আজকাল ওয়েবডেস্ক: দায়িত্বভার গ্রহণ করেই বনগাঁ পুরসভার অধীনে থাকা অগ্নিকন্যা পার্কে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ তুললেন বর্তমান চেয়ারম্যান দিলীপ মজুমদার। শুধু অভিযোগই নয়, পার্ক পরিদর্শনে গিয়ে হাতেনাতে 'অনৈতিক' কাজ ধরার দাবি করেছেন তিনি। যদিও এই সমস্ত অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ। দু’পক্ষের পালটা অভিযোগে বনগাঁ পুরসভায় শুরু হয়েছে তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোর।
দীর্ঘ টালবাহানার পর কয়েকদিন আগেই বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেন গোপাল শেঠ। তাঁর জায়গায় নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেন দিলীপ মজুমদার। সোমবার চেয়ারম্যান হিসেবে প্রথম কাজ শুরু করেন তিনি। সামনে ২৫ ডিসেম্বর বড়দিন, এই সময় অগ্নিকন্যা পার্কে মানুষের ভিড় স্বাভাবিকভাবেই বাড়ে। সেই কারণেই সোমবার সন্ধ্যায় কাউন্সিলরদের নিয়ে পার্ক পরিদর্শনে যান নতুন চেয়ারম্যান।
পার্কের অবস্থা দেখে রীতিমতো বিস্মিত হন দিলীপ মজুমদার। তাঁর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই অগ্নিকন্যা পার্কের ভিতরে 'অনৈতিক' কার্যকলাপ চলছিল। দিলীপবাবুর দাবি, পার্কে ২০০ টাকা করে ‘শোয়ার চেয়ার’ ভাড়া দেওয়া হচ্ছিল, আশপাশে পড়ে ছিল একাধিক 'আপত্তিকর' সামগ্রী। পাশাপাশি পার্কের একাধিক ইভেন্ট ও যন্ত্রাংশ দীর্ঘদিন ধরে বিকল অবস্থায় পড়ে থাকলেও, সেগুলোর নামেই ফলস বিল তৈরি করে পৌরসভার প্রায় ২২ কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে।
বর্তমান চেয়ারম্যানের অভিযোগ, এই দুর্নীতির সঙ্গে প্রাক্তন চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ সাতজনের একটি র্যাকেট জড়িত। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুতর বলে উল্লেখ করে তিনি জানান, পুরো ঘটনার তদন্ত করা হবে এবং প্রয়োজন হলে প্রশাসনিক স্তরেও বিষয়টি জানানো হবে।
অন্যদিকে, সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ। তাঁর বক্তব্য, “পুরসভার যে কোনও কাজ ইঞ্জিনিয়ারের মাধ্যমে হয় এবং অর্থ দপ্তরের অনুমতি ছাড়া কোনও বিল পাশ হয় না। সমস্ত কাজই স্বচ্ছতার সঙ্গে হয়েছে।” তিনি আরও দাবি করেন, “২০১১ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত পৌরসভার আর্থিক লেনদেন নিয়ে আমি নিজেই তদন্ত চেয়েছিলাম।”
গোপাল শেঠ আরও বলেন, “আমি দেড় মাস ছুটিতে ছিলাম। এতদিন যদি সব ঠিক থাকে, তাহলে এই সময়ের মধ্যেই কীভাবে অগ্নিকন্যা পার্কে অনৈতিক কাজ হল?” এই ঘটনার জন্য নাম না করে শাসকদলেরই অন্য গোষ্ঠীর দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন তিনি। তাঁর কথায়, “কারা এই কাজ করেছে, সেটা খতিয়ে দেখা দরকার।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শাসকদলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছে বলেই মনে করছে বিরোধীরা। বিজেপি কাউন্সিলর দেবদাস মণ্ডল বলেন, “বর্তমান এবং প্রাক্তন চেয়ারম্যান—দু’জনেই তৃণমূলের। ওঁরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন, এটা স্পষ্ট গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। তবে যদি সত্যিই দুর্নীতি হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত।”
অগ্নিকন্যা পার্কে দুর্নীতির এই অভিযোগ ঘিরে এখন বনগাঁ পুরসভা সরগরম। প্রশাসনিক তদন্ত শুরু হয় কি না, সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।
