আজকাল ওয়েবডেস্ক: 'ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।' আরও একটা বছর 'দাদা' অধীর চৌধুরীকে 'ভাইফোঁটা' দিয়ে এই প্রার্থনা করলেন বহরমপুরের মাজদিয়া এলাকার বাসিন্দা রেনুকা মাড্ডি। 

রক্তের সম্পর্কে অধীরবাবুর বোন হন না রেনুকা। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিন নিজের ছেলেকে হারিয়ে 'দাদা' হিসেবে অধীর চৌধুরীকে পেয়েছেন তিনি 

২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের দিন মাজদিয়া এলাকার একটি বুথে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন রেনুকা। সেই সময় তাঁর কাছে খবর আসে তাঁর ছোট ছেলে রজত আত্মঘাতী হয়েছেন। 

পুত্র আত্মঘাতী হওয়ার খবর পেয়ে দ্রুত বাড়ি ফিরে যান রেনুকা। এরপর ছেলের নিথর শরীর মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেখে এসে ফের ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন তিনি। সেই সময় রেণুকা জানিয়েছিলেন- তার একটি ভোট না পাওয়ার জন্য অধীর চৌধুরী যদি হেরে যান তাহলে তিনি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবেন না। 

২০১৯ -এর লোকসভার নির্বাচনে জেতার পরই অধীর চৌধুরী তাঁর 'বোন' রেনুকার কাছে ছুটে গিয়েছিলেন ।সান্ত্বনা দিয়েছেন পুত্রহারা বোনকে। 

সেবছর থেকেই অধীর চৌধুরী ভাইফোঁটার সময় বহরমপুরে থাকলে যতই কাজ থাকুক না কেন ছুটে যান মাজদিয়াতে বোন রেনুকার কাছে ফোঁটা নেওয়ার জন্য। 

এবছরও তার ব্যতিক্রম হল না। রবিবার বারবেলা পড়ার আগেই অধীর চৌধুরী পৌঁছে গেলেন 'বোন' রেণুকার বাড়িতে। 

বাড়িতে পৌঁছতেই রীতিনীতি মেনে 'দাদা'কে আপ্যায়নের পর রেনুকা ফোঁটা দিলেন অধীর চৌধুরীকে। মাথায় পাগড়ী পড়িয়ে, কপালে তিলক কেটে 'দাদা'কে পায়েস খাইয়ে দিলেন রেণুকা। দাদাও ভালোবেসে থালা থেকে তুলে নিলেন বোনের তৈরি করা মোয়া। এরপর দাদা , বোনের হাতে তুলে দিলেন সুদৃশ্য একটি শাড়ি। অন্যদিকে বোন দাদার হাতে তুলে দিলেন দামি 'ব্লেজার'। 

রেনুকা জানান, 'আমার ছেলেকে হারিয়ে এই দাদাকে পেয়েছি। যখনই আমি বলি দাদা আমার কাছে ছুটে আসেন। দাদার যাতে আরও সুনাম হয় ভগবানের কাছে আজ সেই প্রার্থনা করলাম।'

তিনি বলেন,  'এবছরের লোকসভা নির্বাচনে দাদা হেরে যাওয়াতে আমি খুব দুঃখিত। জোর গলায় আমি সবাইকে বলতাম দাদা ভোটে জিতবে। আমার আশা আগামী নির্বাচনে দাদা অবশ্যই জিতবেন।' 

অন্যদিকে বোন রেনুকার কাছ থেকে ফোঁটা নিয়ে অধীর চৌধুরী বলেন, 'এই বাড়িতে হর্ষ এবং বিষাদ দুইই আছে। আমার বোন রেনুকা তার দুই সন্তানকে ইতিমধ্যেই হারিয়েছে। প্রতিবছর এই বোন আমাকে ফোঁটা নেওয়ার জন্য ডাকে। এই দিনটিতে আমি বহরমপুরে থাকলে বোনের কাছ থেকে ফোঁটা নেওয়ার জন্য আসার চেষ্টা করি।'

তিনি বলেন, 'এই বোন আমাকে শুধু ফোঁটা দেন না। ভালো খাওয়ার খাওয়ান , দামি উপহার দেন। দিনটা আমার কাছে স্মরণীয়। বোনের পরিবারের সকলের মঙ্গলের জন্য আজ প্রার্থনা করলাম।'