মিল্টন সেন, হুগলি: চতুর্থীর সন্ধ্যায় রাস্তার দু'পাশ ছেয়ে গেল বিজ্ঞাপনে। সাবেক ফরাস ডাঙায় জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে ক্রমশই প্রকাশ্যে উঠে এল স্বাভাবিক দৃশ্য। শনিবার সন্ধ্যায় চন্দননগরে স্ট্যান্ডে বেলুন উড়িয়ে জগদ্ধাত্রী পুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন সম্পন্ন হল। একইসঙ্গে গাইড ম্যাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। একইসঙ্গে শিশুদের জন্যে ব্যাজ, সিনিয়র সিটিজেন কার্ড এবং ভলান্টিয়ার ব্যাজেরও আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। 

 

এদিন চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে আয়োজিত গাইড ম্যাপের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি, জেলাশাসক মুক্তা আর্য, চন্দননগরের মেয়র রাম চক্রবর্তী, ডেপুটি মেয়র মুন্না আগরওয়াল প্রমুখ।

 

এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি জানিয়েছেন, এবছর পুজো এগিয়ে এসেছে ঠিকই কিন্তু আড়ম্বরে কোনও ঘাটতি নেই। প্রতি বছর চন্দননগরে জগদ্ধাত্রী পুজো উপলক্ষে লাখ লাখ দর্শনার্থীর সমাগম হয়ে থাকে। শুধু এই জেলা নয় রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন। ফেরিঘাট, রেল স্টেশন এবং সড়ক পথে বহু দর্শনার্থী আসেন শহরে। পুলিশের কাছে সব থেকে জরুরি বিষয় দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা। তাই আগত সকলের জন্য সব রকমের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। 

 

চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের পাশাপাশি দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় বাইরের জেলা থেকে পুলিশ কর্মীদের আনা হয়েছে চন্দননগরে। এই বছর শহরের রাস্তায় সিসিটিভির সংখ্যা আরও বাড়ানো হয়েছে। অতিরিক্ত ৩০০টি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে শহর জুড়ে। আর সেই ক্যামেরা মনিটরিং এর জন্য খোলা হয়েছে জন্য তিনটি কন্ট্রোল রুম। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা সেই কন্ট্রোল রুম থেকে নজরদারি চালাবেন কমিশনারেটের আধিকারিকরা। 

 

আরও পড়ুন: সাধারণ ধর্ষণ হলে ঠিক আছে, কিন্তু মূক ও বধির নাবালিকার ধর্ষণ মানা যায় না, আজব ব্যখ্যা সিপিএম নেতার

 

মানুষের ভিড়ে মোতায়েন থাকবে সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মী এবং মহিলা পুলিশ কর্মী। উইনার্স টিম, পিঙ্ক মোবাইল টিমের মহিলা পুলিশ কর্মীরা টহল দেবে। পুজোর দিনগুলিতে প্রায় তিন হাজার পুলিশ মোতায়েন থাকবে শহরে। একাধিক সেক্টরে বিভক্ত করে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন ৬ জন পুলিশ সুপার পদমর্যাদার আধিকারিক। সঙ্গে থাকছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদমর্যাদার ২০ জন আধিকারিক এবং ইন্সপেক্টর পদমর্যাদার ৩৫ জন আধিকারিক। মোতায়েন থাকবেন সাদা পোশাকের পুলিশ কর্মী এবং মহিলা পুলিশ কর্মী। সুইপিং পার্টি থাকবে ৫০টি বাইকে। 

 

পুলিশ কমিশনার আরও বলেছেন, পাশাপাশি নজরদারি চালানো হবে ড্রোন ক্যামেরার মাধ্যমে। ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হবে শহরের অলিগলি সর্বত্রই। চন্দননগর এবং ভদ্রেশ্বর এলাকা সংলগ্ন প্রত্যেকটি ঘাটেই লঞ্চ পরিষেবা চালু থাকবে। ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে পুলিশের কন্ট্রোল রুম। দর্শনার্থীরা যাতে ভালভাবে ঠাকুর দেখতে পারেন, তার জন্য সবরকম ব্যবস্থা থাকছে। অন্য বছরের মতো এবছরও প্রবীণ নাগরিক এবং প্রতিবন্ধীদের ঠাকুর দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

 

ষষ্ঠী অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকে শহরে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। দুপুর দু'টো থেকে পরদিন সকাল ছ'টা পর্যন্ত বন্ধ থাকবে পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল। শহরে ঢোকার মোট ৪৪টি জায়গায় থাকছে নো এন্ট্রি। এদিন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেছেন, এই পুজো শুধু চন্দননগরের গর্ব নয়। সারা দেশ তথা বিশ্বের দরবারে খ্যাত। সারা পৃথিবীতে এই পুজোর আবেগ ছড়িয়ে দিতে লাইভ পুজো দেখানোর প্রস্তুতি চলছে। সুষ্ঠভাবে পুজো পরিচালনার জন্য প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বিশেষ করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনারকে। কারণ পুজোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যাবতীয় অনুমোদন এবং পরিচালনা পুলিশের তরফে করা হয়। দর্শনার্থীরা যেকোনও সমস্যায় পুলিশকে ফোন করুন, সুরাহা হবে। 

 

গোটা শহর আন্ডার গ্রাউন্ড কেবলিং এর কাজ শেষ হয়েছে। এই পুজোয় জল এবং বিদ্যুতের কোনও সমস্যা হবে না। জগদ্ধাত্রী পুজো দেখতে বহু বিদেশী পর্যটক চন্দননগরে আসেন। তাঁদেরকেও স্বাগত জানিয়েছেন মন্ত্রী। এদিন মঞ্চ থেকে দুর্গাপুজোয় সেরা থিমের জন্য জন্য চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেটের তরফে তিন পুজো কমিটিকে পুরস্কৃত করা হয়। 

ছবি: পার্থ রাহা