আজকাল ওয়েবডেস্ক: কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত বলেছিলেন এই পাকিস্তান সপ্তম ডিভিশনের দল। তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন এই পাক দলে রক্তাল্পতা রয়েছে। তুলনায় ভারত অনেক শক্তিশালী। সূর্যর ভারতকে থামানোর ক্ষমতা নেই পাকিস্তানের। সেটাই দেখা গেল এশিয়া কাপের সুপার ফোরের লড়াইয়ে। ভারত জেতার পরে শোনা গেল 'চক দে'। ম্যাচ জেতায় সুপার ফোরের পয়েন্ট তালিকায় সবার উপরে ভারত।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে ১৭১ খুব একটা খারাপ স্কোর নয়। পাকিস্তান প্রথমে ব্যাট করে তুলেছিল ৫ উইকেটে ১৭১ রান। সেই রান তাড়া করতে নেমে ভারত দাদাগিরি দেখাল। অভিষেক শর্মা ও শুভমান গিলের ব্যাট শুরু থেকেই চলতে শুরু করল। শাহিন আফ্রিদিকে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকিয়ে অভিষেক রান তাড়া শুরু করেছিলেন। খেলা যত এগোল ভারতের দুই ওপেনার ততই মারমুখী ব্যাটিং শুরু করে দিলেন। অভিষেক শর্মা ও শুভমান গিলের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ধুয়ে গেল পাক বোলিং আক্রমণ। ৯.৫ ওভারেই ভারত ১০৫ করে ফেলে। শুভমান গিল ৪৭ রানে আশরাফের বলে বোল্ড হন। তার আগে অবশ্য চোট পান গিল।
আরও পড়ুন: ভারতকে হারানোর জন্য বাইরে থেকে আক্রমের চাল, আফ্রিদির জন্য কিংবদন্তির পরামর্শ ...
তাতে ছন্দ নষ্ট হয়। অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব খাতা না খুলেই ফেরেন। ভারত দ্রুত গিল ও সূর্যের উইকেট হারায়। ১০৫ রানে এক উইকেট থেকে ১০৬ রানে ২ উইকেট হয়ে যায়। তাতেও দমে যাননি অভিষেক। তিনি রুদ্রমূর্তি ধরেন। নাগাড়ে আক্রমণ করে যান পাক বোলারদের। পাক বোলাররা কোথায় বল ফেলবেন তাই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। শেষমেশ আবরারের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। যাওয়ার আগে ৩৯ বলে ৭৪ করে যান তিনি। ৬টি চার ও পাঁচটি ছক্কা মারেন তিনি। আউট হওয়ার আগের বলেই ছক্কা মেরেছিলেন অভিষেক। পরের বলেও মারতে গিয়ে ডাগ আউটে ফেরেন। বাকি কাজটা সারেন তিলক (১৯ বলে ৩০*) ও হার্দিক (৭*)। ৭ বল বাকি থাকতে ছয় উইকেটে ভারত ম্যাচ জেতে। একটা সময়ে মনে হচ্ছিল পাকিস্তান বোধহয় লড়াইয়ে ফিরে এসেছে। কিন্তু অভিষেক ও গিল যে মঞ্চে ভারতকে বসিয়ে দিয়ে যান, তাতে ম্যাচ জেতা ছিল কেবল সময়ের অপেক্ষা।
এদিন বোলিংয়ের সময়ে শিবম দুবেকে নিয়ে জুয়া খেলেছিলেন ভারত অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব। একসময়ে ১০ ওভারে ৯১ রান করে ফেলেছিল পাকিস্তান। মনে হচ্ছিল ১৮০-১৮২ রান কেবল সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু দুবে বল হাতে প্রথমে ফেরালেন সাইম আয়ুবকে (২১), পরে ফারহানকে (৫৮)। রানের গতিও কমিয়ে দিলেন। পাকিস্তান যে শেষপর্যন্ত ১৭১ রানে শেষ করল, তার পিছনে দুবের কৃতিত্ব রয়েছে। নইলে আরও বড় রান করতেই পারত পাকিস্তান। প্রথম সাক্ষাতে পাকিস্তান কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতাই তুলে ধরতে পারেনি। সুপার ফোরের দ্বৈরথে তাও কিছুটা লড়াই করলেন পাক ব্যাটাররা। কিন্তু এই রান ভারতের ব্যাটাররা তুড়ি মেরে তুলে নেয়।
এক সপ্তাহ ধরে তুমুল সমালোচনা হয়েছে। ব্যাপক জলঘোলা হয়েছে দুই দেশের প্রাক্তনীদের মধ্যেও। কিন্তু গত রবিবার ভারত পাক ম্যাচের পর এদিন এশিয়া কাপের সুপার ফোরের লড়াইয়েও দেখা গেল একই দৃশ্য।
গ্রুপ স্টেজে দুই দলের অধিনায়ক টসের সময় হাত মেলাননি। এদিনও টস করে হাত মেলালেন না সূর্যকুমার এবং সলমন। এদিন টস জিতে প্রথম বল করার সিদ্ধান্ত নেয় টিম ইন্ডিয়া। ভারতীয় দলে প্রথম একাদশে ফেরেন জশপ্রীত বুমরা এবং বরুণ চক্রবর্তী। পাকিস্তান দলেও দুটি পরিবর্তন হয়েছে। বাদ পড়েছেন খুশদিল শাহ এবং হাসান নওয়াজ। দলে এসেছেন পেসার হ্যারিস রউফ। এদিনের লড়াইকে আর পাঁচটা ম্যাচের মতো করে দেখার বার্তা দিয়েছেন স্কাই। মাত্র আট দিন আগেই দুই দলের লড়াই দেখা গিয়েছিল, আর এবার সুপার-ফোর পর্বে নামছে তারা।
সেই ম্যাচেই চারটি ক্যাচ ফেললেন ভারতের তারকা ক্রিকেটাররা। পাকিস্তানের ইনিংসের তৃতীয় বলেই ফারহানের ক্যাচ ফেললেন অভিষেক শর্মা। পরে বাউন্ডারি লাইনে ফারহানের ক্যাচ ধরতে গিয়েই ফস্কান। তা ছক্কা হয়ে যায়। সাইম আয়ুবের ক্যাচ ফেলেন কুলদীপ যাদব। জশপ্রীত বুমরাহ অন্যান্য দিনের মতো বিধ্বংসী হতে পারেননি। এই পিচে ফাস্ট বোলারদের মোকাবিলা করা, শট খেলা সুবিধাজনক হয়ে যায়। তার পরিবর্তে স্পিনার বা দুবের মতো বোলারকে সামলানো কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। দুবের বলের গতি কমিয়ে আনেন। সেটাই পাকিস্তানি ব্যাটারা বুঝতে পারলেন। পার্টনারশিপ ভাঙলেন শিবম দুবে, উইকেট দিলেন সূর্যকুমার যাদবকে। একসময়ে বেশ ভাল এগোচ্ছিল পাকিস্তান। কিন্তু উইকেট যাওয়ার পরে ৭ ওভারে ৩৮ রান করে পাকিস্তান। আরেক পাক ওপেনার ফকর জমানকে ফেরান হার্দিক পাণ্ডিয়া। তাঁর বলে শুরুতেই ফারহানের ক্যাচ ছাড়েন অভিষেক। সেই হার্দিকই ফেরান ফকরকে (১৫)। তিনি অবশ্য আউট হয়ে ফেরার সময়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। কুলদীপ যাদবের শিকার হুসেন তালাত (১০)। মহম্মদ নওয়াজ (২১) রান আউট হন। শেষের দিকে বাকিরা লড়ে যান। শেষমেশ পাকিস্তান করে ৫ উইকেটে ১৭১। তাতেও থামানো গেল না ভারতকে।
আরও পড়ুন: শুভমান গিল নাকি কেএল রাহুল, কে হবেন অধিনায়ক? ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের দল ঘোষণা হবে এই দিনে...
