আজকাল ওয়েবডেস্ক: শনিবার দুপুরে দিল্লির ড. বিশম্ভর দাস মার্গে অবস্থিত বহুতল ব্রহ্মপুত্র অ্যাপার্টমেন্টে ভয়াবহ আগুন লাগে। এই বিল্ডিংটি ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হাত ধরে উদ্বোধন করা হয়েছিল এবং বর্তমানে এটি একাধিক লোকসভা ও রাজ্যসভা সাংসদের সরকারি আবাসন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ঘটনাস্থল সংসদ ভবন থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে, ফলে অগ্নিকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়তেই এলাকায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়।


প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, আগুনটি ভবনের একদম উপরের তলায় লাগে। মুহূর্তের মধ্যে ধোঁয়ায় ঢেকে যায় পুরো ভবন, এবং আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু হয় বাসিন্দাদের মধ্যে। আগুনের খবর পেয়ে দিল্লি ফায়ার সার্ভিসের একাধিক ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়, তবে প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে বেশ বেগ পেতে হয়। এখনও পর্যন্ত আগুন লাগার সঠিক কারণ জানা যায়নি, তবে শর্ট সার্কিটের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।


ঘটনাস্থলে উপস্থিত ফায়ার অফিসার ভূপেন্দ্র প্রকাশ জানান, “দুপুর ১টা ২২ মিনিটে আমরা ফোন পাই যে আগুন লেগেছে। সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার টেন্ডার রওনা হয়। আমাদের দল দ্রুত পৌঁছে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে।” তিনি আরও বলেন, আগুনের ভয়াবহতা বেশি থাকায় আশপাশের ভবনগুলিকেও সতর্ক করা হয়।

?ref_src=twsrc%5Etfw">October 18, 2025


অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভা সাংসদ সাকেত গোখলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্ট করে অভিযোগ তোলেন যে, আগুন লাগার আধ ঘণ্টা পরেও কোনও ফায়ার টেন্ডার ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি। তিনি লিখেছেন, “ব্রহ্মপুত্র অ্যাপার্টমেন্টে বিশাল আগুন! এখানে সব বাসিন্দাই রাজ্যসভা সাংসদ। সংসদ থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে এই ভবনে গত ৩০ মিনিট ধরে আগুন জ্বলছে, কিন্তু এখনও কোনও ফায়ার ব্রিগেড নেই! একের পর এক ফোন করেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দিল্লি সরকারের কিছুটা হলেও লজ্জা থাকা উচিত।”


বাসিন্দা বিনোদ নামের এক ব্যক্তি স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “আগুন লাগার সময় আমার মেয়ে বাইরে ছিল, কিন্তু আমাদের কুকুরটি ঘরের ভেতরেই আটকা পড়ে যায়। ধোঁয়া আর আগুনে সব কিছু ভস্মীভূত হয়ে যাচ্ছে—আমরা কিছুই করতে পারিনি।”


ব্রহ্মপুত্র অ্যাপার্টমেন্টটি মূলত রাজ্যসভার সাংসদদের জন্য নির্মিত সরকারি আবাসন প্রকল্পের একটি অংশ। দিল্লির কেন্দ্রে অবস্থিত এই বিলাসবহুল আবাসনে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ভূগর্ভস্থ পার্কিং এবং ব্যালকনি সহ প্রশস্ত অ্যাপার্টমেন্ট।

আরও পড়ুন: আকাশ যার-যুদ্ধ জয় তার, ভারতের অবস্থান কত


স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আগুন লাগার পর ভবনের একাধিক তলায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং কেউ গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন কি না, তা এখনো জানা যায়নি। পুলিশ ও দমকল বিভাগ যৌথভাবে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
বর্তমানে আগুন আংশিকভাবে নিয়ন্ত্রণে এলেও, ধোঁয়ার কারণে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে যে, আগুনের উৎস ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হবে।


সংসদ ভবনের এত কাছে এমন এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে রাজধানীর নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রশ্ন আবারও উঠে এসেছে। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, “যদি সাংসদদের সরকারি আবাসনেই এমন দেরিতে ফায়ার ব্রিগেড পৌঁছায়, তবে সাধারণ নাগরিকদের অবস্থা কী হবে তা সহজেই অনুমেয়।”
প্রাথমিক তদন্তের পরই জানা যাবে, ব্রহ্মপুত্র অ্যাপার্টমেন্টের এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মানবিক ও আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কতটা। আপাতত প্রশাসনের লক্ষ্য, আগুন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা এবং সব বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া।