আজকাল ওয়েবডেস্ক: যে কোনও নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক হিংসায় রক্তাক্ত হওয়ার ইতিহাস মুর্শিদাবাদ জেলায় দীর্ঘদিনের। আর রাজনৈতিক হানাহানি রোখার জন্য নির্বাচনের আগে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র এবং বোমা উদ্ধার করতে গিয়ে কাল ঘাম ছুটে যায় জেলার বিভিন্ন থানা আধিকারিকদের। 

রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিভিন্ন এলাকায় বেআইনি ভাবে মজুত করা বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র এবং বোমা উদ্ধারের জন্য আবার এক অভিনব পন্থা নিয়েছেন মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলা আধিকারিকরা।

গত কয়েকদিন ধরে মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলা থেকে বিভিন্ন থানা এলাকায় পোস্টারিং করে এবং সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একটি 'পোস্ট'।

পুলিশের তরফে করা এই পোষ্টের মূল বার্তা-বেআইনিভাবে মজুত করা বোমার খবর দাও আর পুরস্কার নাও। আর তাতেই যেন জাদু মন্ত্রের মতো কাজ হচ্ছে।

আগে লুকিয়ে রাখা বোমা অথবা বিস্ফোরকের খবর পেতে পুলিশের কালঘাম ছুটে যেত। এখন তার পরিবর্তে থানার আধিকারিকরা 'বড় কর্তাদের' কাছ থেকে মোবাইলে পাচ্ছেন 'গোপন বার্তা', কোথায় রয়েছে বোমা। ।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই নম্বর শেয়ার করার পর থেকে গত ২৪ ঘন্টায়  ডোমকল, ভগবানগোলা এবং লালগোলা থানা এলাকা থেকে কমপক্ষে ২০টি সকেট ও সুতলি বোমা উদ্ধার হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধের মধ্যে উদ্ধার হওয়া বোমার সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে পুলিশ কর্তাদের দাবি।

মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার সুপার কুমারসানি রাজ বলেন, 'মুর্শিদাবাদ জেলার  রেজিনগর, ডোমকল এবং সাগরপাড়া থানা এলাকায় সাম্প্রতিক সময়ে বোমাবাজির ঘটনায় দু'জন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। এর পাশাপাশি মুর্শিদাবাদ জেলার  অতীত ইতিহাসের কথা মাথায় রেখে বোমা উদ্ধারের জন্য বিশেষ এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'
 
পুলিশ সুপার আরও জানান, 'বোমা তৈরি, সেগুলো মজুত রাখা এবং বোমাবাজির ঘটনায় যারা যুক্ত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের এই অভিযান জারি থাকবে এবং এফআইআর রুজু করে গ্রেপ্তার করা হবে।'
 
জেলা পুলিশের এক শীর্ষ আধিকারিক জানান, বোমা উদ্ধারের জন্য যে হেল্পলাইন নম্বর চালু করা হয়েছে সেখানে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সোমবার ভগবানগোলা থানার পুলিশ খুলারপুকুর পশ্চিম হাজীপাড়া এলাকায় আহমেদ জামান নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে অভিযান চালায়।

সেখান থেকে দশটি তাজা সকেট বোমা উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে মতিন আলি এবং আদিল হোসেন নামে দু'জন ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।  জিজ্ঞাসাবাদে দু'জনেই তাদের দোষ স্বীকার করে। ধৃতদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। 

অন্যদিকে অপর একটি ঘটনায় ওই নির্দিষ্ট নম্বরে গোপন সূত্রে আসা খবরের ভিত্তিতে সোমবার রাতে লালগোলা থানার পুলিশ মানিকচক গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসুমারী গ্রামে কৃষ্ণ মন্ডল নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে অভিযান চালায়। 

সেখান থেকে পুলিশ ৮টি তাজা সকেট বোমা উদ্ধার করেছে। এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ কৃষ্ণ মন্ডলের দুই ছেলে প্রসেনজিৎ মন্ডল এবং বিশ্বজিৎ মন্ডলকে গ্রেপ্তার করেছে। 

এর পাশাপাশি মঙ্গলবার সকাল থেকে ডোমকল থানার পুলিশ  রায়পুর-কারিগরপাড়ায় একটি মাঠে অভিযান চালায়। সূত্রের খবর সেখান থেকে এখনও পর্যন্ত ৮ -১০ টি তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে।

অভিযান শেষ হলে উদ্ধার হওয়া বোমার সংখ্যা আরও বাড়াতে পারে বলে পুলিশকর্তাদের ধারণা। জেলা পুলিশের ওই আধিকারিক জানান, ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন রাজনৈতিক হানাহানি  এবং বোমাবাজিতে মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সব মিলিয়ে প্রায় ১৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল, আহত হয়েছিলেন প্রায় শতাধিক মানুষ।

তারপরেও ভোটের দিন রাজনৈতিক হিংসায় একাধিকবার রক্তাক্ত হয়েছে মুর্শিদাবাদ জেলা। এবছর অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে ডোমকলের ঘোড়ামারা এলাকায় ঘরের মধ্যে বোমা বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় এক মহিলার।

তার ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই  রেজিনগর থানার ছেতিয়ানি এলাকায় একটি মাঠে বসে বোমা বাঁধার সময় মৃত্যু হয় এক ব্যক্তির। এরপর ওই ব্যক্তির দেহের সন্ধান পেতেও পুলিশকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল।

পরে গঙ্গার ধারে একটি জায়গায় মাটির মধ্যে পোঁতা থাকা দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার পর ওই এলাকা থেকে প্রায় ৯০টির বেশি তাজা বোমা উদ্ধার করেছিল পুলিশ। 

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বোমা এবং বিস্ফোরকের তথ্য দেওয়ার জন্য যে হেল্পলাইন নম্বরটি চালু করা হয়েছে তার  নিয়ন্ত্রণ সরাসরি থাকছে জেলার শীর্ষ  পুলিশ আধিকারিকদের হাতে।

তার ফলে  কোনও থানার আধিকারিকেরা জানতেও পারছেন না কোন ব্যক্তি বোমা উদ্ধারের জন্য তথ্য দিচ্ছেন। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে এই ভাবেই তারা 'ইনফর্মার'দের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করছেন। গোপনে এই 'ইনফর্মার'দের পুরস্কৃতও করা হবে বলে পুলিশের শীর্ষ কর্তারা জানিয়েছেন।  

সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদ জেলার আরও কয়েকটি থানা এলাকায় গোপনে বোমা লুকিয়ে রাখার বেশ কিছু খবর শীর্ষ আধিকারিকেরা পেয়েছেন। সেই সমস্ত এলাকাতেও অভিযান শুরু হবে বলে পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে।