মিল্টন সেন: পুরোদস্তুর বিয়ের আয়োজন। বিয়ের আগে আইবুড়ো ভাত। বিবাহ বাসরে নহবত, সঙ্গে বরযাত্রীও। হল সাত পাক, মালা বদল। বহু মানুষের ভিড়ে পুরোহিতের মন্ত্রচারণের মধ্য দিয়ে মধ্যরাতে বর বেশে মালাবদল করে বিয়ে করলেন দেবাদিদেব মহাদেব। বলাগড় রাসমেলায় যুগ যুগ চলে আসছে এই প্রাচীন রীতি। কথিত আছে, ১৭০৭ সালে বর্তমান বলাগড় থানার অন্তর্গত শ্রীপুর গ্রামের প্রতিষ্ঠাতা সাধক জমিদার রঘুনন্দন মিত্র মুস্তাফি তাঁর বাড়িতে দুর্গাপুজো করেছিলেন। তখন তিনি বুঝতে পারেন বাড়িতে পুজো করলে প্রজারা আসতে পারছেন না।

 

 

 

এমনকি, তাঁর বাড়ির মহিলারাও বাড়ির বাইরে বেরোতে পারছেন না। ফলে, প্রজাদের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্ক থাকছে না। তখন তিনি জমিদার বাড়ি থেকে অনতিদূরেই বিন্ধ্যবাসিনী মায়ের পুজো শুরু করেন। শোনা যায় বৃন্ধাচল পর্বতে এখনও তিথি নক্ষত্র অনুসারে পূজিত হন দেবী। রবিবার ছিল শিবের বিয়ে। সন্ধ্যায় বরযাত্রী নিয়ে স্থানীয় কয়েকটি বাড়িতে আইবুড়ো ভাত খেয়ে ফেরার পর শিবকে মুস্তাফি বাড়িতে রাখা হয়। রাত তিনটে নাগাদ মহাদেব বিবাহ করতে বরযাত্রী সহ বিন্ধ্য বাসিনীর মন্দিরের দিকে রওনা হন। সাত পাক, মালা বদল এবং অন্যান্য আচারের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় মহাদেব এবং দেবী বিন্ধ্যবাসিনীর বিবাহ। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে শ্রীপুর গ্রামে বসে বিরাট মেলা। এই মেলা চলে প্রায় পনেরো দিন ধরে।

 

 

 

 

 

যাত্রাপালা হয়, বসে গানের আসর। পুজোর শেষ দিন মন্দিরের পার্শ্ববর্তী পুকুরে আয়োজিত আতস বাজি প্রদর্শনী দেখতে সংলগ্ন জেলা থেকেও হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন। শিবের বিবাহ প্রসঙ্গে মিত্র মুস্তফি পরিবারের বংশধর তাপস মুস্তফি জানান, একসময় জমিদার বাড়িতে দুর্গাপুজো হতো। কিন্তু সে দুর্গাপুজো দেখতে যাওয়ার অধিকার ছিল না গ্রামের মানুষদের। কিন্তু জমিদার চাইতেন গ্রামের মানুষদের নিয়ে একসঙ্গে আনন্দে মেতে উঠতে। তাই তিনি শুরু করেন শিবের বিয়ের এই অনুষ্ঠান। যে অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে পরবর্তী সময়ে হামিদ পরিবারের সঙ্গে মেতে উঠত গোটা গ্রামের মানুষ। জমিদারি এখন না থাকলেও সেই প্রাচীন সেই প্রথা আজও অব্যাহত।

ছবি: পার্থ রাহা