আজকাল ওয়েবডেস্ক: ফের মহারাষ্ট্রে মৃত্যু বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকের। ভিনরাজ্যে কাজ করতে গিয়ে পুণেতে মৃত্যু হয়েছে রায়গঞ্জের এক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু। যুবকের নাম টিপু দাস। তাঁর পরিবার মৃত্যু কারণ নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায়। পরিজনদের দাবি, ছবি দেখে মনে হচ্ছে মৃত্যুর কারণ স্বাভাবিক নয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজগঞ্জ ব্লকের বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের আমবাড়ি ফালাকাটা গোকুলভিটা গ্রামের বাসিন্দা দিপু দাস ১৫ বছর ধরে ভিনরাজ্যে কাজ করে সংসার চালাতেন। দু’মাস আগে তিনি পুণেতে শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন। সোমবারই মারা গিয়েছিলেন দীপুর মা। সেই খবর পরিবারের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছিল দীপুর ঠিকাদারকে। কিন্তু মঙ্গলবার রাতে পুণে থেকে খবর আসে দীপু মারা গিয়েছেন। পরিবারকে জানানো হয়, কাজ করতে গিয়ে ছাদ থেকে পরে মারা গিয়েছেন তিনি। পরে ছবি পাঠানোর পর দেখতেন পান দীপুর গলায় ধারালো অস্ত্রের দাগ রয়েছে। এতে সন্দেহ আরও বেড়ে যায়।
তাঁর ভাইয়েরা পড়ছেন সমস্যায়। কারণ, বাড়িতে তাঁদের মা মারা গিয়েছেন এবং অন্য রাজ্যে দাদা মারা গিয়েছেন। আর্থিক অবস্থাও ভাল নয়। এত দূর থেকে দেহ আনার মতো ক্ষমতা তাঁদের নেই। এই বিষয়ে দীপুর দুই ভাইয়েরা বলেন, “মায়ের মারা যাওয়ার খবর দেওয়ার পরের দিনই দাদার মৃত্যুর খবর পেয়েছি আমরা। দাদা অন্য রাজ্যে কাজ করতো। ছবি দেখে দাদার মৃত্যু অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। সঠিক তদন্তের দাবি করছি আমরা। রাজ্য সরকার দেহ আনার জন্য সাহায্য করলে আমরাও উপকৃত হব।”
এই বিষয়ে এলাকারই বাসিন্দা বাবলু রায় জানিয়েছেন, ছবি দেখে মনে হচ্ছে দীপুকে কেউ মেরে ফেলেছে। এই অবস্থায় দীপুর দেহ আনতে কে যাবেন? কারণ, তাঁর মা মারা যাওয়ায় পরিবারের লোকেরা ব্যস্ত।
আরও পড়ুন: ইনিই তাহলে আলুর ‘মা’! অবশেষ খুঁজে বার করলেন বিজ্ঞানীরা, নাম জানলে চমকে যাবেন আপনিও
অন্য দিকে এই নিয়ে বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সমিজুউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন, যে ভাবে অন্য রাজ্যে বাঙালিদের হেনস্তা করা হচ্ছে তার ফলে ছবি দেখে মনে হচ্ছে এই মৃত্যু অস্বাভাবিক। পরিবারকে সব রকম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
দীপুর পরিবারের পাসে এসে দাড়িয়েছে প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা। পুণেতে দেহ শনাক্ত করতে পুলিশের সঙ্গে দীপুর পরিবারের লোকও যাচ্ছেন। শুক্রবার সকালে দীপুর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়। সঙ্গে ছিলেন ভোরের আলো থানার ওসি সন্দীপ দত্ত, যুগ্ম বিডিও, জেলা পরিষদের সদস্য রণবীর মজুমদার, বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সমিজুউদ্দিন আহমেদ, তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি অরিন্দম ব্যানার্জি, যুব তৃণমূল কংগ্রেসের ব্লক সভাপতি তুষার দত্ত, বাবলু রায়-সহ অনেকেই।
দীপুর ভাইদের সঙ্গে কথা বলেন বিধায়। পুণে যাওয়ার বিমানের টিকিটও কেটে দেন তিনি। এই বিষয়ে রাজগঞ্জের বিধায়ক বলেন, “শুনলাম বিন্নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের আমবাড়ি ফালাকাটা গোকুলভিটা গ্রামের দীপু দাস অন্য রাজ্যে কাজ করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু দেহের ছবি দেখে মনে করা হচ্ছে অস্বাভাবিক মৃত্যু। যেভাবে ভিনরাজ্যে বাংলা ভাষীদের উপর অত্যাচার করছে তাতে মনে করা হচ্ছে বাংলা বলার জন্য মেরে ফেলা হতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “আজ তিন জনকে পাঠানো হচ্ছে প্লেনে। সেখানে গেলেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। যদি দীপুকে মেরে ফেলা হয় তবে জলপাইগুড়ি জেলা জুড়ে আন্দোলনে নামা হবে।”
দীপুর ভাই জানিয়েছে দাদার মৃত্যুর সংবাদ পেয়েছি মঙ্গলবার। শুক্রবার বিধায়ক খগেশ্বর রায়, প্রধান-সহ অনেকে এসেছেন। সকলে মিলে আমাদের পুণে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। আজ পুলিশের সঙ্গে আমরা তিনজন যাচ্ছি। সেখানে গেলেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই মহারাষ্ট্রের ভাসি থানার ওয়াসিগাওতে নৃশংসভাবে খুন করা হল বাংলার পরিযায়ী শ্রমিককে। কুপিয়ে খুনের পর তাঁর দেহ একটি বস্তায় ভরে জলে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার কফিনবন্দি সেই দেহ এল তাঁর বাড়িতে। মৃত শ্রমিক আবুবক্কর মণ্ডল (৩৩) উত্তর ২৪ পরগণার বাদুড়িয়ার বাসিন্দা ছিলেন।
