আজকাল ওয়েবডেস্ক: মেদিনীপুরে এক কিশোরী আত্মঘাতী হয়। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়ি থানা এলাকায়৷ জানা গিয়েছে, প্রতিবেশীর কাছে ধর্ষিত হয়ে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে কিশোরী। ঘটনার জেরে অভিযুক্তকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মেয়েকে হারিয়ে পরিবার অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে। কিশোরীর এই ভয়াবহ পরিণতিতে চমকে উঠেছে সবাই।
পুলিশ সূত্রে খবর পাওয়া গিয়েছে, কিশোরীর বয়স মাত্র ১৫। ধর্ষনে অভিযুক্ত ৪০ বছরের প্রৌঢ়। জানা গিয়েছে, চলতি বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নির্যাতিতার জেঠু স্থানীয় থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে জানানো হয়, ওই থানা এলাকার এক চানাচুর কারখানায় মাঝেমধ্যে কাজ করতে যেত তাঁর ভাইঝি। সেই কারখানার ব্যবসায়ীর বাড়ি তাঁদের বাড়ির কাছেই। এমনকী ব্যবসায়ীকে 'জেঠু' বলে ডাকত কিশোরী। মাঝেমধ্যে সময়ের অভাবে ওই জেঠুর বাইকে চেপেই কারখানায় যেত সে।
গত আগস্টের শেষে এমনই একদিন কারখানায় নিয়ে যাওয়ার নাম করে কিশোরীকে একটি ঝোপে নিয়ে যান 'জেঠু'। সেখানেই তাকে ধর্ষণ করা হয়৷ ধর্ষণের পর কিশোরীকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়৷ লজ্জা, ভয়ে প্রথমে সে কাউকে এ বিষয়ে বলতে পারেনি৷ পরবর্তীতে সাহস করে গত ৯ সেপ্টেম্বর বাড়ির লোকজনকে সমস্ত ঘটনা খুলে বলে কিশোরী৷ সে দিন বিকেলেই কেশিয়াড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে নির্যাতিতার পরিবার। অভিযোগের ভিত্তিতে পরদিনই অভিযুক্ত ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে পুলিশ৷ প্রথমে অভিযুক্তের পুলিশ হেফাজত ও পরে জেল হেফাজত হয়। ইতিমধ্যেই নির্যাতিতা কিশোরী, তার বাড়িতে রাখা কীটনাশক পান করে গত ২৪ অক্টোবর আত্মহত্যার চেষ্টা করে৷ এরপর তাকে স্থানীয় কেশিয়াড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেই থেকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল কিশোরীর৷ জানা গিয়েছে প্রায় ১৮ দিনের যুদ্ধ শেষে মঙ্গলবার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় কিশোরীর।
সেদিনই তার মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়েছে। এরপর সন্ধ্যায় কিশোরীর মৃতদেহ তার বাড়িতে পৌঁছয়৷ মৃতার জেঠুর দাবি, "ওই ঘটনার পর থেকেই বড্ড চুপচাপ হয়ে গিয়েছিল ও৷ পরে সাহস করে সব জানিয়েছিল আমাদের। আমি পুলিশের কাছে যাই। পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে৷ ওর মন ভাল করার কন্য আমাদের বাড়িতেই রেখেছিলাম। আসতে আসতে স্বাভাবিকও হচ্ছিল৷ কিন্তু গত ২৪ অক্টোবর সন্ধ্যায় আমাদের সবার অজান্তেই কীটনাশক পান করে৷ পরদিন সকালেই সব শেষ। বাঁচাতে পারলাম না ওকে।" অঝোরে কেঁদে ওঠেন প্রৌঢ়। তাঁর একটাই দাবি, যাঁর জন্য তাঁর ভাইঝি এমন পদক্ষেপ করল, তাঁর যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।
বর্তমানে নির্যাতিতার পরিবারের অনুমান, থানা-পুলিশ হওয়ার পর পাড়ার লোকজন বা অভিযুক্তের পরিবারের কেউ নাবালিকাকে অপমানজনক কিছু বলেছেন। তা সহ্য করতে না পেরেই কিশোরী এহেন চরম পদক্ষেপ করে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, " সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা দায়ের করে অভিযুক্তকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ অভিযুক্ত এখন জেলে৷ তদন্ত চলছে৷ তার মধ্যেই এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনক ঘটে গেল। তদন্তে সব কিছু খতিয়ে দেখা হবে।"
