যার জন্ম হবে তাকে মরতেই হবে, এই ধারণাই রয়েছে পৃথিবীর শুরু থেকে। মানুষকে অমর করার বহু চেষ্টা করেছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু কত ওষুধ, কত বিদ্যাই ব্যর্থ হয়েছে। জীবনের আয়ু কতটা দীর্ঘ হবে, তা  আগে থেকে নির্ধারণ করতেও সফল হয়নি কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষা। তবে সম্প্রতি এবিষয়ে এক বিজ্ঞানীর বক্তব্যে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ ড. মাইকেল লিয়ন বলছেন, জীবনের মেয়াদকাল বলা সম্ভব। আর সেই সূত্র লুকিয়ে আছে আমাদের ঘ্রাণশক্তিতে!

ড. মাইকেল লিয়নের মতে, ঘ্রাণশক্তি আমাদের জীবনের আয়ুর একটি ‘অদৃশ্য পূর্বাভাস’ হতে পারে। গন্ধের প্রতি মনোযোগ দেওয়া মানে মস্তিষ্কের প্রতি যত্ন নেওয়া। তাই শরীর ও মন দুটোই সতেজ রাখতে আজ থেকেই নিজের ঘ্রাণশক্তির যত্ন নিতে শুরু করুন।

আরও পড়ুনঃ উৎসবের দিনে দেদার ভূরিভোজেও বাড়বে না ওজন, এই সব কৌশলেই লুকিয়ে মেদ কমানোর চাবিকাঠি

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ড. লিয়ন জানিয়েছেন, মানুষের ঘ্রাণ বা গন্ধ অনুভব করার ক্ষমতা আসলে তার মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর গুরুত্বপূর্ণ সূচক। তিনি বলেন, “মধ্যবয়সে যদি কারও ঘ্রাণশক্তি দুর্বল হয়ে যায়, সেটি শুধু নাকের সমস্যা নয়, বরং এটি ভবিষ্যতে আয়ুর দৈর্ঘ্য এবং স্নায়ুতন্ত্রের দুর্বলতার ইঙ্গিত দিতে পারে।”

আসলে ঘ্রাণ ও মস্তিষ্কের যোগসূত্র রয়েছে। ড. লিয়নের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, আমাদের ঘ্রাণ স্নায়ু সরাসরি হিপোক্যাম্পাস ও অ্যামিগডালা নামের মস্তিষ্কের অংশের সঙ্গে যুক্ত-এই দুটি অংশই স্মৃতি, আবেগ ও শেখার জন্য দায়ী। তাই ঘ্রাণের কোনও পরিবর্তন মানে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতায়ও কিছুটা পরিবর্তন ঘটছে।

তিনি আরও বলেন, “ঘ্রাণশক্তি হারানো বা কমে যাওয়া অনেক সময়ই আলঝাইমার, পারকিনসনস-এর মতো রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা যায়।” তাই এটি অবহেলা না করে চিকিৎসার পরামর্শ নেওয়া উচিত।

গবেষকরা দেখেছেন, সুগন্ধি বা মনোরম গন্ধ মস্তিষ্কের কার্যকলাপ বাড়ায়। ড. লিয়নের মতে, নিয়মিত সুগন্ধযুক্ত পরিবেশে থাকা বা অ্যারোমাথেরাপি মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হতে পারে। কারণ ভাল ঘ্রাণ মস্তিষ্কে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং মানসিক চাপ কমায়।

অন্যদিকে, দুর্গন্ধের ক্ষেত্রে শরীর স্বাভাবিকভাবেই প্রতিরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া দেখায়। শ্বাস আটকে যাওয়া বা মুখ ফিরিয়ে নেওয়া প্রমাণ করে যে ঘ্রাণশক্তি মস্তিষ্কের গভীর স্নায়ুব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত।