আজকাল ওয়েবডেস্ক: যদি কেউ তাঁর স্বপ্নপূরণের জন্য দিন রাত এক করে কাজ করতে চান। তাহলে তিনি সাফল্য পাবেনই। সেই রকমই গল্প দিল্লির দুই বন্ধুর সাফল্যের গল্প। এক সঙ্গে ৫০টি গরু কিনে এখন তাঁরা কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করছেন। যখন তাঁরা ব্যবসা শুরু করছেন সেই সময়ে, দিল্লিতে দৈনিক ৭০ লক্ষ লিটার দুধের ব্যবহার হত। দুই বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করলেন যে দু’জনে মিলে প্রতিদিন ১,০০,০০০ লিটার দুধ বিক্রি করবেন। পথটা ছিল কঠিন। ব্যবসাও কঠিন। গরুর যত্ন নেওয়া থেকে শুরু করে তাজা দুধ সরবরাহ ব্যবস্থা পর্যন্ত, দুগ্ধ ব্যবসার জন্য নিষ্ঠা, সর্বোচ্চ মনোযোগ এবং কঠোর পরিশ্রম প্রয়োজন। তবুও, দুই বন্ধু অধ্যবসায়ী ছিলেন।

এই সাফল্যের গল্পের নেপথ্য দিল্লির দুই বন্ধু কারা?

চক্রধর গাদে এবং নিতিন কৌশল দ্বারা প্রতিষ্ঠিত কান্ট্রি ডিলাইট একটি স্টার্টআপ যা দুধ, ফল, শাকসবজি এবং দুগ্ধজাত পণ্য সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরাসরি গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। আইআইএম স্নাতকরা দুধের ব্যবসায় তাঁদের যাত্রা শুরু করেছিলেন। এখন সংস্থাটি প্রাকৃতিক এবং তাজা খাবার সরবরাহকারী একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।

আরও পড়ুন: ৭৫ বছরেও কীভাবে এত ফিট ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, দেখে নিন ডায়েট চার্ট

চক্রধর এবং নীতিন সফল উদ্যোক্তা হওয়ার আগে, দু’জনেই কর্পোরেট জগতে ছিলেন। কর্পোরেটের চাকরি থেকে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করার সিদ্ধান্ত তাঁদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ ছিল যা পরে মূল্যবান প্রমাণিত হয়েছে।

কীভাবে তাঁদের ছোট উদ্যোগটি ১,৩৮০ কোটি মূল্যের একটি সংস্থায় পরিণত হয়েছে?

চক্রধর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট (IIM), ইন্দোর থেকে তাঁর পড়াশোনা শেষ করে কর্পোরেট জগতে পেশাদার জীবন শুরু করেন। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, তিনি ইনফোসিসে একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং প্রায় এক বছর এই পদে কাটিয়েছিলেন। গাদে Indxx ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টে যোগদানের সুযোগ পান। সেখানে তিনি ফার্মের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। অবশেষে, ২০১৩ সালে, চক্রধর তাঁর উচ্চবেতনের কর্পোরেট পেশা ছেড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য আরও একটি সাহসী পদক্ষেপ নেন।

আইআইএম ইন্দোরের প্রাক্তন ছাত্র নীতিন কৌশল এইচএসবিসিতে কর্পোরেট ব্যাঙ্কিংয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। দুই বছর পর, নীতিন উদ্যোক্তা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং তাঁর সহপাঠী চক্রধরের সঙ্গে কান্ট্রি ডিলাইট শুরু করেন। দুজনেই তাঁদের ব্যবসায়িক পটভূমি এবং তাদের অভিজ্ঞতাকে কে কাজে লাগান। যা তাদের পরবর্তী সাফল্যের ভিত্তি তৈরিতে সাহায্য করে।

প্রথমদিকে, তাঁরা ৫০টি গরু দিয়ে শুরু করেছিলেন। তাঁদের ধারণায় ছিল যে দু’বছরের মধ্যে সংখ্যাটি ৫০০-য় নিয়ে যাওয়া যাবে। তাঁরা অনুমান করেছিলেন যে তাঁদের দৈনিক দুধ সরবরাহ ২০০ লিটার থেকে ৫,০০০ লিটারে উন্নীত হবে। তবে বাস্তবে, লক্ষ্য অর্জনে তিনগুণ সময় লেগেছিল। গরুর জন্য জমি খুঁজে বার করা, গরুর যত্ন নেওয়া এবং দুধের মান বজায় রাখা সহজ ছিল না। 

বর্তমানে সংস্থাটি কেবল দুধই বিক্রি করে না বরং ঘি, পনির, দই, ফল, শাকসবজি, ডিম এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্যও বিক্রি করে। এই সমস্ত কিছু একটি মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেখানে গ্রাহকরা সাবস্ক্রিপশনের ভিত্তিতে অর্ডার দেন এবং ডেলিভারি নেন। এখন ১১টি ভিন্ন রাজ্যের ১৮টি শহরে তাঁরা পরিষেবা দিয়ে থাকেন।

কান্ট্রি ডিলাইট সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে। যা দুধে ভেজালের সম্ভাবনা কমায় এবং কৃষকরা ভাল অর্থ লাভ করছেন। তারা গ্রাহকদের তাদের দুধের গুণমান পরীক্ষা করার জন্য একটি বিশেষ কিট দেয়।