আজকাল ওয়েবডেস্ক: রাজ্য রাজনীতি নয় কেবল, বাংলার সোনালিকে নিয়ে উত্তাল হয়েছিল দেশের রাজনীতিও। বাংলাদেশি সন্দেহে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। দীর্ঘ লড়াই শেষে  সীমান্ত পেরিয়ে নিজের দেশে ফিরেছেন অন্তঃসত্ত্বা সোনালি খাতুন। এবার তিনি আসছেন কালীঘাটে। সোনালির সঙ্গে দেখা করবেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জি। অভিষেক নিজেই এদিন জানান, 'আগামী পরশুদিন সোনালি খাতুনের পরিবারের সঙ্গে দেখা করছি। তাঁর পরিবারের সকলের প্রতি আমার সমবেদনা ছিল। যোগাযোগ ছিলাম আমরা।' 

 সোনালি বিবিকে অন্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে। অভিষেক ব্যানার্জি আর সোনালির সাক্ষাতের আগেই প্রকাশিত হয়েছে বাংলার খসড়া ভোটার তালিকা। অভিষেকের গলায় এদিন জোর সওয়াল অনুপ্রবেশকারী, রোহিঙ্গা মন্তব্যেই।

 

রাজ্যে এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেও বারে বারে লক্ষ্য করা গিয়েছে, ভিন রাজ্যে বাংলাদেশি সন্দেহে আক্রমণের শিকার হয়েছেন বাঙালিরা। এদিন অভিষেক বললেন, এইএসআর-ই যেন খারিজ করে দিল, 'অনুপ্রবেশকারীদের আঁতুড়ঘর', 'রোহিঙ্গা' তত্বকে। বাংলার খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয়েছে ১৬ তারিখ। ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত তালিকা। আর এই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অভিষেক বলেন, 'যাঁরা বাংলাকে খাটো করে, ছোট করে, অনুপ্রবেশকারীদের আঁতুড়ঘর বলে বাংলাকে আখ্যায়িত করেছিল, কালিমালিপ্ত করেছিল, বলেছিল এক কোটি-দেড়কোটি রোহিঙ্গা বাদ যাবে, দেড় কোটি বাংলাদেশি থাকে, তাদের তথ্য কার্যত  ইলেকশন কমিশনের এসআইআর খারিজ করে দিয়েছে।'

এদিন অভিষেক বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে বাংলার মানুষদের তুলনা করেছেন যাঁরা, অপমান করেছেন, তাঁদের ক্ষমা চাওয়া উচিত কান ধরে। খসড়া  তালিকা বেরোতেই অভিষেকের ঝাঁঝাল প্রশ্ন-'এককোটি বাংলাদেশি নাকি বাংলায় ঢুকেগিয়েছে, এক কোটি রোহিঙ্গা ঢুকে গিয়েছে, কোথায় তারা?' তাঁর আরও প্রশ্ন, যদি তর্কের খাতিরে ধরে নেওয়াও হয় বঙ্গে অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটেছে, তাহলে দিল্লি কিংবা পহেলগাঁও হামলা ঘটে কীভাবে?

এছাড়াও বিমানবন্দরে এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক যুবভারতী-সহ একাধিক বিষয়ে মন্তব্য করেন।  যুবভারতী প্রসঙ্গে বিরোধীদের চরম কটাক্ষ নিয়ে অভিষেককে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তরে বলেন, ঘটনা সেদিন যা ঘটেছে, তা কাম্য ছিল না কারও কাছে। মাথা হেঁট হয়েছে বাংলার। মানহানি হয়েছে বাংলার। তিনি বলেন, ' যুবভারতীতে যা ঘটেছে, আমরা কেউই আশা করিনি। যে কারণেই ঘটে থাকুক, উদ্যোক্তাদের একাংশের বা আয়োজকের যেমন গাফিলতি রয়েছে তেমনই পুলিশ প্রশাসনের তরফেও শৈথিল্য-গাফিলতি রয়েছে, তা অস্বীকারের জায়গা নেই। সেই কারণেই ইতিমধ্যেই তদন্ত কমিশন বসিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।' অরূপ বিশ্বাসের পদত্যাগের প্রসঙ্গ এদিন যেমন অভিষেক তুলে ধরেন বক্তব্যে, তেমনই সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ক্ষমা চাওয়ার প্রসঙ্গও উল্লেখ করেন।  তিনি বলেন, 'এই দৃষ্টান্ত, নতজানু হয়ে মানুষের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা, ভারতের অন্য কোথাও, কোনও মুখ্যমন্ত্রী এই সৌজন্য দেখাননি।' 

অভিষেক এক প্রসঙ্গে অন্যান্য রাজ্যে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ঘটনা এবং তার পরে সে রাজ্যের প্রশাসনের কী ভূমিকা থাকে, তাও যেন একবার মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন। এদিন অভিষেক বলেন, 'একাধিক রাজ্যে পদিপিষ্ট হওয়ার ঘটনার পর, ধরপাকড় দূরের কথা, প্রকাশ্যে মানুষের উদ্দেশে  ক্ষমা প্রার্থনা করা বা রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার কথা, আমরা গত ৪০-৫০ বছরে, স্বাধীনতার পর থেকেও দেখতে পাইনি।'