যান্য জিনিস নিয়ে ওড়িশার ৭-৮ জন যুবক শ্রমিকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং তাঁদেরকে বেধড়ক মারধর করা হয়। রক্তাক্ত অবস্থায় জুয়েল এবং আরও দুই শ্রমিককে স্থানীয় সম্বলপুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে জুয়েলকে সেখানে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

গত কয়েক মাস ধরেই মুর্শিদাবাদের বাংলা ভাষাভাষী পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি সন্দেহে ওড়িশার বিভিন্ন প্রান্তে হামলার শিকার হতে হয়েছে। ইতিমধ্যেই জেলার কয়েক'শ শ্রমিক প্রাণ ভয়ে ওড়িশা থেকে নিজের বাড়িতে ফিরে এসেছেন। ওড়িশার স্থানীয় বাসিন্দাদের হাতে বাংলাদেশি সন্দেহে আক্রান্ত হলেও এতদিন মুর্শিদাবাদের কোনও পরিযায়ী শ্রমিককে বাংলাদেশি সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়নি। এটিই প্রথম ঘটনা।