মিল্টন সেন, হুগলি: ম্যাট্রিমনি সাইটে হাই প্রোফাইল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয়। সেই পরিচয় দিয়েই প্রতারণা। হুগলির তরুণীর থেকে ৪৪ লক্ষ টাকা প্রতারণার অভিযোগে গ্রেপ্তার দুই প্রতারক। চক্রের মূল পান্ডাকে মন্দারমনির একটি রিসোর্ট থেকে গ্রেপ্তার করেছে হুগলি জেলা গ্ৰামীন পুলিশের সাইবার সেল। মূল অভিযুক্তর আসল নাম জামির আব্বাস, বয়স ৩৭। বাড়ি হুগলির খানাকুলে।
অভিযোগ হাতে পাওয়ার পর তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তের শুরুতেই গত জুলাই মাসে এই প্রতারণা চক্রের সঙ্গে যুক্ত দু'জন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তাদের একজন অভিষেক রায়, বাড়ি ঝাড়খণ্ডের দেওঘরে। একইসঙ্গে কলকাতার গড়িয়া এলাকাতেও একটি ফ্ল্যাট রয়েছে অভিষেকের। অন্যজন জাহির আব্বাস, বাড়ি হুগলির খানকুলে। জানা গিয়েছে এই দুই যুবক, প্রধান অভিযুক্ত জামির আব্বাসের ম্যানেজারের পরিচয় দিয়ে প্রতারনা চক্র চালাতেন।
এই চক্র চলত ম্যাট্রমনি সাইটের মাধ্যমে। এত বড় প্রতারণা চক্র হুগলি জেলায় এই প্রথম, তেমনটাই জানিয়েছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার হুগলি জেলার কামারকুণ্ডুতে সাইবার ক্রাইম থানায় এক সাংবাদিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে হুগলি গ্রামীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যাণ সরকার জানিয়েছেন, গত ২৬ মে হুগলির সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযোগ দায়ের করেন এক তরুণী। সেখানে তিনি জানান, ম্যাট্রিমনি সাইটে অনুপম রায় নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এরপর বিয়ের প্রস্তাবের মাধ্যমে দু' পক্ষের সম্পর্ক দৃঢ় হয়। বারবার আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তরুণী ও তাঁর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তোলেন অভিযুক্ত জামির আব্বাস।
আরও পড়ুন: বন্যা বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গের পাশে এবার লিও মেসি! মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে বড় অর্থসাহায্য...
ম্যাট্রিমনি সাইটে আসল নাম গোপন করে অনুপম রায় পরিচয় দিয়ে প্রতারণার জাল ছড়ান অভিযুক্ত। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে অভিযুক্ত জামির আব্বাস তরুণী কে জানান, জি এস টি ও ইনকাম ট্যাক্স সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর ব্যবসায়িক সমস্যা তৈরি হয়েছে। সেই কারণে তাঁর সমস্ত ব্যাঙ্কের এক্যাউন্ট সিল করে দেওয়া হয়েছে। কিছু অর্থের প্রয়োজন। টাকা দিলে তাঁর সমস্ত অ্যাক্যাউন্ট ওপেন হয়ে যাবে। এই টোপ দিয়ে অভিযুক্ত ধাপে ধাপে তরুণীর পরিবারের মোট পাঁচটি অ্যাকাউন্ট থেকে ৪৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন।
এরপরেই অনলাইন সাইট থেকে অভিযুক্ত তাঁর অ্যাকাউন্ট সরিয়ে নেন। পাশাপাশি তরুণীর সঙ্গে সব রকমের যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। প্রতারণার শিকার হয়েছেন বুঝতে পেরে তরুণীর পরিবারের সদস্যরা হুগলি জেলা গ্রামীণ পুলিশের সাইবার থানায় গত ৬ই মে অভিযোগ দায়ের করেন। তারপরেই পুলিশ নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করে। তদন্তে নেমে শুরুতেই প্রতারকদের ম্যানেজার হিসাবে পরিচয় দেওয়া অভিষেক রায়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিষেকের সূত্র ধরে গত ৯ই মে গভীর রাতে হুগলির খানাকুল থেকে জাহির আব্বাস নামে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কিন্তু অধরা ছিলেন মূল অভিযুক্ত অনুপম রায়। সম্প্রতি অভিযুক্ত অনুপম রায় ওরফে জামির আব্বাসকে মন্দারমনির একটি রিসোর্ট থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁকে চন্দননগর আদালতে তোলা হলে ৭দিনের পুলিশী হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি বিয়ের নাম করে আগেও একাধিক তরুণীর সঙ্গে এই ধরনের সম্পর্ক তৈরি করে পরিবারের বিশ্বাস অর্জন করে তাদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকার প্রতারণা করেছে। পাশাপাশি এই ঘটনায় আর কারা কারা যুক্ত আছে, কতদিন ধরে তাঁরা এই প্রতারণার কাজ করছে সবটাই খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।
ছবি পার্থ রাহা।
